আইন অধিকার

ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট

কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে কারণ জানাতে হবে৷ ছবি: অধুনা
কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে কারণ জানাতে হবে৷ ছবি: অধুনা

রাতের বেলায় ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। আপনি দরজা খুলতেই কয়েকজন সাদাপোশাকধারী লোক। আপনি তাঁদের কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই তাঁরা জানালেন তাঁরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোক। আপনার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আছে। আপনাকে তাঁদের সঙ্গে যেতে হবে থানায়। আপনি তাঁদের কথায় ঘাবড়ে গেলেন। কী করবেন বুঝতে পারছেন না। পরিবারের সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল। আপনি জানেন যে আপনি কোনো অপরাধে জড়িত নন। এ অবস্থায় মাথা ঠান্ডা রেখে সতর্কতার সঙ্গে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এমন পরিস্থিতির শিকার হলে একা একা কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে পরিবার-পরিজনদের সঙ্গে সঙ্গে খবর দিন। প্রয়োজনে আশপাশের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীদের খবর দিন এবং যত পারা যায় লোকজন জড়ো করার চেষ্টা করুন। প্রথমেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তাদের পরিচয় জানতে চাইবেন এবং তাদের পরিচয়পত্র দেখতে চাইবেন। আপনার বিরুদ্ধে কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে কি না, তা দেখতে চাইবেন। যদি তারা আপনাকে গ্রেপ্তার করার জন্য উদ্গ্রীব হয়, আপনি একা তাদের সঙ্গে যাবেন না বলে তাদের জানিয়ে দেন এবং সঙ্গে পরিবারের দু-একজনকে সঙ্গে নেবেন বলে তাদের জানান। প্রয়োজনে নিকটস্থ থানায় ফোন করে আপনার গ্রেপ্তারের বিষয়টি অবগত করুন এবং থানা এ সম্পর্কে অবগত অছে কি না, তা জানার চেষ্টা করুন। আপনার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ দেখাতে না পারলে আপনাকে হয়তো ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তারের কথা বলতে পারে।
ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা অনুয়ায়ী, যেকোনো যুক্তিসংগত কারণে পুলিশকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া বা সহ আটক করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যদিও এই ধারার অপপ্রয়োগের ঘটনাই বেশি ঘটতে দেখা যায়। ২০০৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগ ৫৪ ধারার অপপ্রয়োগ বন্ধে কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ গ্রেপ্তারের কারণ জানাতে বাধ্য থাকবে এবং পুলিশের পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে।

গ্রেপ্তার হলে প্রথমে যা করবেন
প্রথমেই আপনার করণীয় হচ্ছে, কী কারণে গ্রেপ্তার হয়েছেন, সে ব্যাপারে জানতে চাইবেন। আপনার বিরুদ্ধে যদি কোনো পরোয়ানা জারি করা হয়, তবে পুলিশ সে বিষয়ে আপনাকে অবহিত করবে। মনে রাখতে হবে, পুলিশ আপনাকে গ্রেপ্তারের কারণ জানাতে বাধ্য। এটি আপনার সাংবিধানিক অধিকার। আপনার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত আইনজীবী নিয়োগের ব্যবস্থা নিন।

জামিনের জন্য চেষ্টা করুন
গ্রেপ্তারের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চালান দেবেন। ২৪ ঘণ্টা সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর কোনো অবস্থাতেই (ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশ ছাড়া) পুলিশ আপনাকে আটক রাখতে পারবে না। এ সময় পুলিশ আপনাকে গুরুতর কোনো অভিযোগে রিমান্ডের আবেদন করতে পারে। ম্যাজিস্ট্রেট আপনাকে জামিনে ছেড়ে দেবেন অথবা রিমান্ড মঞ্জুর করবেন কিংবা রিমান্ড মঞ্জুর না করেই জেলখানায় পাঠিয়ে দিতে পারেন। আপনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ যদি জামিনযোগ্য হয়, তাহলে জামিনপ্রাপ্তি আপনার অধিকার। তাই আপনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো জামিনযোগ্য কি না, আইনজীবীর মাধ্যমে জেনে নিতে পারেন। অভিযোগের কারণ গুরুতর অথবা জামিনযোগ্য না হলে আপনি জামিন না-ও পেতে পারেন। তবে জামিন পাওয়ার জন্য আইনজীবীর মাধ্যমে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। আপনাকে জামিন নিতে হলে জিম্মাদার লাগবে।

আইনজীবী ও পরিবার-পরিজনের করণীয়
গ্রেপ্তারের পর অবশ্যই আইনজীবীকে অভিযুক্তের পক্ষে মুচলেকার বিনিময়ে বা আইনসংগত উপায়ে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে থানা থেকে মুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি থানা থেকে গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে মুক্ত করা সম্ভব না হয়, তবে এখতিয়ারসম্পন্ন ম্যাজিস্ট্রেট বা সংশ্লিষ্ট আদালতে অভিযুক্তকে হাজিরার সময় গিয়ে জামিনের জন্য আবেদন করতে হবে। জামিনের শুনানির আগে কী কারণে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হলো, তা সংশ্লি­ষ্ট শাখা থেকে জেনে নিতে হবে। সাধারণত ৫৪ ধারায় কেউ গ্রেপ্তার হলে তা ননজিআর মামলা হিসেবেই গণ্য করা হয়। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো এজাহার রুজু হয়েছে কি না কিংবা কোনো সিআর (নালিশি মামলা) হয়েছে কি না, তা জেনে নিতে হবে। বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট বা সংশ্লি­­ষ্ট আদালত থেকেও যদি জামিন না দেওয়া হয়, তবে পর্যায়ক্রমে জেলা দায়রা আদালত এবং পরবর্তী সময়ে হাইকোর্ট বিভাগে জামিনের আবেদন করতে হয়।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট