নীল নদ কি শুকিয়ে যাবে?

নীল নদ
নীল নদ

শ্রমিকেরা ভীষণ ব্যস্ত৷ কেউ ইট গাঁথছেন৷ কেউ মাথায় করে সিমেন্টের বস্তা বয়ে আনছেন৷ কেউ আনছেন বালু৷ তাঁরা সবাই ব্যস্ত নীল নদের ওপর বিশাল এক বাঁধ নির্মাণের কাজে৷ দিন-রাত কাজ করছেন প্রায় সাড়ে আট হাজার শ্রমিক৷ মিসরের কড়া বিরোধিতা সত্ত্বেও গ্র্যান্ড রেনেসাঁ ড্যাম বা জিইআরডি নামের এই বাঁধ নির্মাণ করছে ইথিওপিয়া৷
পুরো প্রকল্পটির বিস্তার এক হাজার ৮০০ বর্গকিলোমিটার৷ সম্পূর্ণ হলে এটি হবে আফ্রিকার সবচেয়ে বড় (৫৫৮ ফুট উঁচু) জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ৷ এই নির্মাণকাজের ব্যয়ও অনেক৷ ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের প্রকল্পটির তহবিল জোগান আসছে ইথিওপিয়ার ঋণপত্র (বন্ড) ও করদাতাদের কাছ থেকে৷
বাঁধটির অবস্থান রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সুদান সীমান্তের কাছাকাছি বেনিশাঙ্গুল অঞ্চলে৷ সেখানে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছায়৷ বাঁধ নির্মাণের জন্য আশপাশের অধিকাংশ গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে৷ সেখানকার আকাশ-বাতাস এখন ধুলাবালুতে আচ্ছন্ন হয়ে আছে৷
নির্মাতারা গত বছরের মে মাসে নীল নদের গতিপথ পাল্টে দিয়ে তাঁদের প্রথম মাইলফলক অর্জন করেন৷ আগে যেটা ছিল নদীগর্ভ, এখন সেখানে রয়েছে কয়েক স্তরের কংক্রিট৷ বাঁধের একটি অংশ থাকবে এখানেই৷

নীল নদের স্রোত যেদিকে প্রবাহিত হচ্ছে, সেই দিকে মিসরের অবস্থান৷ পানির জন্য ওই নদের ওপর দেশটি প্রায় সম্পূর্ণ নির্ভরশীল৷ ইথিওপিয়ায় বাঁধ নির্মাণের ফলে মিসরে পানির সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছে সে দেশের সরকার৷

মিসর ও সুদান ঔপনিবেশিক যুগের একাধিক চুক্তির ভিত্তিতে নীল নদের পানি নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়৷ ইথিওপিয়ার প্রকল্পে সুদানের সমর্থন থাকলেও মিসরের তীব্র বিরোধিতা রয়েছে৷ এ বিষয়ে মিসর ও ইথিওপিয়ার মধ্যে সংলাপের উদ্যোগ ভেস্তে গেছে৷

ইথিওপিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আমব দিনা মুফতি বলেন, বাঁধটি নির্মিত হলে সবাই লাভবান হবে৷ সুদান ইতিমধ্যে বিষয়টি উপলব্ধি করেছে৷ আশা করা যায়, মিসরও বিষয়টি বুঝবে৷

নীল নদের ওপর কর্তৃত্বের ওপর হুমকির বিষয়টি মিসরের উদ্বেগের একটি কারণ৷ তাদের ভয় হলো, ইথিওপিয়ার বাঁধটি কৌশলগত পানিপ্রবাহের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে৷ নীল নদের পানিই মিসরের পানির একমাত্র উৎস৷ কারণ দেশটিতে বৃষ্টিপাত হয় খুবই কম৷ বাঁধ নির্মাণ নিয়ে বিতর্কের শুরু হয় ২০১১ সালে৷ নীল নদের পানির বার্ষিক নির্ধারিত অংশ (কোটা) কমে যেতে পারে-এমন আশঙ্কায় চিন্তিত ছিল কায়রোর কর্তৃপক্ষ৷ বিরোধটি এমন এক সময়ে দেখা দিল, যখন মিসর ইতিমধ্যে পানি সংকটে ভুগছে৷ নীল নদের উত্তর দ্বীপে যে স্থানটি মিসরের কৃষিকেন্দ্র বলে পরিচিত, সেখানকার বহু কৃষক আগামী গ্রীষ্মে চাষাবাদ করবেন৷ হাফিজা নামের একজন কৃষক বলেন, ‘পানিপ্রবাহ কমে এলে আমরা মরে যাব৷ বেঁচে থাকতে পারব না৷’

ইথিওপিয়া দাবি করছে, তাদের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নীল নদের ভাটির অঞ্চলের কোনো দেশের (মিসর ও সুদান) ওপরই নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না৷ তবু মিসর এ ব্যাপারে অত্যন্ত সন্দিহান৷ দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বদর আবদেলাত্তি বলেন, এটি জীবন-মৃত্যুর প্রশ্ন৷ জাতীয় নিরাপত্তাসংশি­ষ্ট একটি বিষয়ে কখনোই আপস করা যায় না৷

জিইআরডির প্রায় ৩০ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে৷ মিসর এ ব্যাপারে অবগত রয়েছে৷ তবে তারা পরবর্তী সময়ে কী পদক্ষেপ নেবে, সে সম্পর্কে ইথিওপিয়ার ধারণা এখনো অস্পষ্ট৷

আশিস আচার্য, সূত্র: বিবিসি