আমে লাভ বেশি, বাড়ছে চাষ

ফটিকছড়ির লালমাই এলাকায় নিজ বাগানে আমের পরিচর্যা করছেন চাষি মো. ইউসুফ
ফটিকছড়ির লালমাই এলাকায় নিজ বাগানে আমের পরিচর্যা করছেন চাষি মো. ইউসুফ

ধান-সবজি বাদ দিয়ে আম চাষ? লোকসানের আশঙ্কায় অনেকেই প্রথমে পা বাড়াতে চাননি। ফলে উপজেলায় শুরুটা করেন মাত্র পাঁচ-ছয়জন বাগানমালিক। তাঁরা সাহস দেখালেও চাষ করেন সামান্য জমিতে। কয়েক বছর পর দেখা গেল ফলন-দাম দুটোই ভালো। এবার আর বসে থাকা নয়, এগিয়ে এলেন অন্য চাষিরাও। এখন বাগানমালিকের সংখ্যা ২৪ জন। ফটিকছড়িতে বাণিজ্যিকভাবে আম চাষ বাড়ার গল্পটা এ রকম।
সম্প্রতি উপজেলার বাগান বাজারের লালমাই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, একটি বাগানে সারি সারি আম গাছ। আকারে ছোট। বড়জোর ছয় থেকে সাত ফুট লম্বা। আমের ভারে নুয়ে পড়েছে গাছগুলো। বাগানের একেকটি গাছে ঝুলছে ৫০ থেকে ৬০টি আম। কিছু গাছে বাঁশ দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা হয়েছে। বাগান থেকে আম তুলছিলেন চাষি মো. ইউসুফ। তাঁর সঙ্গে কাজ করছিলেন আরও দুজন শ্রমিক। সবাই ব্যস্ত। ৫২ বছরের এই চাষি আম চাষ করে অভাব ঘুচিয়েছেন।
ইউসুফ জানান, চলতি মৌসুমে পাঁচ একর জমিতে উন্নতজাতের ফজলি, বারি ও আম্রপালি আমের চাষ করেছেন। সব আমে তিনি একরপ্রতি ২০০ থেকে ২২০ মণ হারে ফল পাবেন বলে আশা করছেন। এ আম বাগান রোপণ ও পরিচর্যায় প্রতি একরে তাঁর গত এক বছরে খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। ফলন ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যে একরপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা করে আম বিক্রি করা হয়েছে। গত বছর তাঁর লাভ হয় দেড় লাখ টাকার বেশি। এবার লাভ দুই লাখ টাকা পেরিয়ে যাওয়ার আশা করছেন তিনি।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ফটিকছড়িতে ৩৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ফটিকছড়ির উত্তরাঞ্চলের বাগান বাজার, দাঁতমারা, নারায়ণহাট ও ভূজপুর ইউনিয়নে আমবাগানের সংখ্যা বেশি।
বাগান বাজারের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. তসলিম বাহার বলেন, এ অঞ্চলের মাটি আম চাষের জন্য উপযোগী। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ফটিকছড়ি আম চাষে আরও অনেকে এগিয়ে যেতে পারবে। বর্তমানে এ উপজেলায় একরপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ মণ আম উৎপাদন হয়।
কাঞ্চননগর ইউনিয়নের বাগানমালিক নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমার তিন একরের আমবাগান রয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে। তবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা, প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ ও আধুনিক চাষাবাদ সম্পর্কে ধারণা পেলে আম চাষ আরও বাড়বে।’
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা লিটন দেবনাথ জানান, প্রতিবছর আমবাগানের চাষি বাড়ছে। আম চাষে সবজির চেয়ে বেশি লাভ হয়। তা ছাড়া আমবাগানের চাষ পতিত জমিতেও হয়। এ জন্য কৃষকেরা বাণিজ্যিকভাবে আম চাষে ঝুঁকছেন।