মনের জানালা

এভাবে আমাদের প্রেম হয়...

অধ্যাপক মেহতাব খানম
অধ্যাপক মেহতাব খানম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.

সমস্যা

আমি শুনেছিলাম মেয়েটির সঙ্গে এলাকার এক ছেলের পাঁচ বছর সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এখন নেই। চার বছর আগে ব্রেকআপ হয়ে গেছে। তাই মেয়েটি মানসিকভাবে খুব অসুস্থ। মেয়েটির সঙ্গে কথা বলার সময় সে তার সমস্যাগুলো বলত। আমি তাকে সেভাবেই ভালো কিছু করার পরামর্শ দিতাম। ফলে সে একটু বাঁচার আশা পায়। এভাবে আমাদের প্রেম হয়। কিছুদিন পর দুর্ঘটনায় আমি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ি। সে আমার সুস্থতার জন্য অনেক প্রার্থনা করত। সব সময় খোঁজখবর নিত। সুস্থ হওয়ার পর সে আমাকে খুব বিনয়ের সঙ্গে জানায়, ওই ছেলেটির সঙ্গে বিয়ের মৌখিক কথা হয়েছিল। তাদের শারীরিক সম্পর্ক ছিল। আমাকে ঠকাতে চায় না বলে সে সত্য লুকোচ্ছে না, এটিও বলে।
সে মনে করেছিল আমি এটা জানার পর তাকে ত্যাগ করব। কিন্তু আমি তার তার সততার পুরস্কার হিসেবে এবং আমার অসুস্থতার সময় সে যেভাবে পাশে ছিল সে কথা বিবেচনা করে তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিই।জানানোর পর তার পরিবার রাজি হয়। কিন্তু আমার বাবা-মা রাজি হননি। কারণ গোত্র ভিন্ন। আমার মাইগ্রেনের সমস্যা আছে এবং উচ্চ রক্তচাপ। আমি যখন রাস্তাঘাটে চলাফেরা করি, তখন তার আগের দৈহিক সম্পর্কের কথা মনে হলে খুব খারাপ লাগে। অসুস্থ হয়ে পড়ি। তাকে বিয়ে করে কি স্বাভাবিক থাকতে পারব?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

পরামর্শ
মেয়েটি তার বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকার জন্য তোমাকে আগের প্রেমের বিষয়টি সবিস্তারে জানিয়েছে। মেয়েটি যখন মানসিকভাবে খুব বিপর্যস্ত অবস্থায় ছিল তখন তুমি তার প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলে। এরপর তুমি যখন অসুস্থ হয়েছ, তখনো মেয়েটি তোমার দুঃখের সঙ্গী হয়েছিল। এভাবে তোমরা কিন্তু দুজনেই দুজনের ঋণ শোধ করেছ। তোমার অসুস্থতার সময়ের সহমর্মিতার জন্য তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্তটি কতটা যুক্তিসংগত হয়েছে তা নিয়ে ভাববে, কেমন? অবশ্য ওকে একজন সৎ মানুষ হিসেবে তুমি শ্রদ্ধা করতেই পারো। মেয়েটিকে তুমি সত্যি মন থেকে ভালোবােসা কি? ওকে নিঃশর্তভাবে সারা জীবন বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা করতে পারবে কি না।
যদি তা না হয়, তাহলে ওর অতীতকে পুরোপুরি মেনে নিতে গিয়ে আর পরিবারের সঙ্গে মানসিকভাবে যুদ্ধ করে তুমি ভালো থাকতে পারবে না। এই সিদ্ধান্ত যে খুবই কঠিন তাতে সন্দেহ নেই। তুমি খুব ভালোভাবে ভেবে দেখবে, ওকে বিয়ে করলে তুমি বেশি কষ্টে থাকবে নাকি বাবা-মায়ের পছন্দমতো বিয়ে করলে বেশি কষ্টে থাকবে। তোমার উচ্চ রক্তচাপ ও মাইগ্রেনের সমস্যার পেছনে মানসিক চাপ একটি ভূমিকা রাখছে। আশা করি, তুমি কোথাও গিয়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করবে।