
ফিফার লিখিত নিয়মের বাইরেও ফুটবলের কিছু অলিখিত নিয়ম আছে, যা ফুটবলাররা প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই মেনে চলেন। নিয়মগুলো জানাচ্ছেন ফুটবল বিশেষ-অজ্ঞ আবদুল্লাহ মামুর
১.
বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়ের ধাক্কা খেয়ে মাঠে পড়ে যেতে পারেন। তড়পাতে পারেন ডাঙায় ওঠা মাছের মতো। কিন্তু যখনই রেফারি ফাউলের বাঁশি বাজাবেন, তখনই তড়াক করে এমনভাবে লাফিয়ে উঠতে হবে যেন কিছুই হয়নি। পায়ে যেন মাছির সঙ্গে ধাক্কা লেগেছিল একটু।
২.
বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে অবৈধভাবে ল্যাং মেরে ফেলে দেওয়ার পর রেফারি ফাউলের বাঁশি বাজাবেন। তখন ফাউল করা খেলোয়াড়কে এমন ভাব ধরতে হবে যেন তিনি স্মার্টফোনে পিঁপড়া মারার গেমে কোনো দিন পিঁপড়াও মারেননি, আর খেলায় জলজ্যান্ত একটা মানুষকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়ার চিন্তা তো তিনি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেন না।
৩.
খেলায় রেফারি সব সময় বিপক্ষ দলের কেনা থাকবেন। রেফারির কোনো সিদ্ধান্ত অপর পক্ষের অনুকূলে যাওয়া মানেই বুঝে নিতে হবে রেফারি সেই দলের কেনা।
৪.
কোনো খেলোয়াড়ের হাতে বল লাগায় রেফারি হ্যান্ডবলের বাঁশি বাজাবেন। হাতে বল লাগা খেলোয়াড়কে এমন ভাব করতে হবে যেন তিনি তো তাঁর হাত খেলার মাঠে নিয়েই আসেননি। বাসায় র্যাপিং করে লাল ফিতা দিয়ে বেঁধে সিন্দুকের ভেতর তালা লাগিয়ে রেখে এসেছেন। হাতে বল লাগা পানির নিচে আগুন ধরানোর মতো অসম্ভব।
৫.
বল মাঠের বাইরে চলে গেলে রেফারির বাঁশি বাজবে। তারপর থ্রো-ইন করার জন্য বল হাতে নিয়ে যদি দেখা যায় সেটা বিপক্ষ দলের পক্ষে, তবে সামনে থাকা বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়ের হাতে বল না দিয়ে উল্টো দিকে ছুড়ে ফেলে দিতে হবে। ফ্রি-কিকের সময়ও একই নিয়ম প্রযোজ্য।
৬.
খেলায় কোনোভাবে গোলে এগিয়ে গেলে ফুটবল নিয়ে আর খেলা ঠিক হবে না। বল পেলেই এদিক-ওদিক দিয়ে মাঠের বাইরে পাঠাতে হবে। বড়রা বলেন, ‘সময় নষ্ট করতে নেই’, এ ক্ষেত্রে বড়দের কথা অমান্য করতে হবে নিষ্ঠার সঙ্গে। প্রয়োজনে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়ের নিশ্বাসের বাতাসেও ছিটকে পড়তে হবে। পড়ে গিয়ে এমন ভান করতে হবে, যেন এইমাত্র হাতে ক্রাশের বিয়ের কার্ড এসে পৌঁছেছে।
৭.
খেলার ৭০ ভাগ সময় পেরিয়ে গেছে। এ সময় গোলে পিছিয়ে থাকলে বদলি খেলোয়াড়কে মাঠে নামতে হবে উসাইন বোল্টের গতিতে। নেমে যাওয়ার খেলোয়াড়কেও মাঠ ছাড়তে হবে সমান গতিতে। আর খেলায় এগিয়ে থাকা দলের খেলোয়াড়কে বদলি করা হলে মাঠ থেকে বের হওয়া ও ঢোকার গতি হবে কচ্ছপের মতো। মাঠ থেকে বেরোনোর আগে দলের সবার সঙ্গে আলাদাভাবে হাত মেলাতে হবে। মাঠের অপর প্রান্তে থাকা বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়ের সঙ্গে আগামী ঈদের কোলাকুলিও সেরে আসা যাবে। মাঠের মধ্যেই বুটের ফিতা খোলা যাবে। আকাশের দিকে তাকিয়ে কয়টা বাজে, সেটাও আন্দাজ করতে পারেন। রেফারির বউ-বাচ্চা কেমন আছে, বাসায় ভাবি কোন সিরিয়াল দেখেন, বাচ্চা-কাচ্চাদের গোল্ডেন এ প্লাস পেতে হলে কোন গাইড পড়তে হবে, সেসব জ্ঞানও দিয়ে আসা যায়। তারপর মাঠ ছাড়তে হবে হেলেদুলে গদাইলস্করি চালে ঢাকার যানজটে দাঁড়িয়ে থাকা দোতলা বাসের মতো।
৮.
বিপক্ষ দলের ডি-বক্সের ভেতর কোনোভাবে গায়ে বাতাস লাগলে ১০ হাত দূরে ছিটকে পড়তে হবে। রেফারির কাছে আবেদন করতে হবে ফাউল এবং পেনাল্টির জন্য।