সম্পর্ক

দুজনে কি দুজনার

মনের সঙ্গে মনের মিল হলেই হতে পারবেন দুজন দুজনার। মডেল হয়েছেন অভিনেত্রী তানজিন তিশা ও অভিনেতা রোশান।
ছবি: কবির হোসেন

ধরুন, দুজনে গেলেন দোকানে কলম কিনতে। নানা কিসিম দেখতে দেখতে, দুজনেই কি পছন্দ করলেন একই ধরনের ‘টিপ কলম?’ বা বই কিনতে গিয়ে কি দুজনে একই লেখকের বই খুঁজছেন? আর তা করতে গিয়ে হয়তো আপনাদের মধ্যে সেই লেখকের এমন সৃষ্টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলো, শেষে সবিস্ময়ে দুজনেই বলে উঠলেন, ‘আরে, এটা তো আমারও পছন্দের বই!’ আচ্ছা, আলোচনার কোনো প্রান্তে চা পানের ইচ্ছা হলে দুজনেই কি চিনি ছাড়া দুধ চায়ের অর্ডার দিয়ে বসেন?

ওপরের দৃশ্যগুলোর অবতারণা হলে স্বাভাবিকভাবেই আমরা বলে উঠি, ‘আরে, তোমার-আমার কত্ত মিল! আমরা তো মিতা।’ ক্ষণিকের মিতা হয়ে তো সবাই থাকে না। কোনো কোনো জোড়ায় গড়ে ওঠে দীর্ঘস্থায়ী মিতালি। জীবনের সঙ্গী হয়ে যান একে-অন্যের। সে ক্ষেত্রে একটি প্রশ্ন অবধারিতভাবে উঠে আসে। আর তা ইংরেজিতে ‘মেড ফর ইচ আদার’, বাংলায় বলা চলে ‘দুজনে দুজনার।’

প্রতিটা সম্পর্কের ভিত দাঁড়িয়ে থাকে বন্ধুত্ব ও ভালো বোঝাপড়ার ওপর। আসলেই আপনার সঙ্গীটি বাকিটা জীবন একসঙ্গে কাটানোর হিসাবে যথার্থ কি না, তা বোঝার কিছু কেতাবি বিষয় আছে। সম্পর্ক নিয়ে কাজ করা বিশিষ্টজনেরা তেমন কিছু লক্ষণ চিহ্নিত করে ফেলেছেন। আসুন, সেসব নিয়ে একটু জানাশোনা হোক।

প্রথমত, সম্ভাব্য ব্যক্তির সঙ্গে আপনি কি জীবনের উথাল-পাথাল অনিশ্চিত সময়ের সব খবর ভাগাভাগি করেন? আমরা সুখের কথা যতজনের কাছে বলি, সংগ্রামের কথা ততটা নয়। সুখী কাহিনিতে ব্যক্তিগত বিজয় থাকে। সংগ্রামে থাকে হোঁচট খাওয়ার বিরহ। সেই বিরহ কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করা সহজ হয় না। কিন্তু সঙ্গীর সঙ্গে তা যদি সহজে ভাগ করতে পারেন, তবে বুঝবেন তিনি প্রকৃতই আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী। অজান্তে বা অবচেতনে তা অনুভব না করলে এসব অকপটে বলতেই পারতেন না।

দ্বিতীয়ত, কঠিন সময়ে দুজন দুজনের কতটা পাশে থেকেছেন? ব্যক্তি হিসেবে যে কেউ যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। হয়তো আজ অফিসে অযথাই কর্তৃপক্ষের বকা খেলেন। কিংবা ব্যবসায় হলো বিশাল ক্ষতি। হেরে যাওয়ার অনুভূতি জেগে ওঠা মনে সঙ্গীটি কি প্রলেপ দিয়েছে যতনে? যদি তা হয়, তবে বুঝবেন আপনার বিষণ্ন মুখ তার কাছেও পরাজয়েরই সমান।

তৃতীয়ত, নিজেদের মধ্যকার বিবাদ। দোষে-গুণেই মানুষ। দোষ সবারই থাকে। তা থেকে মনোমালিন্য হওয়াও বিচিত্র নয়। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে শান্তির সাদা পতাকা তুলতে কি দ্বিধা হয়? নাকি অবলীলায় বলে ফেলতে পারেন, সরি? যদি এমনটা হয় তবে বুঝবেন দুজনের মধ্যে আর অহং নেই। একে-অন্যের কাছে আত্মসমর্পণে তাই কোনো ‘যদি-কিন্তু’ নেই। দোষ-গুণ মেনে নির্দ্বিধায় ক্ষমা করা বা ক্ষমা চাওয়া, দুটোই গুরুত্বপূর্ণ।

চতুর্থত, একে-অপরকে কতটা সম্মান করেন? ব্যক্তি হিসেবে, মানুষ হিসেবে একে-অন্যকে সম্মান করা আবশ্যক। সম্ভাব্য সঙ্গীর স্বাধীনতা ও পছন্দকে যখন সম্মান জানাতে পারবেন, তখনই তা আদর্শ হবে। নইলে নয়।

পঞ্চমত, উৎসাহের বিষয়। মনে নিরাশা জাগানোর মানুষ যত সহজে পাওয়া যায়, উৎসাহে ততটা নয়। তাই আপনার সঠিক কাজে যিনি এন্তার উৎসাহ দেন, তাকে মনের মণিকোঠায় স্থান দিন।

ষষ্ঠ বিষয়ে আসে টাকাপয়সা। এই একটি ব্যাপারে আমরা সবার সঙ্গে কথা ভাগাভাগি করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। স্বাচ্ছন্দ্য যখন থাকে না, তখন তো আরও না। যদি সঙ্গীটির সঙ্গে এ বিষয়ে সহজভাবে কথা বলতে পারেন এবং তিনিও সহজভাবে তা গ্রহণ করেন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে নিঃস্বার্থ পরামর্শ দেন, তবে বুঝে নেবেন তিনি আপনার ভালোই চান।

সাত সুরের সপ্তমটি হলো, তাকে ছাড়া আপনার জীবন যাপন কি শূন্য বোধ হয় কি না। তার সঙ্গে নিজের ভবিষ্যৎ দেখতে আপনার কি ভালো লাগে?তাকে কি প্রাত্যহিক জীবনে অগ্রাধিকার দেন? যদি উত্তর ইতিবাচক হয়, তবে সম্পর্কেও ইতিবাচক হোন। হয়তো তার সঙ্গেই আপনার ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে।

এসব তো গেল হিসাব-নিকাশের কথা। কিন্তু প্রেম তো আর হিসাবের খাতা মেনে সব সময় চলে না। এত কিছু মিলিয়ে দেখার সময়ও সব সময় থাকে না। সে ক্ষেত্রে প্রেমেন্দ্র মিত্রের একটি কবিতার দুটি ছত্র মনে রাখতে অনুরোধ করি। কবিতাটির নাম ‘ঝড় যেমন ক’রে জানে অরণ্যকে’। এর প্রথম দুটি ছত্র হলো—

‘ঝড় যেমন ক’রে জানে অরণ্যকে

তেমনি ক’রে তোমায় আমি জানি।…’

সঙ্গীর বিষয়ে এতটুকু যদি নিশ্চিত হতে পারেন, তবে সামনে এগোনোই যায়। হয়তো তার মনের গহিন অরণ্যে ঝড় হওয়ার বা তোলার যোগ্য মানুষটি আপনিই।

তথ্যসূত্র: হাফপোস্ট, কসমোপলিটান ডটকম, টাইমস অব ইন্ডিয়া, সাইকোলজি টুডে ও ফেমিনা ডট ইন