
গাছে ছাওয়া পথ দিয়ে ঢুকতেই পূজামণ্ডপ। প্রবেশপথে ফুলে ভরা শিউলিগাছ। খানিক দূরে পূজামণ্ডপে দেবী দুর্গা সিংহের ওপর আসীন। দুর্গার ডান পাশে লক্ষ্মী ও গণেশ বাম পাশে সরস্বতী ও কার্তিক। সবার পরনে ত্রিপুরা জাতির ঐতিহ্যবাহী পোশাক। দেবী দুর্গা, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর পরনে কোমর তাঁতে বোনা ঐতিহ্যবাহী রিনাই (স্কার্ট) ও রিচা (ওড়না)। গণেশ আর কার্তিকের ঠাকুরের পরনে ধুতি।
৩ অক্টোবর সকালে খাগড়াছড়ির পানছড়ি কুড়াদিয়া ছড়া সর্বজনীন দুর্গাপূজার মণ্ডপে গিয়ে দেবী দুর্গাকে এমন ত্রিপুরা সাজে দেখা গেল। শিল্পী নরেন্দ্র পাল তৈরি করেছেন এই প্রতিমা। তিনি জানান, সাত দিন ধরে দিনরাত খেটে আরও চারজন কারিগরের সহায়তা নিয়ে প্রতিমাগুলো তৈরি করেছেন। চেয়েছেন ভিন্ন কিছু করতে। প্রতিমা দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে লোকজন দেখছেন, প্রশংসাও করছেন। এখন মনে হচ্ছে পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।
খাগড়াছড়ি থেকে ২০ কিলোমিটার ও পানছড়ি উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে কুড়াদিয়া ছড়ার এই মণ্ডপ এলাকার মানুষজনের দৃষ্টি কেড়েছে। এই মণ্ডপের পূজা উদ্যাপন কমিটির সদস্য খগেন ত্রিপুরা বলেন, ‘মূলত ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের রীতি অনুসারে এবার দেবীকে সাজানো হয়েছে। পাশাপাশি আমরা চেয়েছি ত্রিপুরাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে। এ কারণে আমরা নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক দিয়ে দুর্গা প্রতিমা সাজিয়েছি, মণ্ডপ তৈরি করেছি।’
পূজা উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণ কান্তি ত্রিপুরা বলেন, ‘সারা জীবন আমরা একই রকমভাবে দেবী দুর্গাকে দেখে এসেছি। কমিটির সবাই মিলে পরিকল্পনা করে অন্য রকমভাবে পূজামণ্ডপ সাজানোর চেষ্টা করেছি। যেহেতু এটি পাহাড়ি এলাকা, সে জন্য পাহাড়ি সাজে প্রতিমা তৈরি করেছি। আমাদের বিশ্বাস, পাহাড়ে দেবী দুর্গা আমাদের সাজেই আমাদের কাছে আসেন।’
কুড়াদিয়া ছড়া সর্বজনীন দুর্গাপূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি কিরণ ত্রিপুরা বলেন, ‘চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা—এই তিন সম্প্রদায় মিলে আমরা পূজা উদ্যাপন করে আসছি ১৩ বছর ধরে। এবার ত্রিপুরা সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে পূজামণ্ডপটিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। মহালয়ার দিন থেকে প্রতিদিন প্রচুর নারী-পুরুষের সমাগম ঘটছে ব্যতিক্রম এই প্রতিমা দেখতে।’
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের পাশাপাশি চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা এই তিন সম্প্রদায় মিলে কমিটি গঠন করে পূজার সময় নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে।
জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তরুণ কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, খাগড়াছড়ি জেলায় এ বছর ৪৯টি পূজামণ্ডপে পূজা উদ্যাপন হবে। এর মধ্যে ৪৪টি প্রতিমা পূজা, দুটি ঘট পূজা ও তিনটি স্থায়ী প্রতিমা পূজা হবে। তবে কুড়াদিয়া ছড়ার এ মণ্ডপটি অন্য মণ্ডপগুলো থেকে আলাদা।