>

শিল্পী আতিক হাসানের গানের হাতেখড়ি সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়। একসময় গানের প্রয়োজনে চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় বসতি গড়েন। প্রথম অ্যালবাম বের হয় ২০০২ সালে। এরপর একে একে বেরিয়েছে ১৪টি অ্যালবাম। আলাপচারিতায় উঠে আসে তাঁর সংগীতজীবনের আদ্যোপান্ত ছোটবেলা থেকে কিশোর কুমারের পাঁড় ভক্ত। রেডিওতে কিশোর কুমারের গান চললে সঙ্গে সঙ্গেই ক্যাসেট প্লেয়ারে রেকর্ডিং করে নিতেন। এর বাইরে কোনো অডিও ক্যাসেট বের হলে তো কথাই নেই। আশির দশকে এক কিশোরের মনে এভাবেই ছায়া ফেলে কিশোর কুমারের সুর। অবশ্য এই শ্রোতা অন্যদের চেয়ে আলাদা। শুধু শোনার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না তাঁর কাজ। গানগুলো হুবহু তুলে নিজে নিজে গাইতেন। একসময় মঞ্চে এলেন। বাজিমাত করলেন কিশোর কুমারের গানে। তিনি শিল্পী আতিক হাসান।
নিজের মৌলিক গান আছে অনেক, তারপরও কিশোর কুমার কিংবা হারানো দিনের গানের জন্য ডাক পড়ে তাঁর। ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করেন তিনি। শ্রোতাদের চাহিদা মেটাতে সজাগ থাকেন। গানে শ্রোতাদের বাহবা পোক্ত করে তাঁর আত্মবিশ্বাস, ‘আরে চোখ বন্ধ করে শুনলে বোঝার উপায় নেই যে কিশোর কুমার নাকি অন্য কেউ গাইছে।’
৫ জানুয়ারি প্রথম আলো চট্টগ্রাম কার্যালয়ে কথা হয় আতিক হাসানের সঙ্গে। কয়েক দিনের জন্য রাজধানীর কাজের জগৎ ছেড়ে নিজের শহর চট্টগ্রামে এসেছেন। মুঠোফোনে কথা বলার পর ঠিক হলো দুপুর ১২টায় হবে আলাপচারিতা। ঠিক ঠিক ১২টায় হাজির। সময় মেনে চলেন বেশ? প্রশ্ন করতেই এক গাল হেসে বললেন, ‘এই অভ্যাস ছোটবেলা থেকেই। আমার দিন শুরু হয় খুব সকালে। প্রথমে রেওয়াজ। তারপর বাকি কাজ।’
আতিকের গানে হাতেখড়ি ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়। গানের প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখে মামা সৈয়দ তৌফিকুল ইসলাম হারমোনিয়ামে ধরিয়ে দেন সা-রে-গা-মা–পা। তিনি ছিলেন ঢাকার বুলবুল ললিতকলা একাডেমির শিক্ষক। এরপর চলতে থাকে তালিম। দিনে দিনে একেবারেই মজে যান সংগীতে। এর মধ্যে কিশোর কুমারের গান তোলা চলে সমানে।
কিশোর কুমারের প্রথম তোলা গান কোনটি? ঝটপট উত্তর, ‘এক টানেতে যেমন তেমন/দু টানে তে রোগী’। আতিক এখনো মঞ্চে এই গানটি করেন। তবে কিশোর কুমারের বেশি বার গাওয়া গানটি হলো ‘আশা ছিল ভালোবাসা ছিল’।
এ তো গেল কিশোর কুমার পর্ব। মৌলিক গানেও তাঁর সদর্প বিচরণ। ২০০২ সালে সাউন্ডটেক থেকে বের হয় প্রথম অডিও অ্যালবাম মাধবী কি ছিল গো ভুল। প্রথম অ্যালবামেই সাড়া জাগায় আতিকের গান। বিরহ ধাঁচের করা ১২টি গানের এই অ্যালবাম রাতারাতি জনপ্রিয় করে তোলে আতিককে। ছয় মাসের মাথায় আবার বের হয় চন্দনা ফিরে আসবে না। সেটাতেও বাজিমাত। এরপর ২০১২ সাল পর্যন্ত তাঁর একক অ্যালবাম বের হয় ১৪টি। শুধু তা–ই নয়, ২০০৪ সালে ভারতের বিখ্যাত গায়ক কুমার সানু ও ২০০৫ সালে সোনু নিগামের সঙ্গে দ্বৈত বাংলা গানের অ্যালবাম বের হয় আতিকের। এ ছাড়া এন্ড্রু কিশোর, মনির খান, এসডি রুবেল ও আসিফ আকবরের সঙ্গে দ্বৈত অ্যালবাম বের হয় তাঁর। সিনেমায়ও প্লেব্যাক করেছেন অসংখ্য। এর মধ্যে প্রেমিক ডাকাত, ময়না পাখির সংসার, তাক ও ফুল অ্যান্ড ফাইনাল ছবির গানগুলো শ্রোতারা পছন্দ করেন।
এত কিছুর গল্প হলো। একটু ফ্লাশ ব্যাকে তো যেতেই হয়। গানের শুরুর কথা বলুন। আতিকের মুখে হাসি। বললেন, ‘ঘরে গান করতাম। কখনো মঞ্চে গাওয়া হয়নি। তবে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় বসলে আমাকে কিশোর কুমারের গান করতেই হতো। এই বন্ধুরাই একদিন একটি গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে জোর করে মঞ্চে তুলে দিল। কিশোর কুমারের গান করে বেশ প্রশংসা পেয়েছিলাম। এটা খুব সম্ভবত ১৯৮৮ সাল।’
আতিকেরা বাবার চাকরি সূত্রে ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশের নানা স্থানে। তবে স্কুল ও কলেজজীবন চট্টগ্রামেই কেটেছে। আন্দরকিল্লা থেকে রাজাপুকুর লেন। এরপর স্থায়ী হয়েছেন বাদুরতলায়। আতিক মুসলিম হাইস্কুল থেকে পাস করে পড়েছেন হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজে। তাই বন্ধুবান্ধবের বেশির ভাগ চট্টগ্রামের। সুযোগ পেলেই ঢাকা থেকে ছুটে আসেন চট্টগ্রাম।
আতিকের ভাষায়, ‘দম নিতে আসি। পুরোনো বন্ধুদের কাছে পাই। আড্ডা দিই। বেশ ভালো লাগে। এখনো আড্ডায় বসলে তাদের গান শোনাই। সবাই বেশ উপভোগ করে।’
এবার জানতে চাই হাঁড়ির খবর। গানের মানুষটি ঘরে কেমন? বললেন, ‘ঘরে গানের প্রধান সমালোচক আমার স্ত্রী আফরোজা নাজনীন। প্রতিদিন সকালে উঠে রেওয়াজ করার জন্য সে-ই আমাকে তাড়া দেয়। অনুষ্ঠান না থাকলে সময় কাটে ছেলে আরাফ ও মেয়ে সুহানাকে নিয়ে।’
২০০২ সাল থেকে সুরের মধ্যে শিল্পী আতিক হাসানকে শ্রোতারা পেলেও মাঝখানে খানিকটা ভাটা পড়ে, কেন? আতিকের উত্তর, ‘হয়তো অন্যদের মতো স্রোতে গা ভাসাতে পারিনি। তবে আমি ছিলাম, থাকব।’