
ছোটবেলা থেকেই মালিহার (ছদ্মনাম) স্বাস্থ্য ভালো। কিন্তু কিছুদিন আগে একটি বিয়েতে একজন আত্মীয় বলে বসলেন মোটার কারণে মালিহাকে ভালো দেখাচ্ছে না। ব্যাপারটা তিনি হালকাভাবে বললেও এ কথা শোনার পর থেকে মালিহা আর ঘর থেকে বের হতে চায় না। এমনকি খেতেও চায় না, এ নিয়ে তার বাবা-মা বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন।
কারও সঙ্গে দেখা হলে আমরা সাধারণত সৌজন্যমূলক আলাপের পর শরীর নিয়ে মন্তব্য করে বসি—মোটা হয়ে গেছেন, এত বেশি চিকন হলেন কীভাবে? এমনকি আমরা অপরের শারীরিক গঠন নিয়ে অনেক সময় পেছনেও কথা বলি। ইংরেজিতে এটাকে ‘বডি সেমিং’ বলা হয়ে থাকে।
প্রত্যেক মানুষের আত্মমর্যাদাবোধ আছে। বয়সভেদে একেকজনের আত্মমর্যাদাবোধ একেক রকম হয়, সেটা নির্ভর করে বয়সের ওপর। প্রত্যেকেই একে অপরের কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে চায়, প্রশংসিত হতে চায়। কারও শরীর নিয়ে অযথা মন্তব্য করা হলে তিনি নিজেকে ছোট মনে করেন। তাঁর আত্মমর্যাদাবোধ কমে যায়।
মনোবিজ্ঞানের ভাষায় ‘সেলফ স্টিম’ বলে একটি কথা আছে। একজন মানুষের দৈহিক গঠন, গায়ের রং ইত্যাদি ইতিবাচক হলে তাকে সুন্দর বলা হয়, এই প্রথা আমাদের মধ্যে অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। অনেক দিন পর কারও সঙ্গে দেখা হলেও তার শরীর নিয়ে মন্তব্য করেন অনেকে। ব্যাপারটা যতটা হালকাভাবে অথবা না বুঝে করা হোক—এটা ঠিক না। যাকে বলা হলো সে কী ভাবছে, সেটা কখনোই বিবেচনা করা হয় না। এমনকি পরিবারের ভেতরেও অনেক সময় শারীরিক নানা বিষয় নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়। এ ধরনের মন্তব্য করা হলে অন্যজন নানা রকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যার ভেতর দিয়ে যেতে পারেন।
আবার অনেক সময় অনেকে নিজেরই কোনো কিছুকে ত্রুটি ভেবে বসেন। হয়তো নাক কিছুটা বাঁকা, মুখমণ্ডলের আকৃতি, দাঁতের গঠন অর্থাৎ যেসব ব্যাপার ধরার মধ্যে পড়ে না, সেসব নিয়ে অনেকে বেশি চিন্তা করেন। অনেকে হয়তো দিনের ভেতর বেশ কয়েকবার আয়নায় নিজেকে দেখে ছোট ছোট অস্ত্রোপচারও করে ফেলেন। এ ধরনের মানুষেরা সাধারণত ‘বডি ডিসমরফিক ডিসঅর্ডারে’ ভোগেন। এ ধরনের ছোটখাটো মন্তব্য অনেক বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
এ ব্যাপারে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, এমন কিছু বলা উচিত নয় অথবা শরীর বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে এমন কোনো মন্তব্য করা উচিত নয়, যাতে করে ব্যক্তির মনে হীনম্মন্যতা সৃষ্টি হয়। কারও কোনো রকম ত্রুটি আঙুল দিয়ে দেখানো উচিত নয়, পরিবারের সদস্য কিংবা বন্ধুবান্ধব অথবা যে কারও এ ব্যাপারে সচেতন হওয়া উচিত। বিশেষ করে কৈশোরকালে এসব কিছু মনের ওপর অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ সময় তাকে ইতিবাচক ধারণা দিতে হবে। কৈশোর থেকেই তার ভেতরে আত্মমর্যাদাবোধ গড়ে ওঠে।
কারও সঙ্গে দেখা হলেই হুট করে তার শরীর নিয়ে মন্তব্য করার প্রথা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে ব্যাপারটি যতটা হালকাভাবেই বলা হোক না কেন কিংবা যা ভেবেই বলা হোক, সেটা মোটেও উচিত নয়। এটা একান্তই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
মানুষের মন্তব্য অথবা কথায় জীবন চলবে না। প্রতিটা মানুষের উচিত নিজের ব্যাপারে খুশি থাকা, নিজের সবকিছুই সুন্দর এবং যা আছে সেটাই ভালো, এটা তাকে মনে রাখতে হবে। নিজের আত্মমর্যাদাবোধ বজায় রাখতে হবে।
সূত্র: অ্যানক্সায়েটি অ্যান্ড ডিপ্রেশন অ্যাসোসিয়েসন অব আমেরিকা, হোপ