প্রথম আলো আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকদের অভিমত

চিকিৎসা পেতে পদে পদে হয়রানির শিকার রোগীরা

প্রথম আলো চট্টগ্রাম কার্যালয়ে গতকাল আয়োজিত ‘নগরের স্বাস্থ্যসেবা: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা l প্রথম আলো
প্রথম আলো চট্টগ্রাম কার্যালয়ে গতকাল আয়োজিত ‘নগরের স্বাস্থ্যসেবা: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা l প্রথম আলো

ভুল চিকিৎসা ও ভেজাল ওষুধের আতঙ্ক এখন নগরবাসীর মনে। তার ওপর রয়েছে রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসক ও সেবিকাদের দুর্ব্যবহার। ফলে নগরে চিকিৎসাসেবা পেতে পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন রোগীরা। গতকাল শনিবার সকালে প্রথম আলো চট্টগ্রাম কার্যালয়ে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনায় উঠে আসে এসব কথা। ‘নগরের স্বাস্থ্যসেবা : সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে প্রথম আলো।

এতে আলোচকেরা নগরের স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নীত করতে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি বলে মত দিয়েছেন। প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরীর সঞ্চালনায় বৈঠকে অংশ নেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, নাগরিক সমাজ, ভুক্তভোগী ও প্রশাসনের প্রতিনিধিরা।

সরফরাজ খান চৌধুরী

বৈঠকে ভুল চিকিৎসার শিকার আমিনুল ইসলাম তুলে ধরেন তাঁর দুঃসহ যন্ত্রণার কথা। তিনি বলেন, আমার পাইলসের সমস্যা ছিল। চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে তিনি অপারেশনের (অস্ত্রোপচার) পরামর্শ দেন। এর বিকল্প নেই বলে জানান চিকিৎসক। তাঁর পরামর্শ অনুযায়ী অপারেশনও করা হয়। রাতে যখন জ্ঞান ফেরে, তখন প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করি। নার্সরা এসে শক্ত করে ধরে রাখেন। মনে হয়েছে, ভেতরে গজ কিংবা সুতাজাতীয় কিছু রয়ে গেছে। বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়। পর দিন সকাল ১০টার দিকে হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে যাই। বিকেলের দিকে আবার ব্যথা শুরু হয়। চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করি। অনেক চাপাচাপি করার পর এক্স-রে করতে বলেন। আরেকটি হাসপাতালে এক্স-রে করি। রিপোর্ট নিয়ে যখন ওই চিকিৎসকের কাছে যাই তখন বলা হয় ভেতর সুতা রয়ে গেছে। কিন্তু আমাকে অন্য চিকিৎসক বললেন একটি সুঁই রয়ে গেছে। আরও একবার অপারেশন করা হয় কিন্তু সুঁই বের করতে পারেননি।
পরে দেশের বাইরে চলে যাই। সেখানে চিকিৎসকেরা খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করেন। কয়েকজন চিকিৎসক মিলে দুই-তিন ঘণ্টা অপারেশন করে শরীর থেকে সুঁইটি অপসারণ করেন। সুঁইটি নিয়ে আসি। দেশে ফিরে মামলা করি। চিকিৎসক ভুল চিকিৎসার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এখন ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা করেছি। নিম্ন আদালতে মামলার রায় ডাক্তারদের পক্ষে যায়। আমরা আপিল করেছি। মামলাটি এখন জজ আদালতে রয়েছে।

মোহাম্মদ আলী


আলোচনায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের প্রধান জিল্লুর রহমান বলেন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা থাকে। আমাদের দেশে জটিলতা যেমন আছে তেমনি উন্নত দেশেও কিছু কিছু জটিলতা হয়। ভুল ডায়াগনোসিসও হয়ে থাকে। হয়তো আমাদের এখানে একটু বেশি। তা ছাড়া আমাদের চিকিৎসকদের অধিক সংখ্যক রোগীকে সামলাতে হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দৈনিক গড়ে আড়াই হাজার রোগী ভর্তি থাকে। এ ছাড়া বহির্বিভাগে আরও পাঁচ হাজারেরও বেশি রোগীকে সেবা দেওয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আমাদের দেশ হয়তো উন্নত দেশের তুলনায় ৫০ বছর পেছনে। বিশ্বে এখন নতুন নতুন পদ্ধতিতে রোগ নির্ণয় হচ্ছে। আস্তে আস্তে আমরাও উন্নত রোগ নির্ণয় ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে আমাদের বিনিয়োগ একটা প্রধান ঘাটতি। ভারতে টাটা-বিড়লার মতো প্রতিষ্ঠান চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনেক অবদান রেখে চলেছে। আমাদের বিত্তবানরাও যদি এগিয়ে আসেন তাহলে চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনেক উন্নতি হবে।
রোগ নির্ণয়ের সুবিধার জন্য এ জন্য একটি ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার দরকার। যেখানে এক মেঝেতে সব হবে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমীন তুলে ধরেন ভেজাল ওষুধের ভয়াবহ চিত্র। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে গিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা জানান। তিনি বলেন, বাকলিয়ায় একটি ওষুধের দোকানে গিয়ে দেখলাম ভদ্রলোক গর্ভবতী মায়েদের জন্য ওষুধ তৈরি করছেন। ভাতের মাড় আর গাম দিয়ে এই ওষুধ তৈরি হচ্ছে। কয়েকটি ওষুধের দোকানে গিয়ে আমরা ফ্রিজে ওষুধের পাশাপাশি মাংস ও মাছ পেয়েছি। এ ছাড়া সরকারি ওষুধও পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন দোকানে। সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে ফুড সাপ্লিমেন্ট। আমেরিকা কিংবা অন্যান্য দেশ থেকে এসব আমদানি হয় বলে প্রচার করে থাকে বিক্রেতারা। আমি তাদের বললাম আপনারা আমদানির ডকুমেন্ট দেন। তখন আর দেখাতে পারেন না। আসলে এগুলো তৈরি হয় নগরের হাজারি গলিতে।
তিনি জানান, বিদেশি ওষুধ আসছে চোরাই পথে। যারা অনুমোদনহীন ওষুধ কিংবা ফুড সাপ্লিমেন্ট বিক্রি করেন তাঁরা ডাক্তারদের দোষ দেন। তাঁরা বলেন, ডাক্তাররা লেখেন তাই আমরা এগুলো রাখি। আমি বলি আটা, ময়দা মিশিয়ে ওষুধ বানালে এ দায় কেন ডাক্তাররা নেবেন?

সাফিয়া গাজী রহমান

ওষুধের সঙ্গে মানুষের জীবন মরণ সমস্যা জড়িত। সরকারি কার্যালয়ে ঘুষ দিলে অনেক কাজ হয়। হয়তো ১০ দিন দেরি হবে। কিন্তু মানুষের রোগ নিয়ে বসে থাকা যায় না। যদি সঠিক ওষুধ না পায় তাহলে তাঁর জীবন হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। তাই মানুষের রোগকে পুঁজি করে যাতে কেউ ব্যবসা করতে না পারে সে ব্যাপারে সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করতে হবে। শক্তি প্রয়োগ করে জেল জরিমানা করে সবকিছু সম্ভব নয়। সবাইকে সচেতন হতে হবে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য সেবা বিদেশেও প্রশংসিত হয়েছে। এ সেবার জন্য তৎকালীন মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী কোবে সিটি থেকে থেকে পুরস্কারও পেয়েছিলেন। নগরের স্বাস্থ্য সেবা কে দেবে এখনো তা নির্ধারিত হয়নি। নগরের সব মানুষের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার চিন্তা থেকে সাবেক মেয়র এটা করেছিলেন। তখন এডিবির অর্থায়নে প্রতিটি ওয়ার্ডে নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করেছিলেন। এ ছাড়া চারটি মাতৃসদন হাসপাতাল করা হয়েছিল।
আমি বলব নগরে স্বাস্থ্য সেবা কমেনি। আমার রোগীর সেবা দেওয়ার সংখ্যা আগের মতোই আছে। আরও হয়তো বেড়েছে। তবে মানসম্মত সেবা হয়তো আমরা দিতে পারছি না। প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে এটা সম্ভব হচ্ছে না।
এক কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের বাজেটও স্বাস্থ্য খাতে দেওয়া হয় না। এখন যদি বলা হয় সব খেয়ে ফেলছে সব খেয়ে ফেলছে তাহলে কী বলার থাকে। মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী বিদায় নেওয়ার পর আমরা সেভাবে লজিস্টিক সুবিধা পাইনি। মেয়র মনজুর আলম আন্তরিক ছিলেন। কিন্তু তাঁকে অন্যান্য বিভাগের ওপর নির্ভর করতে হতো।
এখন নতুন মেয়র এসেছেন। তিনি স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে অনেক আন্তরিক। প্রস্তাবনা চেয়েছেন কী কী করা যায় স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা দৈনিক তিন হাজার মানুষকে সেবা দিচ্ছি। এগুলো যদি না দিতাম তাহলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেত। সেখানে চাপ বাড়ত।

সেলিম আকতার চৌধুরী


শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক সাফিয়া গাজী রহমান বলেন, চিকিৎসক যদি দিনে ১০০-২০০ রোগী দেখেন তাহলে কীভাবে তিনি মাথা ঠিক রাখবেন!
আমি সানশাইন চ্যারিটি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিছু সাহায্য সহযোগিতা দিই। প্রসূতি ওয়ার্ডে ৬০টি কেবিনেট ও সাতটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। অনেক সমস্যা রয়েছে এখানে। একসময় মেঝে খুব অপরিষ্কার থাকত। এখন অনেক উন্নতি হয়েছে। আয়ারা অভিভাবকদের কাছ ছেলে হলে ৫০০ টাকা আর মেয়ে হলে থেকে ৩০০ টাকা করে দাবি করত। ১১ জন আয়া রয়েছেন। বাকিরা ধার করা আয়া। আয়াদের কাউন্সেলিং করেছি, তাদের আলাদা পোশাক হিসেবে ৬০টি শাড়িও দিয়েছি।
প্রসূতি বিভাগে এখন একই সঙ্গে চারটি অস্ত্রোপচার হতে পারে। অস্ত্রোপচার কক্ষের জন্য বিভিন্ন বিত্তবানদের সহযোগিতা নিয়ে আমরা কাজ করে গেছি।
লিউকোমিয়া ওয়ার্ডে আমি কাজ শুরু করেছি অনেক আগে থেকে। আমরা নিজের ক্যানসার হয়েছে তিন বছর হলো। আমার ক্যানসার যখন ধরা পড়ে তখন ডাক্তার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন কেমন লাগছে। আমি বললাম ভালো। ডাক্তার জড়িয়ে ধরে হেসে বললেন, আমি তোমাকে মরতে দেব না।
আমার সন্তানেরা এখন বড় হয়ে গেছে। কিন্তু আমার কিছু বাচ্চা আছে মেডিকেলের লিউকোমিয়া ওয়ার্ডে। সেখানে প্রতি শনিবার আমার যেতে হয়। তারা আমার জন্য অপেক্ষা করে। যত দিন ভালো আছি তত দিন কাজ করে যাব।
ডাক্তারদের হাসি রোগীদের কত ভালো লাগে জানেন? একটু ভালো ব্যবহার রোগীদের অনেক সুস্থ করে তোলে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, সিটি করপোরেশনের অধীনে পরিচালিত বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল ও মাতৃসদনে এক হাজার ২০০ জন স্টাফ রয়েছেন।
তাঁদের মধ্যে চিকিৎসক আছেন ১১১ জন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পর সবচেয়ে বেশি রোগীকে সেবা দেওয়া হয় এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে। দীর্ঘদিন ধরে সেবা দিয়ে যাওয়ার কারণে সিটি করপোরেশনের এই উদ্যোগ দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। তবে যতটা উচ্চমানের ছিল, গত কয়েক বছর সে জায়গায় নেই। আর নানা কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়েছে।

রুহুল আমিন

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সে সহযোগিতা না পাওয়ায় সেবার মান কমেছে। তবে সিটি করপোরেশনের পরিচালিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে সেবার মান বাড়ানোর জন্য বর্তমান মেয়র আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি সব ধরনের সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে যেসব ওয়ার্ডে একের অধিক নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে, সেগুলো বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি দুটি নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে ওয়ার্ড কাউন্সিলররা কার্যালয় করতে চান। আরও একটি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এখন ওয়ার্ড কাউন্সিলররা হলেন ওয়ার্ডের অভিভাবক। তাঁরা যদি জনগণের জন্য ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকেন্দ্র না চান তাহলে আমি চিকিৎসক হিসেবে কি করতে পারি?
এই নগরে বিভিন্ন সংস্থা ও এনজিও চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কারও মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। এই অবস্থা নিরসন করতে হলে যেসব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে, তাদের মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে হবে।
এখন বিশ্বজুড়ে আরবান হেলথ পলিসি নিয়ে মাতামাতি চলছে। কিন্তু আমাদের এখানে কোথাও এই পলিসি নেই।

জিল্লুর রহমান


চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সরফরাজ খান চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র। আপনি যদি একটি দিন গিয়ে দেখেন, গর্ভবতী মহিলা, হাড়ভাঙা ও অ্যাজমার রোগীরা কেমন করে পাহাড় বেয়ে হাসপাতালে উঠছেন! মাথায় ঢুকছে একটি গাড়ি যদি কিনতে পারি। গাড়ি দিয়ে রোগীদের তুলবে আর নামাবে। তেল খরচের সমস্যা নেই।
হাসপাতালের লিফটম্যানকে বলেছি, নতুন জন্ম নেওয়া শিশুকে লিফটে তুলবে না। আল্লাহই না করুক, ওখানে যদি ১০ মিনিট আটকে পড়ে, তাহলে এই বাচ্চা মারা যাবে। দুটি লিফট আছে। একটি বন্ধ। আরেকটির অবস্থা করুণ। ১৯১১ সালের হাসপাতাল। রোগী বাড়ছে। হাসপাতালটি মূলত ১৫০ শয্যার, কিন্তু নামে আড়াই শ। ঢাল নেই, তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার। এর মধ্যেও বর্তমান সরকারের আমলে জঙ্গল পরিষ্কার করেছে। চিকিৎসার যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করেছি। রোগীদের বসার জন্য চেয়ার, বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শ্রদ্ধার রেখেও বলতে হচ্ছে, রাজনৈতিক নেতারা আমাদের বিপদে ফেলেন। যেমন মন্ত্রী মহোদয় এলেন। এসেই ঘোষণা দিলেন আজ থেকে আড়াই শ শয্যার হাসপাতাল করা হলো। কিন্তু মানুষ নেই, বাবুর্চি নেই, স্টোর নেই, সেন্টার অক্সিজেন নেই। অপারেশন থিয়েটারের অবস্থা করুণ। এসব সুযোগ–সুবিধার ব্যবস্থা না করে ঘোষণা দিলে তো হবে না। এর পরও বছরে তিন চার হাজার অপারেশন করি।

আমিনুল ইসলাম

একটি ছেলে এফসিপিএস করল, এমডি করল। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে তাঁদের পাহাড়ে ও ইউনিয়ন সেন্টারে বদলি করা হয়। তাঁরা সেখানে গিয়ে কী করবেন? চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে রাজনীতি গুলিয়ে ফেলা কখনো উচিত নয়।
এখন টাকা দিয়ে এমবিবিএস ডিগ্রি কিনছে। চিকিৎসক হওয়ার পর গাড়ি কিনতে হবে। ক্লিনিকের মালিক হতে হবে। এখানে ৮০ শতাংশ চিকিৎসক ক্লিনিকের মালিক। বিএমএর কাজটা কী? এখন একটিই কাজ, বদলি করা।
এত হতাশার মধ্যেও আশার বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশের চিকিৎসকেরা সারা বিশ্বে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। আমাদের এখানেও ভালো চিকিৎসক রয়েছেন।এ মন অনেক ডাক্তার আছেন যারা দিনে পাঁচ দশজন রোগী বিনা মূল্যে দেখেন।

স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে ১০ সুপারিশ 
*চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগ নির্ণয়ের জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টার চালু
*যেকোনো হাসপাতাল শুরু থেকেই জনবল-অবকাঠামো সবকিছু দিয়ে চালু করা
*জরুরি চিকিৎসা তহবিল রাখা
*সেবা দেওয়ার মানসিকতা গড়ে তোলা
*সরকারি হাসপাতালগুলোর জন্য বিত্তবানদের অনুদান দিতে উদ্বুদ্ধ করা
*নগরের স্বাস্থ্যসেবার জন্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া
*চিকিৎসক ও সেবিকাদের ব্যবহার ভালো করতে পদক্ষেপ নেওয়া
*‘আরবান হেলথ পলিসি’ প্রণয়ন করা
*চিকিৎসার মান বৃদ্ধির জন্য গবেষণা ইনস্টিটিউট চালু করা
*ওষুধ বিক্রেতাদের ওপর নজরদারি বাড়ানো