Thank you for trying Sticky AMP!!

ট্রিট ছাড়া আমাদের চলেই না!

উপলক্ষ যা–ই হোক, ট্রিট চা​ই বন্ধুদের। মডেল: সাকিব, শুভ, ইন্দ্রানী ও নাফিসা। ছবি: অধুনা

জার্মানিতে পড়তে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছিল উজ্জ্বল। সেখানকার কলেজে বৃত্তিসহ ভর্তির সুযোগ পান তিনি। এত বড় খুশির খবর অন্য সময় হলে বন্ধুদের সবার আগে জানাতেন উজ্জ্বল। কিন্তু আজ জানাতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ, ওদের কাছে খবরটা পৌঁছানো মানেই জমানো টাকা আজকালের মধ্যে শেষ হওয়া। কিন্তু বন্ধুদের খবর জানানোর সঙ্গে টাকা শেষ হওয়ার মানে জানতে চাইলে উজ্জ্বল খোলাসা করলেন বিষয়টি। ‘বুঝতে পারছেন না? আরে এটাই তো এখনকার তরুণদের সেলিব্রেশন। খুশির খবরটার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুদের ট্রিটের স্থান ও সময়টাও জানিয়ে দিতে হয়। ট্রিট ছাড়া যে বন্ধুদের কাছে এই খবরের কোনো দামই নেই।’
ট্রিট ছাড়া বন্ধুদের কাছে খুশির খবরের কোনো দাম নেই, সেটা আবার মানতে নারাজ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামিয়া শবনম। সামিয়া বলেন, ‘বন্ধুর সাফল্যে অবশ্যই আমরা আনন্দিত হই। সেই আনন্দকে আরেকটু উসকে দিতে ট্রিটের আয়োজন। যেখানে ভূরিভোজের পাশাপাশি বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে সময় কাটানো যায়।’
ডিকশনারি বলছে ট্রিট একটি ইংরেজি শব্দ। যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, নিজ ব্যয়ে খাবার সরবরাহ করা। অর্থাৎ দাওয়াতকারী নিজে অন্যদের খাবার ও পানীয়র ব্যয়ভার বহন করবে। এখনকার তরুণদের কাছে ট্রিট শব্দটা বেশ পরিচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী খায়রুল বাসার বলেন, ‘নানা কারণে ট্রিট দিতে হয়। আবার অন্যদের কাছ থেকে আদায়ও করে থাকি নানা অছিলায়। ক্লাসে কেউ ভালো ফল করলে, কোনো বন্ধুর জন্মদিন থাকলে, প্রেমে পড়লে অথবা কেউ নতুন সংগঠন করলে সেখানে নতুন পদায়ন হলে এমনকি মন খারাপের জন্যও আমরা ট্রিট নিই। আবার সাধারণ কোনো বিষয় যেমন আড্ডার ফাঁকে কেউ একটা ভালো কথা বলল সেখানেও জোর করে তার কাছ থেকে ট্রিট নেওয়া হয়।’
ট্রিট নেওয়ার যেমন কোনো সঠিক কারণ নেই, তেমন নির্ধারিত কোনো খাবারের পদও ঠিক নেই। ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী ঝুমু আক্তার বলেন, ‘কলেজের মধ্যে ট্রিট হলে চা, সমুচা, শিঙাড়া ইত্যাদিতেই খুশি থাকতে হয়। আর জন্মদিন বা ভালো কোনো সাফল্যে অবশ্যই রেস্তোরাঁয় বসে পেট পুরে দুপুর বা রাতে খাওয়া চাই। কারণ, সেখানে খাবারের পাশাপাশি প্রাণখুলে আড্ডা আর দলেবলে সেলফি তোলার মতো বিষয় থাকে। গল্প হয় দেশ-বিদেশের নানা বিষয় নিয়ে।’
অনেকের আবার হুটহাট ট্রিট নিয়ে আছে বিস্তর বিরোধিতা। তেমনই একজন মুহাইমিনুল কবির। ঢাকা কলেজের এই শিক্ষার্থীর মতামত, ‘ট্রিট জিনিসটা সব সময় ভালো লাগে না। অনেক সময় বন্ধুরা মিলে কাউকে ফাঁসানোর জন্য হুট করে কিছু একটাকে ইস্যু বানিয়ে ট্রিটের আবদার করে। তার কাছে টাকা আছে কি না সেটা জানার প্রয়োজন করে না। তা ছাড়া, যে ট্রিট দেবে তার একটা মানসিক প্রশান্তির দরকার আছে...।’
মুহাইমিনুলের কথা শেষ হওয়ার আগেই টেনে নিলেন তাঁর বন্ধু শফিকুল ইসলাম। শফিকুল বলেন, ‘ও (মুহাইমিনুল) সব সময়ই এমন। জীবনের সবকিছু কী বলে-কয়ে হয়। পুরো বিষয়টাকে সব সময় একটা সিরিয়াস ভঙ্গিতে দেখার বাতিক আছে ওর। আর বন্ধুর কাছে টাকা না থাকলে তো আরেকজন ধার দেয়। বন্ধুত্ব তো সেটাই যেখানে একজনের সুখ মানে অন্যদেরও সুখ। উপলক্ষ তো বলে-কয়ে আসে না। তাই এমন সিদ্ধান্ত হুটহাট নেওয়াতে আলাদা একটা আনন্দ আছে।’
দুই বন্ধুর তর্ক সামনে এগিয়ে যাওয়ার আগেই নিজে উঠে পড়লাম। কারণ, দুই বন্ধুর মাঝে ঝগড়া জোরালো হলে যে নিজেকেই ট্রিট দিয়ে থামাতে হতে পারে।