নগরে চলছে বৃক্ষমেলা

নজর কাড়ছে লাখ টাকার শ্বেতচন্দনগাছ

চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে বৃক্ষমেলার একটি স্টলে টবে লাগানো নজরকাড়া রঙ্গন ফুল l সৌরভ দাশ
চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে বৃক্ষমেলার একটি স্টলে টবে লাগানো নজরকাড়া রঙ্গন ফুল l সৌরভ দাশ

গাছের দাম ১ লাখ ২০ হাজার টাকা! দাম শুনে হঁা! হয়তো বিশাল কোনো গাছ। মোটেও তা নয়। ছোট ছোট পাতার মাঝারি আকারের শ্বেতচন্দনগাছ এটি। দেখা পাওয়া গেল চট্টগ্রামের আউটার স্টেডিয়ামের মাঠে আয়োজিত বৃক্ষমেলায়। এ বছর আয়োজিত বৃক্ষমেলার সবচেয়ে দামি এ গাছটি রয়েছে বাহাদুর নার্সারির স্টলে।
স্টলের ব্যবস্থাপক আবদুল আলীম জানালেন, এবারের মেলায় সবার দৃষ্টি এই শ্বেতচন্দনগাছটির দিকে। সে কারণে এর চারা বিক্রির পরিমাণ বেশি। এ গাছের চারা পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকায়।
প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে বনায়নের ভূমিকা সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করে তোলা এবং বৃক্ষরোপণে আগ্রহ সৃষ্টির লক্ষ্যে এ বৃক্ষমেলার আয়োজন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। গত ২৫ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ১৫ দিনব্যাপী মেলা চলবে ৯ আগস্ট পর্যন্ত। তবে মেলার সময় আরও পাঁচ দিন বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে বলে মেলার তথ্যকেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান। মেলায় অংশ নিয়েছে ১৬টি প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।

দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দামের এই শ্বেতচন্দনগাছটি l প্রথম আলো

গাছের গায়ে নাম লেখা ‘লাইলী-মজনু’। একই অঙ্গে দুই রূপ। মাঝারি আকারের টবে লাগানো এই গাছটি রয়েছে কসমো নার্সারির স্টলে। স্টলের মালিক মো. আবু নাঈম জানালেন, থাইল্যান্ড থেকে আনা হয়েছে এই গাছটি। এর এমন অভিনব নামকরণের কারণ হলো গাছটির পাতা। লম্বা ডাঁটার সঙ্গে বিপরীত বিন্যাসে সাজানো ডিম্বাকৃতির মসৃণ পাতাগুলোর ওপরের রং টিয়ে পাখির পালকের মতো সবুজ। কিন্তু উল্টোপিঠ উজ্জ্বল বেগুনি। সবুজ-বেগুনি পাতার জন্যই গাছটিকে দেখায় চমৎকার।
ইয়া মোটা হয়ে গুঁড়িতে পানি জমিয়ে রাখে, এমন গাছের নাম ‘বাওবাব ট্রি’। আবার দেখতে কলার মতো, খেলে আমের স্বাদ। এমন ফলও রয়েছে নাম ‘ব্যানানা-ম্যাঙ্গো’। পাশের আরেকটি স্টলে দেখা মেলে একটি ছোট ঔষধি গাছ ‘হাড়জোড়া’। পাতাগুলো জোড়া দেওয়া হাড়ের মতো। এসব গাছের মতো মেলায় স্থান পেয়েছে নানা ধরনের ফলদ, বনজ, ঔষধি ও সৌন্দর্য বর্ধনকারী গাছ।
বিক্রেতারা জানালেন, ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ছাদে বড় টবে বা ড্রামে লাগানো যায় এমন চারা মেলায় বেশি রয়েছে। এ ছাড়া ক্যাকটাস, অর্কিড, নানা জাতের পাতাবাহার ও ফুলের চারার চাহিদাও প্রচুর। ফ্ল্যাটের বারান্দায় বা ড্রয়িংরুমে টবে এগুলো লাগানো যায়। তাতে বাগান করার শখও মেটে, গৃহসজ্জাতেও বৈচিত্র্য আসে।
মেলায় বিভিন্ন জাতের ক্যাকটাস, ভেন্ডা, কামপারা এসব অর্কিডের বিস্তর ছোটবড় চারা রয়েছে। দাম সর্বনিম্ম ৫০ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া রয়েছে ফুলের চারার চাহিদা। মেলার বিভিন্ন স্টলে স্থান পেয়েছে প্রায় ২০০ জাতের ফুল। মানভেদে বিভিন্ন ফুল গাছের চারা কিনতে গুনতে হবে ৫০ থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে বৃক্ষমেলায় ছোটবড় সবারই দৃষ্টি কেড়ে নেয় আমগাছগুলো।
গত মঙ্গলবার মেলায় কথা হয় ... সানজিদা পারভীনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখানকার প্রতিটি স্টলেই আছে টবে লাগানো নানা জাতের আমগাছ। বাড়ির ছাদে বাগান করার জন্য আম্রপালি, পালমার, হিমসাগরসহ কয়েক জাতের আম আর লিচুর চারা কিনেছি আমি।’
কনকর্ড এগ্রো নার্সারির তত্ত্বাবধায়ক ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘বিভিন্ন জাতের আমের মধ্যে গোপালভোগ, পালমার, আম্রপালি, কোহিতুর, মল্লিকা এসব জাতের আমের চাহিদা বেশি।’ এসবের পাশাপাশি মেলায় নানা ধরনের বিদেশি ফলের গাছের প্রতিও আগ্রহ দেখা গেল অনেকের। তবে টানা বৃষ্টিতে এ বছর বৃক্ষমেলায় বিকিকিনি কম হয়েছে বলে জানালেন বিক্রেতারা।