
ফ্লার্ট শব্দটা বড্ড ঝামেলার জিনিস। একে তো শব্দটা নিয়ে সবার ধারণা পরিষ্কার নয়, তার ওপর এ শব্দের ঠিক বাংলা হয় না। কাছাকাছি যা-ও একটা শব্দ পাওয়া যায়, সেই অভিধানের শব্দটা লিখতেও কেমন অস্বস্তি। এমনিতেই ফ্লার্টিং নিয়ে বিভ্রান্তিতে ভোগে অনেকেই, তার ওপর অমন এক বাংলা অনুবাদে পুরো ব্যাপারটাই সর্বনাশা দিকে ছোটে। অথচ ফ্লার্ট করতে পারাও যে শিল্প, এটা কিন্তু জানা নেই অনেকেরই।
আজ একটু জ্ঞান দেওয়া যাক ফ্লার্টিং নিয়ে। প্রথমে জেনে নেওয়া যাক জিনিসটা কী! ফ্লার্টিং হলো অন্য ব্যক্তির সঙ্গে এমনভাবে কথা বলা, যাতে তাঁর প্রতি আপনি যে পিসার হেলানো টাওয়ারের মতো ঝুঁকে আছেন। পুরো পতিত হতে পারেন, আবার সোজা হয়েও যেতে পারেন। এই অবস্থাকেই বলে ফ্লার্ট। মানে প্রেমের প্রথম ধাপ। একটু ইটিশ-পিটিশ করে বুঝে নেওয়া, সম্পর্কটা এগোবে, নাকি অন্য পথে হাঁটতে হবে।
এই সোজা কাজটি করতে গিয়েই অনেকের কান-গাল হয়ে যায়। কেউ নার্ভাস ব্রেকডাউনে ভোগেন। আর যারা ‘ফ্রেন্ডস’ টিভি সিরিজের চ্যান্ডলারের মতো, তাঁদের কথা তো বাদই দেওয়া যাক! চ্যান্ডলারের কপালে তবু মনিকা জুটেছিল, কিন্তু সবার তো ভাগ্য এত ভালো নয়। তাই ফ্লার্ট শিল্পটা একটু ঝালিয়ে নেওয়া উচিত সবার। ধাপে ধাপে দেখে নেওয়া যাক, কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন ফ্লার্ট করার জন্য:
পরিবেশ বুঝতে পারা
সবার আগে বুঝতে হবে, কোন পরিস্থিতিতে ফ্লার্ট করা উচিত। বিয়ে কিংবা জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গেলে অবশ্যই নিজের ভাগ্য বাজিয়ে দেখুন। কিন্তু অফিসে সহকর্মীর সঙ্গে ফ্লার্টিং করতে যাওয়া মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কিংবা দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যস্ত একজনকে বিরক্ত করেও তো আদতে কোনো লাভ নেই!
নিজের শক্তিকে কাজে লাগান
আমাদের অনেকেই ‘ফ্রেন্ডস’-এর জোয়ি কিংবা ‘হাও আই মেট ইউর মাদার’-এর বার্নি হতে চাইবেন। কিংবা আরেকটু ভারিক্কি ডন ড্রেপার (ম্যাড ম্যান)। কিন্তু সবাই তো আর জন্মগতভাবে এমন আকর্ষণীয় হতে পারেন না। আর এটা দরকারও নয়। অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী পুরুষই যে সবার পছন্দের, এমন নয়। অনেক নারীই চান, স্বাভাবিক, লাজুক কিন্তু মজার মানুষের সঙ্গী হতে। নিজের শক্তিটাই প্রকাশ করুন, কেউ না কেউ আপনার সে গুণ দেখেই এগিয়ে আসবে।
শরীরী ভাষা বুঝুন
কথাতেই ফ্লার্ট সীমাবদ্ধ নয়। মুখে যা বলা যায়, শরীরী ভাষায় এর চেয়েও বেশি কিছু প্রকাশ করা সম্ভব। হাসি কিংবা একটু খানি ছোঁয়া অথবা চুল এলিয়ে দেওয়া অথবা কাছে এগিয়ে আসা-সবকিছুই বলে দিচ্ছে আপনার প্রতি তাঁর আগ্রহ। এসব ঠিকভাবে ধরতে পারলেই কেল্লা ফতে!
ব্যর্থতা মেনে নিন
পছন্দের কথা বলতে গিয়ে হতাশা নিয়ে ফিরতে হতেই পারে। এটা মেনেই এগোতে হবে। যদি ব্যর্থতা ভয় থাকে, সেটা নেতিবাচক মানসিকতা হয়ে মনে গেঁথে থাকে। ফলে আপনার আচরণেও এর প্রভাব পড়ে। সব সময় মাথায় রাখতে হবে, এবার ব্যর্থ হলেও সমস্যা নেই। আরও সুযোগ আসবে।
যৌনতা সামলে রাখুন
রোমান্টিক হন কিংবা প্লে বয়, সম্পর্কে যৌনতা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। তার মানে আবার শুরুতেই আলোচনায় যৌনতাকে টেনে আনা যাবে না। অতিরিক্ত যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তা অন্য প্রান্তে ব্যক্তিকে অস্বস্তিতে ফেলে দিতে পারে। বরং অন্য প্রান্তের কাছে ছেড়ে দিন বিষয়টি, তাহলেই তো হয়ে যাচ্ছেন ধোয়া তুলসীপাতা।
কী নিয়ে কথা বলবেন
ধর্ম কিংবা রাজনীতির মতো বিষয়গুলো এড়িয়ে যাবেন। বরং তাঁর প্রতি আগ্রহ দেখিয়ে প্রশ্ন করুন, তাঁর উত্তর শুনে পাল্টা প্রশ্ন করে নিজের যোগ্যতা বোঝান। খুব বেশি ভারিক্কি কথাবার্তার দরকার নেই। শুধু শুধু বিতর্কিত বিষয় নিয়ে কথা বলে নিজেদের সম্পর্কে ঝামেলা বাধিয়ে লাভ নেই। তাই বলে আবহাওয়া নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নিজেকে বিরক্তিকর বানানোও ঠিক হবে না!
বিষয়টিকে দ্বিপক্ষীয় রাখুন
অন্যের দৃষ্টি কাড়তে নিজেকে আবার ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখাতে যাবেন না। শুধু নিজেকে বড় করে দেখাতে গেলে অন্যজন বিরক্ত হবে। এমন ভাব দেখাবেন না যে আপনার মতো অতি যোগ্য মানুষ তাঁর প্রতিও আগ্রহ দেখাচ্ছে, এটাই ভাগ্য! তাকেও নিজেকে প্রকাশ করার সুযোগ দিন।
সবার শেষে মনে রাখুন, যার সঙ্গে ফ্লার্টিং করছেন, তিনিও মানুষ, অন্য গ্রহের প্রাণী নন। নিজেকে স্বাভাবিক রাখুন, মজা খুঁজে নিন ব্যাপারটিতে। প্রশংসা করুণ, ভাগ্য ভালো হলে প্রশংসা পেলে মেনে নিন সেটা। আর এত ভয়ের কী আছে? সর্বোচ্চ ‘না’-ই তো শুনতে হবে। জীবনে ‘না’ শোনেনি কে? সূত্র: আস্ক মেন।