মনের জানালা

ওকে ভুলতে পারছি না

মেহতাব খানম।
মেহতাব খানম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.

সমস্যা
আমি উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় চতুর্থ বর্ষের এক ছেলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ি। একদিন সে হঠাৎ করেই অজানা কোনো কারণে আমাকে ছেড়ে চলে যায়। এর কারণ জানার অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু ছেলেটি কোনো কারণ দেখাতে পারেনি। একসময় দুজনের মধ্যে যোগাযোগ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যায়। তার সঙ্গে ব্রেক-আপের পর আমার পৃথিবীটাই ওলট-পালট হয়ে গেছে। আমি কিছুতেই তাকে ভুলতে পারছি না। বুঝতে পারছি—আমাকে পড়াশোনা করতে হবে, ভালো করতে হবে। তাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা বইয়ের সামনে বসে থাকি, পড়ার চেষ্টা করি। কিন্তু কিছুই পড়তে পারি না। শুধু তার কথা মনে পড়ে। জেঁকে বসেছে একাকিত্ব, বিষণ্নতা আর হতাশা।
এ থেকে মুক্তির কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছি না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। চারপাশ অন্ধকার মনে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
পরামর্শ
বয়ঃসন্ধিতে তুমি সম্পর্কটিতে জড়িয়েছ বলেই এত বেশি মনোবেদনার সৃষ্টি হয়েছে। তা ছাড়া ছেলেটি কোনো রকম সদুত্তর না দিয়েই তোমাকে ছেড়ে গেছে। তোমার অবশ্যই অধিকার আছে তার কাছ থেকে এই আচরণের ব্যাখ্যা পাওয়ার। দুটি মানুষের সম্পর্ক থেকে কোনো একটি পক্ষ সরে যেতেই পারে, তবে সে ক্ষেত্রে তার দায়িত্ব হচ্ছে—খুব সুস্পষ্টভাবে এর কারণ তুলে ধরা। এতে প্রাথমিকভাবে অন্য পক্ষ ভীষণ দুঃখ পেতে পারে। অনেক সময় সেসব কারণ সে মেনেও নিতে পারে না। তবে সেই কষ্ট স্বল্প সময়ে কাটিয়ে উঠতে পারে সে। কিন্তু যখন তার কাছে কোনো ব্যাখ্যাই থাকে না, তখন সে অন্ধকারে হাতড়াতে থাকে, নিজের মতো করে অনেক রকম ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করে। অনেক সময় নিজেকে দোষারোপ করতে থাকে।
সম্পর্ক চলাকালীন সে কী কী ভুল করেছে সেগুলো খুঁজতে থাকে। কখনো সে নিজের ওপরই রাগ করে, কখনো যে তাকে ছেড়ে চলে গেছে তাকে দোষারোপ করে। চিন্তার এই স্তরগুলো পার হওয়ার সময় তার মধ্যে প্রবল হতাশা ও বিষণ্নতা তৈরি হয়। এতে করে ইতিবাচক প্রাণশক্তি ক্রমশ ক্ষয় হতে থাকে বলে মন ও শরীর খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে। নিজেকে এই অবস্থা থেকে মুক্ত করার জন্য এবার ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা কর—এই ঘটনা তোমাকে নিজের কোন ধরনের প্রতিচ্ছবির মুখোমুখি করেছে।
অন্য একটি মানুষের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের জন্য তুমি কি নিজেকে তুচ্ছ বা ছোট ভাবতে শুরু করেছ? তা-ই যদি হয়, তবে নিজেকে এর জন্য একেবারেই ছোট কোরো না। হয়তো-বা দুজনের ব্যক্তিত্বের মধ্যে এমন কিছু পার্থক্য রয়েছে, যা পরিষ্কারভাবে বোঝা সম্ভব হয়নি। তুমি তখনকার স্মৃতিগুলো মন থেকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা কোরো না। যত বেশি এই ভাবনাকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করবে, ততই আরও বেশি করে মনে পড়বে।
স্মৃতিগুলো লালন করেই তুমি ভবিষ্যতের চলার পথ খুঁজে নাও। তোমার মধ্যে যেসব ভালো দিক ও গুণ রয়েছে, সেসব খুঁজে দেখার চেষ্টা কর। অতীতেও তুমি যখন বিভিন্ন কারণে কষ্ট পেয়েছ, তখন কীভাবে নিজেকে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে এসেছিলে—সেগুলোও খুঁজে নিয়ে নিজের শক্তির জায়গাগুলোতে একবার তাকিয়ে দেখ।