
১০ বছর আগে যখন এসেছিলাম তখন কোনো রাস্তা ছিল না এখানে, কোনো যানবাহনও ছিল না, এবার পেলাম রিকশা আর মোটরসাইকেল। আমরা মোটরসাইকেলে চড়ে রওনা দিলাম নামার বাজারের দিকে। যতই সামনে এগোচ্ছি জঙ্গল ততই কাছে এগিয়ে আসছে, একসময় চেয়ে দেখি সামনের রাস্তাটা দুই ভাগ হয়ে জঙ্গলের মধ্যে হারিয়ে গেছে। যেতে হবে এখন এই জঙ্গলের মধ্য দিয়েই! আমাদের তখন দম বন্ধ করা উচ্ছ্বাস, সাঁই সাঁই করে মোটরসাইকেল ছুটছে, এখানেই বিকেলে হরিণের দল ঘুরতে আসে। বনের মোহ কাটিয়ে একসময় আমরা পৌঁছে গেলাম নামার বাজারে, এখানে একটা রিসোর্টে আমাদের রাতে থাকার পরিকল্পনা ছিল। রাতটি ছিল আবার আধা পূর্ণিমা, পড়িমরি করে তাই ছুটলাম নিঝুম দ্বীপের সৈকতে। সাদাটে রুপালি অর্ধেক চাঁদের আলো যে এতটা সুন্দর হতে পারে, তা হয়তো নিঝুম দ্বীপে না গেলে বুঝতাম না। সাগরের ছুটে আসা এলোমেলো ঢেউও টলতে টলতে সাদা বালুর ওপর আছড়ে পড়ছে চাঁদের আলো। একটানা শোঁ শোঁ বাতাসকে কাঁচকলা দেখিয়ে দিব্বি অলস হয়ে শুয়ে আছে বালুর পাহাড়। সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত ছিলাম রুপোর সৈকতে।
পরদিন সকালে ৬০০ টাকা দিয়ে একটা নৌকা ঠিক করে ফেললাম। চুক্তি হলো আমাদের বনের ভেতরে ঘুরিয়ে আনা আর হরিণ দেখানো হবে। সবাই মিলে উঠলাম নৌকায়। খাল ছাড়িয়ে, নদী পেরিয়ে, সাগর মাড়িয়ে নৌকা আমাদের নিয়ে চলল বনের গভীর থেকে আরও গভীরে, গহিন থেকে গহিনে। একসময় থামল আমাদের জলগাড়ি। এখানেই নাকি হরিণ দেখা যায়। আমরা খুব সতর্ক, চলাফেরা নেই কারও। দেখে মনে হবে আরও কয়েকটা নতুন গাছ বুঝি জন্ম নিল এইমাত্র! একপাল হরিণের দেখা পেলাম বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই, তাদের পিছু যেতে যেতেই দেখলাম সামনে এক বিশাল পুকুর, হরিণরা এখানে পানি খেতে আসে। সেখানে পাওয়া গেল আরেক দলকে, শিং উঁচিয়ে খুব সতর্ক চোখে আমাদের দিকে নজর রাখছে তারা।
এই বনে সরকারি হিসাবে প্রায় ৪০ হাজারের মতো হরিণ আছে, কাজেই যে কেউ চাইলেই এখানে হরিণ দেখতে পাবেন।
ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে হাতিয়া চলে যাবেন। প্রতিদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটায় একটা করে লঞ্চ ছাড়ে হাতিয়ার উদ্দেশে, সেটা সকাল আটটায় তমরদি ঘাটে পৌঁছায়। এখান থেকে একটা ট্রলার ভাড়া করে সোজা নিঝুম দ্বীপে চলে যেতে পারেন অথবা একটা বেবিট্যাক্সি নিয়ে জাহাজমারা ঘাট পর্যন্ত যেতে হবে, সেখান থেকে নৌকা নিয়ে নিঝুম দ্বীপ। সব মিলিয়ে নিঝুম দ্বীপ ঘুরে আসার জন্য তিন-চার দিন সময় হাতে রাখতে হবে।