ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.

সমস্যা
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে পড়ি। বয়স ২০ বছর। আমি যাকে ভালোবাসি তার বয়স ৩২। সম্পর্কে আমার দুলাভাইয়ের বন্ধু। তাদের পারিবারিক অবস্থা অনেক ভালো। তার বাবা বলে দিয়েছেন, আমার বাবা বিয়ের প্রস্তাব পাঠালে তাঁরা বিবেচনা করবেন। আমাদের বাসার সবাই তাকে ভালো জানে, কিন্তু বাবা চান আরও দেরিতে বিয়ে দিতে। আমাদের বাসায় এখনো বড় এক বোন অবিবাহিত আছেন। কিন্তু তার বাসা থেকে তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। তার বাবা অসুস্থ, তাই সে নিজেও অপেক্ষা করতে চায় না।
সে আশ্বাস দিয়েছে, আমাদের বিয়ের পর কোনোভাবেই আমার পড়ালেখা বন্ধ হবে না। তবে এও বলেছে এক বছর পর সন্তান নিতে হবে। যে প্রস্তাবে আবার আমি রাজি নই। এসব বিষয়ের জন্য আমরা এখন দুজনই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছি। আমাদের কি আলাদা হয়ে যাওয়া উচিত? কিন্তু আমরা তো দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসি। এখন আমরা কী করব?
নাম ও ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ
তুমি যাকে ভালোবেসেছ, সে তোমার চেয়ে বয়সে বেশ বড়। মনে হচ্ছে, তার পরিবার তোমাদের ওপরে সিদ্ধান্তগুলো চাপিয়ে দিচ্ছে। আমাদের সমাজে সাধারণত ছেলের বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়িতে প্রস্তাব পাঠানো হয়। এতে মেয়েটিকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া ছেলের বাড়ি থেকে বয়োজ্যেষ্ঠরা বিয়ের প্রস্তাব আনার মাধ্যমে মেয়েটির প্রতি শ্রদ্ধাও দেখানো হয়ে থাকে। অথচ ছেলেটির বাবা বলছেন তোমার বাবা প্রস্তাব নিয়ে গেলে তাঁরা বিবেচনা করবেন। এখানে কিছুটা অনাগ্রহ প্রকাশ হচ্ছে কি? তাদের অবস্থা খুব ভালো বলেই কি আচরণে কিছুটা অহংকারের ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছে?
এদিকে তোমার একটি বড় বোন রয়েছে এবং তোমার বয়স কম, পড়ালেখাও আরও বেশ কয়েক বছর পরে শেষ হবে। বাবাও চাইছেন না এত তাড়াতাড়ি তোমার বিয়েটা হোক। তাদের দিক থেকে এই বিষয়গুলোর প্রতি কোনো গুরুত্ব কি দেওয়া হচ্ছে না? এতে কি তোমার পরিবারের প্রতি সামগ্রিকভাবে তাদের শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হচ্ছে? আর একটি বিষয় হলো, তোমাকে আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে বিয়ের পর পড়ালেখা বন্ধ হবে না। আবার একই সঙ্গে এটাও বলা হচ্ছে, বিয়ের এক বছর পর সন্তান নিতে হবে। এই দুটি কথা কি পরস্পরবিরোধী হয়ে যাচ্ছে না? এত অল্প বয়সে মা হয়ে তুমি কি একই সঙ্গে পড়ালেখা করতে পারবে? সন্তানটির যত্নের দায়িত্ব তখন কে নেবে, সেই বিষয়টিও আলোচনায় আসা প্রয়োজন।
তোমাকে যেহেতু সন্তান ধারণ করতে হবে এবং এর কারণে সব ধরনের কষ্টও তোমার মন ও শরীরের ওপর দিয়েই যাবে। যেহেতু সন্তান তুমি ধারণ করবে, সেই সিদ্ধান্তটি কিন্তু তোমার দিক থেকেই এলে সবচেয়ে ভালো হয়। সন্তানের যত্ন নিতে গিয়ে তুমি যদি পড়ালেখা করতে না পারো তাহলে তো হতাশায় ভুগতে থাকবে, তাই না? আর তুমি হতাশাগ্রস্ত হলে সন্তানকে ঠিকমতো লালনপালন করা বেশ কঠিন হবে।
অল্প বয়সে সংসারের দায়িত্ব নেওয়া অনেক মেয়েই আমাকে বলেছে, তারা প্রায়ই হতাশা ও বিষাদগ্রস্ত হয়ে সন্তানকে অনেক মারধর করে, পরে প্রচণ্ড অপরাধবোধে ভুগতে থাকে এবং প্রচুর কান্নাকাটি করে। আমার উত্তর পড়ে তুমি হয়তো ভাবতে পারো যে আমি এই সম্পর্ককে নিরুৎসাহিত করছি। আমার বক্তব্য হচ্ছে, তুমি ছেলেটির সঙ্গে এমনভাবে আলোচনা করো, যাতে তোমার ও তোমাদের পরিবারের প্রতি অসম্মান হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত যেন এখনই চাপিয়ে দেওয়া না হয়। তুমিও ভালো করে ভেবে দেখো, বড় বোনটির বিয়ে হওয়া পর্যন্ত বা তোমার পড়ালেখা আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত ওদের অপেক্ষা করতে বলবে কি না। যদি নিজের পরিচয়ে জীবন চলতে চাও, তাহলে অবশ্যই স্নাতক পরীক্ষায় তোমাকে ভালো করতে হবে। তোমার সন্তানের জন্যও তুমি তখন ‘রোলমডেল’ হতে পারবে।