
শহুরে জীবনে প্রায় সবাই পেতে চান একটু প্রকৃতির ছোঁয়া। প্রকৃতি পছন্দ করেন, এমন মানুষেরা সময়-সুযোগ পেলেই ঘুরতে বের হয়ে যান। প্রকৃতিতে কিছুদিন থেকে মন সতেজ করে আসেন। তবে এটা অনেক পরিকল্পনার বিষয়। তাৎক্ষণিকভাবেও কিন্তু মনকে সতেজ করে তুলতে পারেন। দূরে যেতে হবে না। বরং তাজা ফুল দিয়ে সাজালে ঘরেই মিলবে প্রশান্তি।
ফুল সাজানো নিয়ে কথা হয় ফ্যাশন হাউজ এবং এর স্বত্বাধিকারী নীলাঞ্জনা চৌধুরীর সেঙ্গ। তিনি জানালেন ১৯৫৮ সালে তৈরি একটি বাড়িতে তাঁরা বসবাস করছেন চার প্রজন্ম ধরে। ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছেন বাড়িটা ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো থাকে। মা, নানি, খালা, ফুপুরা উৎসব অনুষ্ঠানের বাইরেও সাজিয়ে রাখেন বাড়িটা। চমৎকার সাজানো দেখে নীলাঞ্জনা চৌধুরীর মনে গেঁথে গেছে, সুন্দর এ রকমই হয়। এর বাইরে কোনো ভাবনা কাজ করে না। বাড়িতে প্রচুর গাছ থাকায় হাতের কাছের ফুল-পাতা দিয়েই মনের মতো করেই সাজিয়ে নেন বাড়িটা। এ জন্য তাঁদের খুব একটা কষ্ট করতে হয় না। বসার ঘর, শোয়ার ঘর, রান্নাঘর, খাবার টেবিল, ছোটদের ঘর, এমনকি স্নানঘর—সব জায়গাতেই থাকে ফুলের ছোঁয়া। অনুষ্ঠান বা অতিথি আপ্যায়ন ছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই সাজিয়ে নেন ঘরগুলো। দেশীয় ফুলই থাকে বেশি। কাঠগোলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, বাগানবিলাস, রাধাচূড়া, রজনীগন্ধা, দোলনচাঁপা এসব ফুলের সঙ্গে দেখতে ভালো লাগে এমন কিছু পাতা দিয়েই সাজিয়ে ফেলেন ঘর।
ফুল সাজাতে ব্যবহার করেন সিরামিক, কাচ বা মাটির ফুলদানি। কখনো কখনো মাটির মটকাও ব্যবহার করে থাকেন। নীলাঞ্জনা চৌধুরীর মতে ফুল দিয়ে ঘর সাজানো একটি শৌখিন বিষয়। ফলে বিষয়টি এতটাই আপন আর নিজস্ব যে ঘরের যেখানেই, যে কোণেই, যেমন পাত্রেই ফুল দিয়ে সাজাই না কেন, মনে হবে ঘরটা আনন্দে ঝলমল করে উঠছে।
ইনস্টিটিউট অব ইনোভেটিভ ডিজাইনের স্বত্বাধিকারী অন্দর সজ্জাবিদ সাইদা ফজিলাতুন নাজ বলেন, ফুলের কাছে এলেই হৃদয়টা ভরে যায়। সারা দিনের কাজকর্মের ঝক্কি সামলে বাড়ি ফিরে ঘরের ভেতর ফুলের সুগন্ধ পেলে ক্লান্তি, গ্লানি এক নিমেষেই দূর হয়ে যায়। হৃদয় স্নিগ্ধ হয়ে যায়, শান্ত হয়ে ওঠে। এ কারণেই তিনি মনে করেন, ঘরের সাজে ফুলের ব্যবহার ফুটিয়ে তোলে নান্দনিকতা।
ফুল দিয়ে ঘর সাজানোর ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন সাইদা ফজিলাতুন নাজ—
* ফ্যানের নিচে ফুল রাখা উচিত নয়, এতে ফুল নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
* ফুল সাজানোর ক্ষেত্রে এমন একটা জায়গা বেছে নিতে হবে, যেখানে আসা-যাওয়ার পথে ফুল বা ফুলদানিটা ধাক্কা লাগবে না।
* ফুলসহ ফুলদানিটা নির্দিষ্ট জায়গায় রাখার আগে নিচে একটা ম্যাট ব্যবহার করলে ভালো। কখনো ফুলদানিটা উল্টে পড়ে গেলেও পানি পড়ে চারপাশ ভিজে যাবে না।
* জানালার পাশে যেখানে রোদ আসে সেখানে ফুল না সাজানোই ভালো। এতে ফুল তাজা থাকবে।
* বাড়ির আসবাবপত্রের সঙ্গে মিলিয়ে ছোট, বড় বা মাঝারি আকারের ফুলদানি ব্যবহার করা যেতে পারে। নানা রঙের ফুল হলে একরঙা ফুলদানি ব্যবহার করুন।
* একসঙ্গে অনেক ফুল না রেখে অল্প অল্প করে ফুল-পাতা বা ফুল দিয়েই একেকটা ফুলদানি সাজানো ভালো।
* বিভিন্ন উৎসব মাথায় রেখেও ফুল দিয়ে ঘর সাজানো যেতে পারে। পয়লা বৈশাখে সাদা-লালের প্রাধান্য থাকে। এ সময় চারপাশে সাদা ফুল দিয়ে মাঝখানে কয়েকটি লাল রঙের ফুল দিলে ভালো দেখাবে।
* খেয়াল রাখতে হবে ফুল সাজানোর জায়গার আশপাশে যেন অন্য কোনো শোপিস না থাকে। এমন হলে ফুলের সৌন্দর্য খানিকটা ম্লান হয়ে যায়।
* অল্প কাজ আছে, ছিমছাম দেখতে এমন ফুলদানিতেই ফুল সাজালে ভালো হয়। এ ক্ষেত্রে মাটি, বাঁশের তৈরি ফুলদানি বৈচিত্র্য আনবে। এ ছাড়া চিনামাটি, কাচের ফুলদানি তো আছেই। এ ছাড়া ঘরে ফুল সাজানোয় ভিন্নতা আনতে ব্যবহার করতে পারেন কাঁসা, পিতলের পানের বাটা, খাবারের বাটি, সামুদ্রিক বড় বড় শামুক কিংবা ঝিনুক।
বাড়ি কৃতজ্ঞতা: নুরুন্নাহার আবেদিন।