আজকের পুষ্টি কথা

ইফতারে চাই পুষ্টিকর খাবার

.

পবিত্র রমজান মাসে পরিবারের ছোট-বড় সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য পুষ্টিকর ইফতার আয়োজনের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। ইফতারের মেন্যু নির্বাচনের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে খাবার যাতে সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং ভিটামিন ও মিনারেল–সমৃদ্ধ হয়। সর্বোপরি খাবারটা যেন ভেজালমুক্ত হয়।
সারা দিন না খেয়ে থাকার দরুন শরীরে পানিশূন্যতা এবং গ্লুকোজের অভাবও দেখা দেয়। এ অভাব পূরণের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন স্বাস্থ্যসম্মত পানীয়। ইফতারে ডাবের পানি, লেবু, বেল কিংবা ইসবগুলের শরবত হতে পারে আদর্শ । পাশাপাশি লাচ্ছি, মিল্ক শেক কিংবা ফলের রসও তৃষ্ণা মেটানোর জন্য উপযোগী হতে পারে।
এসব শরবত বা ফলের রসে রয়েছে খাদ্যশক্তি, ভিটামিন, খনিজ এবং গ্লুকোজ। যা তাৎক্ষণিকভাবে শরীরে প্রবেশ করে এবং সারা দিনের ক্লান্তি উপশম করে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর পানীয় পেট ঠান্ডা রাখে এবং খাবার হজম, পরিপাক ও বিপাকে সহায়তা করে।
এরপর মূল ইফতারের মূল মেন্যুর দিকে নজর দেওয়া যাক। ইফতারে যেকোনো মিষ্টি জাতীয় একটি খাবার যেমন জিলাপি, পায়েস, ফিরনি, পুডিং, সুজি, সেমাই, দই, সন্দেশ, পিঠা ইত্যাদি রাখা চাই। এগুলোর বেশির ভাগই দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি। এসব খাবার পুষ্টিকর এবং ক্যালরিযুক্ত বলে শরীরে শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে। ইফতারে কাঁচা সবজি বিশেষ করে শসা, টমেটো, গাজর, ক্ষীরা, কাঁচা ছোলাও খেয়ে থাকেন অনেকেই। এসব তাজা সবজি শরীরের পানির ঘাটতি দূর করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে ভিটামিন ও খনিজ লবণ থাকে প্রচুর পরিমাণে।
প্রচলিত ইফতারের মধ্যে বুট, ছোলা, পেঁয়াজো, বেগুনি, চপ থাকে। তবে যাদের ওজন বাড়ার সমস্যা আছে, তাঁরা এই খাবারগুলো অতিরিক্ত না খেলেই পারেন। ভাজাপোড়া খাবার গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া দোকানের ভাজাপোড়া খাবার পুরোনো তেলে তৈরি হয়। এসব খেলে বদহজম ও পেটের অসুখ হতে পারে।
ইফতারে মুড়ি না হলে জমে না। তবে যেহেতু এটি শর্করা জাতীয় খাবার, এ কারণে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মুড়ি পরিমাণমতো খাবেন। এ ছাড়া ক্ষতিকর ইউরিয়া সার মিশ্রিত সাদা ধবধবে মুড়ি দেহের জন্য ক্ষতিকর। ইউরিয়ামুক্ত মুড়ি একটু লালচে ধরনের ও আকারে ছোট হয়। মুড়ি কেনার সময় এসব দেখে কিনতে হবে।
হালিম অথবা চটপটি প্রোটিন জাতীয় মজাদার খাবার। তবে এই খাবার শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে খেতে হবে। যাঁদের জন্য প্রোটিন জাতীয় খাবার কম খাওয়ার নির্দেশ আছে তাঁরা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে খাবেন। তা ছাড়া হৃদ্রোগীদের খাসির মাংসের হালিম মোটেই খাওয়া উচিত নয়। চর্বি জাতীয় খাবার বাদ দেওয়া উচিত। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের চিনি ও গুড় দিয়ে তৈরি খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। তবে বিকল্প চিনি (এসপারটেম জাতীয়) দিয়ে শরবত এবং সেমাই, পায়েস, ফিরনি, পুডিং রান্না করে খাওয়া যাবে। রোজায় খেজুর বা খোরমা খাওয়ার প্রচলন আছে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রতিদিন চার থেকে ছয়টি খেজুর বা খোরমা খেতে পারবেন। তবে এর সঙ্গে বাড়তি কোনো মিষ্টি ফল না খাওয়াই শ্রেয়।
পরিবারে যদি গর্ভবতী মহিলা কেউ থাকেন, তাঁর জন্য বিশেষ যত্ন নিতে হবে। যেমন সারা দিন না খেয়ে থাকার দরুন খাবার সময়টা খুব সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তাই ওই সময় তাঁকে উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার দিতে হবে। যেমন প্রতিদিন একটা ডিম এবং আধা লিটার দুধ খেতে দিতে হবে। অথবা এসব দিয়ে তৈরি খাবার খেতে দিতে হবে। প্রচুর পানি পান করাতে হবে। সেই সঙ্গে তাজা ফল
যেমন পেয়ারা, জাম্বুরা, আমলকী, ডাবের পানি, শসা, টমেটো, গাজর এবং কিছু শাকসবজি খেতে হবে।
সঠিক নিয়ম মানলে যেকোনো রোগীও রোজায় সুস্থ থাকতে পারেন। আর নিয়ম না মানলে সুস্থ ব্যক্তিও অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। তাই নিয়ম মেনে ইফতার করে রোজায় নিরাপদ ও সুস্থ থাকুন। তার আগে আপনি আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন রোজায় ওষুধের পরিমাণটা কেমন হবে। কোন বেলায় কতটুকু খাবেন?
লেখক: প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা
চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল