আপনি নিজের গাড়িটি নিয়ে প্রয়োজনীয় কাজে বের হলেন। নির্ধারিত জায়গায় গাড়ি পার্ক করে কাজ সারতে গেলেন। কাজ শেষ করে এসে দেখলেন গাড়িটি সেখানে নেই। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও গাড়িটির সন্ধান পেলেন না। ততক্ষণে বোঝা হয়ে গেছে, আপনার শখের মূল্যবান গাড়িটি চুরি হয়েছে। আপনি কিছুতেই ভেবে উঠতে পারছেন না দিনেদুপুরে গাড়িটি কীভাবে চুরি হলো। আপনার এখন করণীয় কী, তা-ও বুঝতে পারছেন না। কিন্তু জেনে রাখুন, একেবারে হতাশ না হয়ে গাড়ি চুরি কিংবা গাড়ির বিভিন্ন অংশ চুরি হলে আপনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।প্রথমে যা করবেনগাড়ি চুরি হয়ে গেলে চুরির ঘটনার স্থান যে থানার আওতাধীন, সে থানায় গিয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করতে হবে। থানার ডিউটি অফিসার কিংবা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে চুরির ঘটনাটি কীভাবে ঘটল, তা আলোচনা করে এ অবস্থায় কীভাবে আবেদন করবেন, তা জেনে নিতে পারেন। অনেক সময় চুরির ঘটনায় আপনাকে এজাহার দায়েরের মাধ্যমে সরাসরি মামলা করতে হতে পারে। অথবা গাড়ি চুরির বিষয়টি নিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করে রাখতে পারেন। এজাহারে এবং জিডিতে গাড়ির নম্বর, ঘটনার স্থান, ঘটনার সময় উল্লেখ করতে হবে। এজাহারে যদি সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তি থাকে, তাহলে তার নাম-ঠিকানাও উল্লেখ করতে পারেন। যদি এমন হয় যে গাড়িটি আপনার নিয়োগ করা চালকসহ উধাও হয়ে গেছে এবং চালককে যদি সন্দেহ করেন, তাহলে চালকের নাম-ঠিকানাসহ বিস্তারিত উল্লেখ করতে হবে। এজাহার করা হলে একজন তদন্ত কর্মকর্তা আপনার মামলাটির দায়িত্বে থাকবেন। প্রয়োজনে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে তদন্তের স্বার্থে আপনি বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতে পারেন। অনেক সময় দেখা যায়, গাড়ি চুরির ঘটনায় সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত থাকে। পুলিশ আন্তরিক হলে এই চক্রকে খুঁজে বের করে আদালতে সোপর্দ করতে পারে। চুরির ঘটনাটি যদি মহানগর এলাকায় হয়, আপনি মহানগর ট্রাফিক পুলিশের কাছেও লিখিত আবেদন করতে পারেন। ইচ্ছা করলে পুলিশ আপনার অভিযোগটি পুলিশের গোয়েন্দা শাখাতেও প্রেরণ করতে পারে। বর্তমানে গাড়িতে ডিজিটাল নামফলক ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে গাড়ির সব তথ্য হালনাগাদ করা থাকে। এ নামফলকের সঙ্গে মুঠোফোনের সিমের মতো ছোট একটি ডিভাইস ব্যবহারের কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এই ডিভাইস ব্যবহারের ফলে গাড়িটির অবস্থান কোথায় আছে, তা সহজেই বের করা যাবে। মামলা যদি আদালতে গড়ায়পুলিশ যদি গাড়ি চুরির ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করে, তাহলে আদালতে প্রেরণ করবে। আদালত আসামির জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠাতে পারেন অথবা আসামিকে রিমান্ডে পাঠাতে পারেন। আসামির কাছ থেকে গাড়ি চুরির কোনো তথ্য পেলে এর ওপর ভিত্তি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবে। পরে মামলার বিচার শুরু হবে। গাড়ির মালিককে তখন আদালতে সাক্ষ্য দিতে হবে। সাক্ষ্যপর্ব শেষ হলে আদালত আসামিকে দোষী প্রমাণিত করলে শাস্তির আদেশ দেবেন। যদি পুলিশের প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট না হন, তাহলে আদালতে নারাজি দরখাস্ত দিয়ে মামলাটির পুনঃ তদন্ত চাইতে পারেন। প্রয়োজনে মামলার তদন্ত গোয়েন্দা শাখায় পাঠানোর জন্য আদালতে প্রার্থনা করতে পারেন।সাবধানতাআপনার ব্যবহূত গাড়ি যত্রতত্র পার্ক করবেন না। পার্কিংয়ের যথাযথ তদারক করার জন্য গার্ড নিযুক্ত আছে, এমন জায়গায় গাড়ি পার্ক করুন। কোনো পার্কের ধারে, শপিং মলের সামনে অথবা কোনো নির্জন জায়গায় গাড়ি রেখে না যাওয়াই ভালো। মনে রাখতে হবে, ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহূত গাড়ির চালক নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁর পরিবার সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া ও তাঁর অতীত অপরাধের ইতিহাস আছে কি না, তা জেনে নেওয়া উচিত। নিয়োগের পর চালকের চালচলন নিবিড়ভাবে লক্ষ করাও গাড়ির মালিকের জন্য আবশ্যক। লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট