Thank you for trying Sticky AMP!!

গল্পের শুরুটা ৪৫০ টাকার

হাসনা বেগম, ছবি: শহীদুল ইসলাম

হাসনা বেগমের নিজের এখন একটা কারখানা আছে, যেখানে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন প্রায় ২০০ জন নারী। তাঁদের প্রশিক্ষণও দিয়েছেন হাসনা নিজেই। অথচ একটা সময় মাসে ৪৫০ টাকা বেতনে কাজ করতেন অন্যের কারখানায়।
কিসের কারখানা হাসনার? বললেন, ‘মূলত পোশাক তৈরির কারখানা আমার। এখানে থ্রিপিস, পাঞ্জাবি, সিল্ক শাড়ি ইত্যাদি তৈরি হয়। আবার শাড়িতে হাতের কাজ, কুশনকভার ও কাপড়ের বিভিন্ন শোপিসও তৈরি করি।’ নিজের এমপিকে ফেব্রিকস নামের কারখানার পণ্য হাসনা বেগম দেশে ও বিদেশে মেলায় নেন। পাশাপাশি হাঁস-মুরগির খাবার তৈরির একটি কারখানাও গড়ে তুলেছেন তিনি।
হাসনা বেগমের বাড়ি রাজশাহী নগরের বিসিক এলাকায়। স্বামীর নাম রেজাউল আহসান। চার সন্তান। বড় ছেলে স্নাতক পাস করেছেন। দুই মেয়ে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আর ছোট ছেলে পড়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে। হাসনা বেগম দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছিলেন। বিয়ে হয় ১৯৮৫ সালে। এর আগ পর্যন্ত রাজশাহী বিসিক এলাকায় অন্যের কারখানায় মাসে ৪৫০ টাকা বেতনে শ্রমিকের কাজ করতেন। বিয়ের পরে স্বামীর সংসারে এসে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে একটি কারখানা গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন।
হাসনা বেগম জানালেন, ১৯৯০ সালে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নেন। ‘স্বামীর সহযোগিতায় ৬০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে কারখানা শুরু করেছিলাম। প্রথমে ছিল চারটি হাত-তাঁত। স্থানীয় বাণিজ্য মেলায় স্টল দেই। দেখি আমাদের পণ্যের বেশ চাহিদা রয়েছে। এরপরই উৎসাহ বেড়ে যায়।’ বললেন হাসনা বেগম।
রাজশাহী শহরে তাঁর স্বামীর একখণ্ড জমি ছিল। এই জমি কাজে লাগানোর মতো সামর্থ্য ছিল না তাঁদের। হাসনা সাহস করে জমিটা বিক্রি করে চারটি যন্ত্রচালিত তাঁত কেনেন। তার পর থেকে বাড়তে থাকে তাঁর ব্যবসার পরিধি।
২০০৬ সালে হাসনা বেগম উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের মাধ্যমে কলকাতার বাণিজ্য মেলায় অংশ নেন। তবে সেই মেলায় আশানুরূপ সাড়া পাননি। হাসনা এতে হতাশ হননি। দেশে ফিরে এসে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোতে ‘এআরসি’ নামে একটি সমিতির নিবন্ধন করেন। এর পর থেকে প্রতিবছর বিদেশের বিভিন্ন মেলায় অংশ নিতে থাকেন হাসনা। এর মধ্যে নেপাল ও ভারতের কলকাতা, আসাম ও গোহাটিসহ বিভিন্ন রাজ্যে বাণিজ্য মেলায় অংশ নেন।
হাসনা বেগমের আর বসে থাকার সময় নেই। নিজেই একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালু করেন। নানা রকম হাতের কাজের প্রশিক্ষণ দেন এলাকার হতদরিদ্র নারীদের। এই প্রশিক্ষণকেন্দ্র থেকে প্রতিবছর ১৩০ জন নারী হাতের কাজের প্রশিক্ষণ নেন। এই প্রশিক্ষিত নারীদের তিনি সুতা ও কাপড় সরবরাহ করেন। তাঁরা নিজ নিজ বাড়িতে বসে শাড়ি, কুশনকভারে কাজ করেন ও বিভিন্ন ধরনের শোপিস বানিয়ে হাসনা বেগমকে সরবরাহ করেন। এখন তাঁর কারখানায় ১৫ জন নারী কর্মী হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়া বাইরে ৪০ জন নারী নিজ বাড়িতে বসে তাঁর কাজ করেন। তাঁর হিসাবে এভাবে অন্তত ২০০ জন নারী স্বাবলম্বী হয়েছেন।
২০১৪ সালে রাজশাহী বিভাগীয় পর্যায়ে সরকারের ‘জয়িতা’ পুরস্কার পেয়েছেন হাসনা বেগম।