পরিবেশের ছবি, জীবনের ছবি

জাল দেখা। ভিয়েতনাম, ২০১৪। আলোকচিত্রী: হোয়াং লং লি, ভিয়েতনাম। ছবি: হোয়াং লং লি/দ্য অ্যাটকিনস সিআইডব্লিউইএম এনভায়রনমেন্টাল ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার
জাল দেখা। ভিয়েতনাম, ২০১৪। আলোকচিত্রী: হোয়াং লং লি, ভিয়েতনাম। ছবি: হোয়াং লং লি/দ্য অ্যাটকিনস সিআইডব্লিউইএম এনভায়রনমেন্টাল ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার

দুনিয়ায় যেন চোখের সামনেই কেয়ামত শুরু হয়ে গেল। নেপালের ভূমিকম্পে মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ভারতে দাবদাহে পুড়ে মারা যাচ্ছে শত শত মানুষ। এবার জাপানে সুনামি হচ্ছে তো সেবার নাইজেরিয়া আর বাংলাদেশে বন্যা। কাল যেখানে সবুজের ঢেউখেলানো ধানের খেত ছিল আজ সেখানে নোনাজলে ডোবা ঊষর জমিন। আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবসে পরিবেশ ও জীবনের ছবির খবর নিয়ে এই প্রতিবেদন।

জোয়ার-বন্যায় জীবন-৩। চট্টগ্রাম, ২০১৪। বন্যায় আক্রান্ত একটি পরিবারের সদস্যরা টেলিভিশন দেখছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে চট্টগ্রাম উপকূলের নানা আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় এমন জোয়ার-বন্যা দিন দিন সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠছে। আলোকচিত্রী: জসিম সালাম, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ। ছবি:জসিম সালাম/দ্য অ্যাটকিনস সিআইডব্লিউইএম এনভায়রনমেন্টাল ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার

প্রশান্তের তীর থেকে আটলান্টিকের তীর পর্যন্ত ফি বছরই একের পর এক দুর্যোগে খাবি খাচ্ছে মানুষ। কিন্তু আমরা যেন পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়গুলো ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারি না। আমরা সাধারণভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে অভিহিত করলেও এসব দুর্যোগ ত্বরান্বিত করায় মানুষের ভূমিকা নিয়ে খুব একটা কথা বলি না। কিন্তু চোখকে ফাঁকি দেওয়া যায় না! শিল্পীরা দারুণভাবে এই কাজটি করতে পারেন। শিল্পীর চোখ এমন সব দৃশ্যকে ফ্রেমবন্দি করে ফেলে যা কোনোভাবেই পাশ কাটিয়ে যাওয়া যায় না।

কাঁকড়া সংগ্রহ। সাতক্ষীরা, ২০১৪। লবণাক্ততায় উর্বরা শক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এমন জমিতে চাষাবাদ সম্ভব হয় না। ফলে অনেককেই বিকল্প পেশা বেছে নিতে হয়। আলোকচিত্রী: কাজী রিয়াসাত আলভী, বাংলাদেশ। ছবি: কাজী রিয়াসাত আলভী/দ্য অ্যাটকিনস সিআইডব্লিউইএম এনভায়রনমেন্টাল ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার

আকস্মিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ই হোক কিংবা দীর্ঘ বঞ্চনায় সামাজিক বৈষম্যের প্রতিদিনের কোনো আটপৌরে দৃশ্য, কখনো কখনো কোনো কোনো ছবি থেকে চোখ ফেরানো যায় না। একটা মরুঝড় কিংবা প্রাণঘাতী সাইক্লোনের একটা মুহূর্তও দারুণ সুন্দর হতে পারে। এ কারণেই বোধ হয় ‘ভয়ংকর সুন্দর’ বলে একটা কথা প্রচলিত আছে। দেখতে খুবই সুন্দর হলেও এমন কোনো কোনো দৃশ্যের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে মানবতার চরম বিপর্যয়ের কথা। আবার দেখতে গা শিউরে ওঠা কোনো দৃশ্যের মধ্যেও থাকতে পারে জীবনের জয়গানের অনন্য কোনো বার্তা। আলোকচিত্রীরা, চলচ্চিত্র নির্মাতারা আমাদের তেমন সব দৃশ্যের মুখোমুখি করে দিতে পারেন।

প্লাস্টিক গাছ#২০। বলিভিয়া, ২০১৪। বলিভিয়ার মালভূমিতে প্লাস্টিক ব্যাগ যেন নিসর্গের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। এই প্লাস্টিকের ব্যাগ কৃষি জমির ক্ষতির পাশাপাশি গৃহপালিত ও বন্য প্রাণীর মৃত্যুর সঙ্গেও জড়িয়ে গেছে। আলোকচিত্রী: এডুয়ার্ডো লিয়েল, বলিভিয়া। ছবি: এডুয়ার্ডো লিয়েল/দ্য অ্যাটকিনস সিআইডব্লিউইএম এনভায়রনমেন্টাল ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার

যুক্তরাজ্য ভিত্তিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান চার্টার্ড ইনস্টিটিউশন অব ওয়াটার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট (সিআইডব্লিউইএম) আলোকচিত্রী ও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের তোলা ছবি ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পরিবেশ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করে আসছে। এ লক্ষ্যে ‘দ্য অ্যাটকিনস সিআইডব্লিউইএম এনভায়রনমেন্টাল ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার’ শিরোনামে একটি বার্ষিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।

নগরে মরুঝড়। কুয়েত ২০১১। আলোকচিত্রী: রিজালদে কায়ানান। ছবি: রিজালদে কায়ানান/দ্য অ্যাটকিনস সিআইডব্লিউইএম এনভায়রনমেন্টাল ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার

আগামী ২২ জুন থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত লন্ডনে দ্য রয়্যাল জিওগ্রাফিক সোসাইটিতে বার্ষিক এই প্রতিযোগিতার বাছাইকৃত সেরা কাজগুলোর প্রদর্শনী হবে। ২০১৫ সালের প্রতিযোগিতায় ৬০টি দেশের আলোকচিত্রী ও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রায় ১০ হাজার ছবি থেকে এগুলো বাছাই করা হয়েছে। তবে, প্রদর্শনীতে থাকছে কেবল সেরা বাছাইয়ে স্থান পাওয়া ১১১টি ছবি। এই সেরা বাছাইয়ে আছে বাংলাদেশের আলোকচিত্রীরাও। ২৫ জুন একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে ২০১৫ সালের ‘দ্য অ্যাটকিনস সিআইডব্লিউইএম এনভায়রনমেন্টাল ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার ঘোষণা করা হবে।

নাপিতের দোকান-২। তুরস্ক, ২০১১। আলোকচিত্রী: হয়ারি কোদাল, তুরস্ক। ছবি: হয়ারি কোদাল/দ্য অ্যাটকিনস সিআইডব্লিউইএম এনভায়রনমেন্টাল ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার

পরিবেশ বিষয়ক ফটোগ্রাফির এই প্রতিযোগিতার একটি বৈশিষ্ট্য হলো এতে পেশাদার ও শৌখিন আলোকচিত্রী উভয়ই অংশগ্রহণ করতে পারেন। বয়স সীমার বিচারে দুটি আলাদা শ্রেণি করা হলেও যেকোনো বয়সের প্রতিযোগীই এতে অংশ নিতে পারেন। আয়োজকদের ভাষায়, পরিবেশ ও সামাজিক নানা সমস্যার ছবি তুলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সেসব তুলে ধরার মধ্য দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং সামাজিক বৈষম্য দূর করার চেষ্টাতেই এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়।

রূপের স্যালুন। লাগোস, ২০১৪। লাগোস লেগুনের দূষিত জলের ওপর গড়ে ওঠা মাকাকো বস্তির এক রূপচর্চা স্যালুন। রোববার বা ছুটির দিনগুলোতে নারীদের সাজগোজের জন্য এসব স্যালুনের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। যদিও পুরো মাকাকো বস্তিটাই উচ্ছেদের হুমকির মুখে আছে। আলোকচিত্রী: পেট্টুট কালিনেসকু, নাইজেরিয়া। ছবি: পেট্টুট কালিনেসকু/দ্য অ্যাটকিনস সিআইডব্লিউইএম এনভায়রনমেন্টাল ফটোগ্রাফার অব দ্য ইয়ার