Thank you for trying Sticky AMP!!

খাবার থেকে অ্যালার্জি

নানা কারণে অ্যালার্জি হয়। কারও একটা খাবার থেকে অ্যালার্জি হতে পারে, আবার বিভিন্ন খাবার থেকেও হতে পারে।

কেন এমন হয়?

শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) যখন খাবারে থাকা কিছু প্রোটিনকে ভুলবশত ক্ষতিকারক হিসেবে চিহ্নিত করে, তখন অ্যালার্জি দেখা দেয়। কিছু কিছু প্রোটিন বা প্রোটিনের অংশ সহজে হজম হয় না। সেসব প্রোটিনকে ইমিউনোগ্লোবিন বাহ্যিক আক্রমণকারী উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করে। এ জন্যই শরীরে অ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই প্রতিক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার হতে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাসুদা খাতুন বলেন, খাবার পর থেকে ২ ঘণ্টার মধ্যে অ্যালার্জি শুরু হতে পারে। খাবারে অ্যালার্জি হলে তা কখনো সামান্য, কখনো আবার গুরুতর আকার ধারণ করে। ত্বকে প্রথমে লাল লাল দানা বের হয়, সঙ্গে থাকে চুলকানি। চুলকানির কারণে হাত-পা ফুলেও যেতে পারে। কখনো ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা, বমিও হতে পারে। গুরুতর আকার ধারণ করলে হতে পারে শ্বাসকষ্টের সমস্যা। বিভিন্ন খাবারে যদি অ্যালার্জি থাকে, সে ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে চিকিৎসা করানো দরকার। মুখ শিরশির করতে পারে, ঠোঁট, মুখ, গলা ফুলে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে যেসব খাবারে অ্যালার্জি হচ্ছে তা এড়িয়ে চলাই ভালো। প্রয়োজনে সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে।

কাদের বেশি হয়ে থাকে?

পরিবারে কারও এমন সমস্যা থাকলে অন্যের হওয়ার শঙ্কা বেশি থাকে। ৩ বছরের নিচের শিশুদের খাবারে অ্যালার্জি সাধারণত বেশি থাকে। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটা কমতে থাকে। একজিমা, অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগীদের বিভিন্ন খাবারে অ্যালার্জি থাকার শঙ্কা আরও বেশি।

নির্দিষ্ট কিছু খাবার আছে যেগুলো অন্য খাবারের তুলনায় বেশি অ্যালার্জি সমস্যা তৈরি করে। ভুট্টা, জেলাটিন, গরুর মাংস, ভেড়ার মাংস, মুরগির মাংস, কিছু বীজ (সূর্যমুখী, তিল, পোস্ত ইত্যাদি), মসলায় (কেওড়া, ধনে, রসুন, সরষে ইত্যাদি) অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে দুধ, ডিম, চকলেট, বাদাম, গমের তৈরি খাবার, কিছু সবজি, কিছু মাছ—সাধারণত অ্যালার্জি তৈরি করতে পারে।

ব্যায়ামজনিত অ্যালার্জি

খাওয়ার পরপরই ব্যায়াম করলে কারও কারও অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। কারণ জানা না গেলেও উপসর্গ একই রকম। এ ধরনের অ্যালার্জি এড়ানোর জন্য খাবারের কয়েক ঘণ্টা পর ব্যায়াম করা উচিত।

খাদ্যে অ্যালার্জি ও ইনটলারেন্স কি একই?

দুটি ভিন্ন বিষয়। কিন্তু দুটো সমস্যারই পরিপাকতন্ত্রীয় উপসর্গগুলো প্রায় একই রকম। তাই অনেকেই দুটো বিষয়কে এক করে ফেলেন। খাদ্যে ইনটলারেন্স শুধু পরিপাকতন্ত্রে হয় এবং অল্প খাবারে সমস্যা নাও হতে পারে। কিন্তু অ্যালার্জির ক্ষেত্রে অল্প খাবারেই সমস্যা হয়ে থাকে। খাদ্যে ইনটলারেন্স হয়ে থাকে সাধারণত খাদ্য পরিপাকীয় এনজাইমের অভাবে, খাদ্যে বিষক্রিয়া, অন্যান্য রোগেও এমন সমস্যা হতে পারে। অনেক খাবারে কৃত্রিম রং, ফ্লেভার বা অন্য কিছু ব্যবহার করা হয়। এর ফলেও অ্যালার্জি দেখা দিতে পরে। আর যখন খাবারে অ্যালার্জি হয়, তখন প্রতিটি অঙ্গকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

প্রতিরোধ

প্রতিরোধই হচ্ছে অ্যালার্জি রোধ করার সবচেয়ে ভালো উপায়। তাই খুব সতর্কতার সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে কোন ধরনের খাবার থেকে সমস্যা হচ্ছে। কোন কোন খাবারে অ্যালার্জি আছে সেটা জানার জন্য একটা করে সন্দেহজনক খাবার এক দিন করে খেতে হবে এবং তিন দিন ধরে দেখতে হবে যে শরীরে কোনো অ্যালার্জিক প্রভাব হচ্ছে কি না। তবে যদি বিভিন্ন খাবারে অ্যালার্জি থাকে, সে ক্ষেত্রে অনেক সময় সেটা বোঝা মুশকিল হয়ে যায়। তাই খাবারে অ্যালার্জি হচ্ছে এটা মনে হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া দরকার। কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসক অ্যালার্জির পরীক্ষা করতে দেন ঠিক কোন খাবার থেকে হচ্ছে আর তা কতটা গুরুতর তা জানার জন্য।

চিকিৎসা

সবচেয়ে ভালো উপায় হলো যেসব খাবারে অ্যালার্জি হচ্ছে তা এড়িয়ে চলা। চুলকানি, ত্বকে দানা বের হলে মুখে খাওয়ার অ্যান্টি অ্যালার্জিক ওষুধ ভালো কাজ করে। এর সঙ্গে দানাগুলোতে লাগানোর জন্য ক্রিম ও মলম দেওয়া হয়। তবে সমস্যা বেশি হলে স্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

লেখক: চিকিৎসক