খাদ্যগুণ

এক চায়ের কত কাজ

দিনে অনেক কাপ চা না খেয়ে দুই থেকে তিন কাপ চা খাওয়া ভালো। ছবি: নকশা
দিনে অনেক কাপ চা না খেয়ে দুই থেকে তিন কাপ চা খাওয়া ভালো। ছবি: নকশা

একটি কুঁড়ি দুটি পাতার কী যে মজা, তা জানে আজ সারা দুনিয়ার মানুষ। যেদিন থেকে চা-পাতার খোঁজ মিলেছে, সেদিন থেকেই চায়ের অনন্য স্বাদ-গন্ধ একটু একটু করে আজ পর্যন্ত সারা পৃথিবীর প্রায় সব মানুষকেই মাতিয়ে রেখেছে। বশ করে নিয়েছে তার গুণাগুণ দিয়ে। শত ব্যস্ততার মাঝে, ক্লান্তিতে, গল্প-আড্ডায়, বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নে সবার চা চাই-ই চাই। অনেকের আবার সময়মতো চা না পেলে দিনটাই হয়ে যায় বৃথা। এমন চা-পাগল মানুষ চায়ের কাপ হাতে নিয়েই ঘুরে বেড়াচ্ছেন আমাদের চারপাশে।
একই ধরনের চা-পাতা থেকে তৈরি হয় বিভিন্ন রকম চা। যেমন—গ্রিন টি, ব্ল্যাক টি, পুউয়ের টি, উলং টি, হোয়াইট টি। আলাদা প্রক্রিয়াজাতকরণই এসব চায়ের ভিন্নতার কারণ। কেয়ার বাংলাদেশের সামাজিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লিভিং গ্রুপে কর্মরত মিশাইয়েল আজিজ আহ্মেদ শখের চা সংগ্রহ করেন। সেই ছোট্টবেলা থেকেই তিনি চায়ের জাদুতে মগ্ন। তাই যখন যেখানেই গিয়েছেন, সবার আগে সেখানকার চায়ের খোঁজ নিতে ভুল করেননি। যখনই কোথাও গিয়েছেন, সেখানকার চা সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছেন। এভাবেই তিনি সংগ্রহ করেছেন নানান দেশের নানা রকম চা। তাঁর সংগ্রহে আছে ১৫-২০ ধরনের চা। দার্জিলিং, আসামের চা, জাপানের চা, শ্রীলঙ্কান চা, সাউথ আফ্রিকান চা, চীনের চা, ইথিওপিয়া, কেনিয়া, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের নানা স্বাদ-গন্ধের অনেক ধরনের চা। তাঁর কাছেই জানা গেল তুলসী চা, গ্রিন মিন্ট চা, জেসমিন চা, জাফরান চা, দারুচিনি চা, জিরা চা, এলাচ চা, ক্যামোমিল চা হলো ভেষজ। এগুলোতে মূলত ক্যাফেইন থাকে না।
চায়ের গুণাগুণ নিয়ে জানালেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ আখতারুননাহার আলো। তিনি মনে করেন, চা কখনো খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়। এতে করে খিদে নষ্ট হয়ে যায় এবং দিনে অনেক কাপ চা না খেয়ে দুই থেকে তিন কাপ চা খাওয়া ভালো। অনেকেই সকালের নাশতা বা যেকোনো খাবারের পরেই চা খেয়ে নেন। ওই সব খাবারে যে পরিমাণ লৌহ বা আয়রন-জাতীয় উপাদান ছিল, চা সেই উপাদানগুলো নষ্ট করে দেয়। এ কারণেই খাবার খাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা পরে চা খাওয়া উচিত।
চায়ের রয়েছে নানা উপকারী উপাদান। যেমন, চায়ের ভেতরে থাকা পটাশিয়াম রক্তের কোলেস্টেরল কমায়, রক্তচাপও কমায়। পটাশিয়াম থাকার কারণে ত্বকও ভালো থাকে। যাঁদের শরীরে পটাশিয়ামের স্বল্পতা আছে, তাঁরা লেবু চা খেলে ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে। চা হৃদ্যন্ত্র ভালো রাখে এবং হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়। শাকসবজি, ফলমূলে যে পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আমরা পেয়ে থাকি, চা থেকে পাই তার থেকে অনেকগুলো বেশি। চায়ের ভেতর স্বল্প পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। চায়ের মধ্যে গ্রিন টির কার্যকারিতা অনেক বেশি। এটি ক্যানসার রোধেও সহায়ক। গ্রিন টিতে থাকা ট্যানিক অ্যাসিড দাঁতের ক্ষয়রোধ করে এবং মাড়ি মজবুত করে। গ্রিন টি বাড়তি ওজন কমাতেও সহায়ক। শরীরের কোনো অংশ কেটে রক্তপাত হলে গ্রিন টি ভিজিয়ে সেই স্থানে লাগালে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। গ্রিন টি নিয়মিত দিনে দু-তিন কাপ খেলে ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়। খুব বেশি চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পর উলং চা খেলে কোলেস্টেরল বাড়তে পারে না। চায়ের দুধ-চিনি ক্যালরি বাড়াতে সহায়ক। আবার যাঁদের দুধ চা খেলে পেটে গ্যাস হয়, তাদের জন্য লাল চা ভালো।
যাঁরা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা বা শরীরে যাঁদের পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি, তাঁরা চা বেশি না খেলেই ভালো করবেন। যাঁরা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন, তাঁরাও চা কম খেলে ভালো আর যদি খেতেই হয়, তবে খাবার খাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা পর খেলে ভালো হবে। ঘন ঘন চা খাওয়া থ্যালাসেমিয়া রোগীর জন্য খুব ভালো এবং থ্যালাসেমিয়ার কারণে শরীরে বেড়ে যাওয়া হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমিয়ে আনে।
রূপচর্চায়ও চায়ের রয়েছে নানা রকম উপকারিতা। রূপচর্চায় বিশেষত গ্রিন টি বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। রূপচর্চায় চায়ের নানাবিধ ব্যবহার নিয়ে জানালেন রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা রিতা।
চোখের যত্নে: ব্যবহার করা টি ব্যাগ ফেলে না দিয়ে কিছুক্ষণ ঠান্ডা করে চোখের ওপর রেখে দিলে চোখের ক্লান্তি দূর হবে এবং এক সপ্তাহ নিয়মিত ব্যবহারে চোখের চারপাশের কালো দাগ কমে যাবে।
বডি স্ক্রাব: গ্রিন টি ত্বকের যত্নে অনেক ভালো স্ক্রাব হিসেবে কাজ করে। বিশেষ করে ব্যবহার করা গ্রিন টি। চা খাওয়ার পর টি ব্যাগের ভেতর থেকে পাতাগুলো বের করে নিয়ে সামান্য চিনি ও পানি মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে পাঁচ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে ত্বক উজ্জ্বল দেখাবে।
চুলের যত্নে: তিন-চারটি গ্রিন টি ব্যাগ এক লিটার পানিতে এক ঘণ্টা ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিয়ে চুল শ্যাম্পু এবং কন্ডিশন করার পর সেই পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে চুল ঝলমলে হবে। এ ছাড়া চুল শক্ত ও মজবুত হবে এবং চুল পড়া কমবে, এমনকি নতুন চুল গজাতেও সহায়ক হবে।