পাঠকের মতামত

কে দেবে ভালোবাসার প্রস্তাব? ছেলে, নাকি মেয়ে

ভাগ্যিস আমিই আগে বলেছিলাম

২০০৪ সালের কথা। কলেজের প্রথম বর্ষে আমার ক্লাসের এক ছেলেকে আমার ভালো লেগে যায়। আমার বন্ধুরা সেই ছেলেকে জানায় আমার ভালোলাগার কথা। কিন্তু সে কোনো উত্তর দেয় না।এভাবে কিছুদিন চলার পর আমার আর কিছু ভালো লাগছিল না। মনের ভেতর এক তীব্র ব্যথা নিয়ে আমি ঘুরতে লাগলাম। তারপর একদিন সাহস করে তাঁর মুখোমুখি হলাম। বলেই ফেললাম, আমি তাকে ভালোবাসি। শুনে সে বলে, ‘ভালোবাসা কী, তা আমি জানি না। তবে তুমি যদি আমার সাথে থাকতে পারো, আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাব না।’ ব্যস, শুরু হয়ে গেল আমাদের একসাথে চলা। আমি তাকে আগে ভালোবেসেছি, তাই আগে জানিয়েছি। কী এসে-যায় কে আগে বলল তাতে। এত বছর পরও আমরা একসাথে আছি। বলে রাখা ভালো, কলেজে সে সময় আমাকে অনেকে বলেছে—আমি ওকে আগে পছন্দের কথা জানিয়ে ওর দাম বাড়িয়ে দিয়েছি, ভবিষ্যতে সেধে সেধে প্রেম করতে যাওয়াতে আমাকে অনেক খোঁটা শুনতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। যদি তখন আমি আমার আশপাশের মানুষের কথায়, লজ্জায় বা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয়ে নিজের মনের অনুভূতি মনেই লুকিয়ে রাখতাম, তবে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মনের এই মানুষটিকে কি পেতাম?

নিশি

সরাসরি বলাই ভালো

বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থা অন্যান্য দেশ বা রাষ্ট্রের চেয়ে ভিন্ন। এখানে একটি মেয়ে যদি প্রেম বা বিয়ের প্রস্তাব দেন, তাহলে তাঁকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি পরিবার অনেক সময় মেয়েটির সঙ্গে তিরস্কার করেন। আর ছেলেটি কিছু বললে তা তো স্বাভাবিক নিয়মের মধ্যেই পড়ে। পরিবার ও সমাজ এটিকে ভালোভাবে মেনে নেয়। ছেলেমেয়ে যদি পরস্পর পরস্পরকে পছন্দ করেন, তাহলে ভালোবাসার কথা বলতে সমস্যা কোথায়। মেয়েরাও অনেক সময় ভালোবাসার কথা বলতে কুণ্ঠা বোধ করেন। এসব না করে আমার মনে হয়, সরাসরি ভালোবাসার কথা বলা ভালো। তবে পরস্পরের মতামতকে সম্মান দেখাতে হবে।

স্নিগ্ধা সরকার, সাভার, ঢাকা।

সমাজের কারণে মেয়েরা বলতে পারে না

কাছের মানুষের কাছ থেকে ‘ভালোবাসি’ কথাটি শোনার অভিপ্রায় কার না থাকে! দুটি মানুষের ভালোলাগা আর আবেগ উভয়ের মিশ্রণ এই ভালোবাসার অনুভূতির সৃষ্টি করে। আমাদের সমাজের কলুষতা একটি মেয়েকে এই অনুভূতি লুকাতে বা অপ্রকাশিত রাখতে বাধ্য করে। এক ধরনের ভয়, লজ্জা ও অপরাধবোধের কারণে একটি মেয়ে তাঁর কাছের মানুষটিকে মুখ ফুটে বলতে পারেন না, ‘আমি তোমায় ভালোবাসি।’ আর প্রতিটি মানুষের ভালোবাসার অধিকার আছে, তেমনি তা প্রকাশেরও অধিকার আছে। মেয়েরাই বা কেন পিছিয়ে থাকবেন! সময় এখন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে চলার। বলে ফেলুন ভালোবাসি।

তাহমিনা জিনিয়া, দেওয়ানহাট, চট্টগ্রাম।

যেকোনো একজন বললেই হলো

দুজন দুজনকে ভালোবাসলে কে আগে প্রেমের প্রস্তাব দেবে, সেটা বিষয় না। আমাদের সমাজে প্রেমের প্রস্তাব পুরুষদের আগে দিতে হবে, সেটা বলাটাই হলো বোকামি। ভালোবাসা প্রকাশ করতে দেরি হলে অনেক সময় ভালোবাসার মানুষকে হারাতে হয়। আমার মতে, ভালোবাসার কথা যেকোনো একজন বললেই হলো। তাতে নারী ও পুরুষের পার্থক্য না থাকাই ভালো।

ওয়াহেদুল তাহের

মেয়েরা বিয়ের প্রস্তাব পাঠালে ছেলেরা খুঁত ধরে

ভালোবাসা ছাড়া জীবন খুব অর্থহীন। দুটি ছেলেমেয়ের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া থেকে যখন ভালোবাসার জন্ম হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই মনে হয় কে আগে বলবে। আমাদের সমাজের দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করলে ছেলেদের আগে বলাটাই ভালো। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ভয়ও থাকে। কারণ, একটা মেয়ে যখন একটা ছেলেকে বন্ধু হিসেবে কাছে টেনে নেয়, তখন ছেলেটা এটাকে ভালোবাসা ভেবে ভুল করে বসে। এ সময় ভালোবাসার কথা বললে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের ঘটনা আমাদের সমাজে অহরহই ঘটে চলেছে। তাই মেয়েদের এগিয়ে আসা উচিত বলে আমি মনে করি। কারণ, বন্ধুত্ব আর ভালোবাসার পার্থক্যটা সহজেই মেয়েরা অনুধাবন করতে পারে।

আর বিয়ের প্রস্তাব ছেলে বা মেয়ে যেকোনো দিক থেকেই আসতে পারে। যদিও ছেলেদের দিক থেকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোটা সচরাচর হয়ে আসছে। কিন্তু সমাজ এখন অনেক বদলে গেছে। আগে মেয়েদের পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানোকে হেয় চোখে দেখা হতো। মেয়ের পক্ষ থেকে যদি বিয়ের প্রস্তাব যায় তখন ছেলের পক্ষ ধরে নেয় যে নিশ্চয়ই ওই মেয়ের কোনো না কোনো খুঁত আছে। এখনো কিছু কিছু গ্রামে এমন মনোভাব বিরাজমান। তাই সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, পারিপার্শ্বিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে নির্দিষ্ট একপক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো যেতে পারে।

রাশেদ খান, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ভালোবাসার কথা বলার জন্য অপেক্ষা করা ঠিক নয়

প্রস্তাব কে দিচ্ছেন বা কে নিচ্ছেন তা মুখ্য বিষয় নয়, এখানে মুখ্য হলো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। একজনকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিতে গিয়ে যদি দিন, মাস, বছর পেরিয়ে যায়, তাহলে কী লাভ এই অপেক্ষার। তাই ভালোবাসার প্রস্তাব কে দিল, সেটি বিবেচ্য হওয়া সমীচীন নয়। ছেলে বা মেয়ে যে কেউ ভালোবাসার প্রস্তাব দিতে পারেন। পুরোনো মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিয়ের প্রস্তাব ছেলের নাকি মেয়ের বাড়ি থেকে আসবে তা বিবেচ্য নয়, বিবেচ্য হলো সঠিক সময়ে, সঠিক জায়গায় প্রস্তাবের উপস্থাপন। তাই অবস্থা বুঝে ঠিক করতে হবে, কে আগে (বিয়ের) প্রস্তাব পাঠাবে।

মিঠুন চন্দ্র দাস, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সরকারি কলেজ।

ভালো লাগলে মেয়েরাও নির্দ্বিধায় বলে ফেলুন

ভালোবাসার মানুষটিকে আপন করে পেতে দুজনকেই এগিয়ে আসতে হবে। ছেলে ভাববে মেয়েটি প্রস্তাব দিক, আর মেয়ে ভেবে নেবে ছেলেটি বলুক। এভাবে চললে হয়তো মনের কথা অব্যক্ত থেকে যাবে। ছেলেটি যদি বলতে দ্বিধাবোধ করে তো মেয়েকেই এগিয়ে আসা উচিত। বিয়ের ক্ষেত্রে শুধু ছেলের পক্ষ থেকে প্রস্তাব আসে—এটা আমাদের সমাজে বহুলপ্রচলিত ব্যাপার, কিন্তু মেয়ের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দিলে সেটাকে ইতিবাচকভাবে দেখা উচিত। আমার মতে, জীবনসঙ্গী বাছাই করার ক্ষেত্রে ছেলেমেয়ে উভয়ের সমান অধিকার আছে। মেয়ের যদি কোনো ছেলেকে ভালো লাগে নির্দ্বিধায় বলা উচিত। সত্যি ভালোবাসাকে সামনে রেখে কে প্রস্তাব দিল, এটা বড় কথা নয়। মেয়ের প্রস্তাব সমাজ কীভাবে নেবে, সেটা ভাবলে হবে না।

মিজানুর রহমান

mijanurams@yahoo.com