Thank you for trying Sticky AMP!!

পাঁচ পয়সার ডাক্তার

নুরুল ইসলাম সরকার

সকালে ভালো লাগে, না বিকেলে? গরম কেমন লাগে? শীতে খাবার রুচি কেমন থাকে?

এভাবেই রোগীর কাছে বিস্তারিত শোনেন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক নুরুল ইসলাম সরকার। তারপর এক পুরিয়া পাউডারজাতীয় হোমিওপ্যাথিক ওষুধ দেন। ৪৬ বছর আগে এক পুরিয়ার দাম পাঁচ পয়সা নিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। তাই এখনো ‘পাঁচ পয়সার ডাক্তার’ হিসেবে তিনি পরিচিত। অবশ্য বর্তমানে এক পুরিয়ার দাম ৫০ পয়সা থেকে ২০ টাকা নেন তিনি।

গাইবান্ধা জেলা তো বটেই, আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষও তাঁকে এই নামেই চেনেন। পাঁচ পয়সার ডাক্তার হিসেবে সবাই চিনলেও বেশির ভাগ মানুষই তাঁর আসল নাম জানেন না। সেই নামটি নিয়ে নুরুল ইসলাম নিজেও গর্ববোধ করেন।

নুরুল ইসলাম সরকারের জন্ম ১৯২২ সালে। ১৯৫০ সালে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন (বর্তমান এসএসসি) পাস করেন। স্ত্রী জমিলা খাতুন এবং পাঁচ ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার।

গাইবান্ধা শহরের ব্রিজ রোড থেকে পুরান বাজারে ঢুকতেই তাঁর চিকিৎসালয়। মরে যাওয়া ঘাঘট নদের তীরে ছোট টিন ছাওয়া ঘরে রোগী দেখেন। তাঁর চিকিৎসালয়ে গিয়ে দেখা গেল, নারী-পুরুষের উপচে পড়া ভিড়। চিকিৎসক নুরুল ইসলাম কাঠের চেয়ারে বসে রোগের বর্ণনা শুনছেন। বিস্তারিত শোনার পর রোগ নির্ণয় করে ওষুধের নাম লিখছেন। আর তাঁর তিনজন সহকারী দ্রুত পুরিয়া তৈরি করে রোগীর হাতে দিচ্ছেন। এ সময় তাঁকে ঘিরে অন্য লোকজন অপেক্ষা করছেন। হোমিও চিকিৎসার কদর কমলেও দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে প্রতিদিন এমনভাবেই রোগীর চিকিৎসা দিয়ে চলেছেন তিনি।

নুরুলের কাছে চিকিৎসা নিতে আসা সাদুল্যাপুর ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ জহুরুল কাইয়ুম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে তাঁর কাছে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিয়েছি। এর সুফলও পেয়েছি। তাঁর চিকিৎসায় অনেক রোগ নিরাময় হয়। তাই রোগীর ভিড় লেগেই থাকে।’

নুরুল ইসলাম এই পেশার শুরুর গল্প শোনান, ‘১৯৬০ সালের দিকে পারিবারিক প্রয়োজনে শহরের একটি কাপড়ের দোকানে চাকরি নিই। ১৯৬৭ সালে গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হলে চাকরিতে সময় দিতে পারিনি বলে মালিক আমাকে চাকরিচ্যুত করেন। ফলে ১৯৬৮ সাল থেকে হোমিও চিকিৎসা পেশা শুরু করি। হোমিও বিষয়ে আমার কোনো প্রশিক্ষণ নেই। নিজের চেষ্টা ও বই পড়ে শিখেছি।’

নিজের চেষ্টাতেই তিনি এখন হাজারো মানুষের আস্থা।