এলোমেলো হয়ে যায়

.

সারা দিনের ব্যস্ততায় পত্রিকা পড়তে পারিনি। রাতে বিছানায় আধশোয়া হয়ে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোর নববর্ষ সংখ্যাগুলোতে চোখ বুলাচ্ছি। প্রথম আলোতে প্রকাশিত সৈয়দ শামসুল হকের ‘পুষ্প বিহনে পয়লা বৈশাখ’ গল্পটি পড়ছি আর লিলিয়া বিহনে এবাবের আমার পয়লা বৈশাখের কাটানো কষ্টের দিনটি নিয়ে ভাবছি। লিলিয়াও কি আমার মতো ভাবছে? কদিন আগে অবশ্য সে একটু বেশি আবেগী হয়েই বলেছিল,È‘আমার কেউ নেই। প্লিজ, তুমি চলে আসো, পয়লা বৈশাখে তোমার সঙ্গে বেড়াব’। আমি যেতে পারিনি বলে ওর কি খুব খারাপ লাগছে?
লিলিয়ার কথা ভাবতে ভাবতে আমি তন্দ্রাগ্রস্ত হয়ে পড়ি।
ঠিক এমন সময় লিলিয়া আমার সামনে এসে হাজির হয়। পয়লা বৈশাখে আমরা দুজনে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ি। তাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। সে পরেছে লাল-সাদা সুতির শাড়ি। হাতে রকমারি চুড়ি। মাথায় ফুল জড়ানো। চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি। সকালে আমরা যাই রমনার বটমূলে। দুপুরে ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে। তারপর বিকেলে চললাম টিএসসির দিকে। আহা! কী আনন্দ! ফুটপাতে হাঁটতে।
তখন শেষ বিকেল। সকাল থেকে ঢাকার পথে উত্সবমুখর মানুষের ঢল নেমেছিল। বিকেল হতে হতে তার সব মুখ যেন মিশে গিয়েছে টিএসসির মোহনায়। চারদিকে লোকে লোকারণ্য। চারুকলা থেকে উঠে এসেছে বাংলার হাজার লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যের উপাদান। সড়কজুড়ে কারুপণ্যের হাজার পসরা। বাজছে অমর গান, এসো হে বৈশাখ...এসো এসো। তার সঙ্গে আমরাও কণ্ঠ মেলাই।
তারপর? সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে লজ্জা হয়। পড়ে গেলাম ভিড়ের মধ্যে, পরিকল্পিত ভিড়ে। যেখানে ওরা লিলিয়াদের অপমানিত ক্ষতবিক্ষত করে মেতে উঠছিল পাশবিক আনন্দে! আর কিছু মনে নেই। শুধু মনে হতে লাগল, কিশোর কবি তানভীর মোহাম্মদ ত্বকীর কবিতার পঙ্ক্তি-
এক ঝাঁক কুকুর/ একটা কুকুর গর্জন করে ওঠে/
এক ঝাঁক কুকুর/ দৌড়ে এল কাছে/ দেখল একটা শিকার.. ।