বাবা তোমাকে ভালোবাসি

>আজ বাবা দিবস। পাঠক–বন্ধুসভার সকল বন্ধুর বাবার প্রতি রইল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। বন্ধুরা দিবসটি উপলক্ষে লিখেছেন তাঁদের বাবাকে নিয়ে
অলংকরণ: তুলি
অলংকরণ: তুলি

আমার হিরো
অনিক সাহা
ছোটবেলা থেকে আমার চোখে নায়ক আমার বাবা। যখন ছোট ছিলাম, বাবার অনেক ভঙ্গি আমার মধ্যে চলে আসত। আমার দরজা নক করা, হাঁটাচলার ভঙ্গি বাবার মতোই হতো।
বাবার অনেক কিছুই অনুকরণ করতাম। দুপুরবেলা সবাই যখন ঘুমিয়ে থাকত, তখন আমি একটি ব্যাগে কিছু কাগজপত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি করতাম। তখন মা জিজ্ঞাসা করত, কোথায় যাও? মাকে বলতাম, ‘অফিসের কাজে চুয়াডাঙ্গা যাচ্ছি।’
ছোটবেলায় বাবার কাছে যখন ঘুমাতাম, একটা শান্তির পরশ পেতাম। ঘুমানোর সময় সে যখন হাত দিয়ে শরীর স্পর্শ করত, তখন একটা শান্তির পরশ পেতাম।
জীবনে কখনো কোনো খারাপ কাজে জড়িত হইনি বাবার কারণেই। চিন্তা করি, আমি যদি খারাপ কাজটি করি, তাহলে আমার বাবার সম্মান নষ্ট হবে। বটবৃক্ষের মতো বাবা আমার জীবনে বিরাজমান। বাবা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।

খুঁজি তাকে
জাফরীন আহমেদ
জন্মের পর প্রতিটি শিশু তার মাকে চায়। কিন্তু আমি চাইতাম বাবাকে। আমি যখন কাঁদতাম, বাবাই এসে আমার কান্না থামাত। আমার প্রতিটি ইচ্ছা আর চাওয়া ছিল বাবার কাছেই। আমার অন্যায় আবদারগুলো খুব সহজেই মেনে নিত বাবা। আমার যত রাগ, মান, অভিমান—সব যেন বাবার জন্যই তুলে রাখা। এত কিছুর পরও কখনো একটুও বিরক্ত হতো না মানুষটা। এক কথায়, আমার পৃথিবীজুড়ে বাবাই ছিল। তারপর হঠাৎ একদিন কোথায় যেন হারিয়ে গেল আমার বাবা।
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে আগের মতো বাবাকে ডাকি। এদিক-সেদিক বাবাকে ডাকতে ডাকতে বাড়িজুড়ে বাবাকে খোঁজার ব্যর্থ চেষ্টা করি।
পাশের বাসার বাচ্চা মেয়েটা রোজ সকালে তার বাবার হাত ধরে স্কুলে যায়। আমি শুধুই দূর থেকে তাকিয়ে দেখি। ভীষণ হিংসা হয় বাচ্চাটাকে। আর ভাবি, বাবা এই অসময়ে এমন ফাঁকি না দিলেও তো পারত।

আত্মার সম্পর্ক
আশেকুর রহমান

মা-বাবা কেউ বাড়িতে নেই। ঝরঝর করে বৃষ্টি নামছে। পাড়ার বন্ধুরা নেমে পড়েছে মাঠে। বৃষ্টি দিনের এই ফুটবল খেলা মিস করতে চাইনি। আমিও নেমে পড়ি তাদের সঙ্গে। ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলা। দিন শেষে ফুরফুরে মনে বাড়ি ফেরা। রাতের অন্ধকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাড়ছে শরীরের তাপমাত্রা। তীব্র জ্বর। মায়ের হাতের কোমল পরশ আর ডাক্তারের দেওয়া উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। সাত দিন পর ট্রেনিং শেষে রাজশাহী থেকে ফিরলেন বাবা। আমাকে কোলে তুলে নিতেই জ্বর বাষ্প হয়ে উড়ে চলে গেল!
একদিন মা বললেন, তুই যেন বাড়তি চিন্তা না করিস, তাই তোকে বলা হয়নি। বেশ কয়েক দিন হলো তোর বাবার জ্বর, ছাড়ছে না কিছুতেই। ডাক্তারের ওষুধে কাজ হচ্ছে না। এবার আমিই বাবার মাথায় পানি ঢালা শুরু করলাম। পানি দিয়ে পুরো শরীর মুছে ফেললাম। বাবা আস্তে আস্তে কথা বলছেন। আমি বাজার থেকে আনারস নিয়ে এসে দেখি বাবা পুরোপুরি সুস্থ, হাঁটাহাঁটি করছেন। এই হলো বাবার সঙ্গে আমার আত্মার সম্পর্ক।

নিজ হাতে সামলেছেন
সুশান্ত পোদ্দার
মাকে হারিয়েছি খুব অল্প বয়সেই। আত্মীয়স্বজনদের জোর অনুরোধ সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিয়েতে রাজি হননি বাবা। দুই ভাই আর এক বোন লালন করার যৌথ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন বাবা। নিজের সুখ কিংবা জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখতে চেয়েছেন আমাদের মধ্যে। তাই নিজ হাতে সামলেছেন সন্তানের প্রতি মা এবং বাবা উভয়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য। নিজের হাতে যেমনি গোসল করিয়েছেন; তেমনি নিজ হাতে রান্না করে খাইয়ে দিয়েছেন পরম তৃপ্তিতে। পাশাপাশি মায়ের চিকিত্সার দেনা শোধের চাপ সামলাতে গিয়ে নিতে হয়েছে পেশাগত কাজের অত্যধিক চাপ। তবু পিছপা হননি বাবা।
বন্যার পানিতে ভেসে গেছে সব। সন্তানের ক্ষুধার জ্বালা কি মেটাবেন! এমন চিন্তার অস্থির সময়। এমন সময়ের একটি ঘটনা খুব মনে পড়ছে।
শিক্ষাজীবন পাড়ি দিয়ে কাজের অন্বেষণে আজ নোঙর গঁেড়েছি এলাকা থেকে দূরের শহরে। নিজের খেয়ালে ভাসিয়েছি ভেলা নিজের সুখ পিয়াসে। কিন্তু বাবা, আজও শিকড়ের টানে। কাজের ব্যস্ততা আর হয়তো কিছুটা আত্মকেন্দ্রিকতায় আবদ্ধ করে ফেলছি দিনকে দিন নিজেকে। ঠিকমতো বাবার খোঁজ নেওয়াটাও হয়ে ওঠে না!
আজ অন্যায় আর অপরাধের নিয়ন্তা মনে হয় নিজেকে। কালি লেপ্টা এ মনের আনাচে-কানাচে তবু উঁকিবুকি করে বাবার জন্য অপরিসীম ভালোবাসা। হয়তো প্রকাশের আলোকচ্ছটায় ভাস্বর নয়।

ইতি আপনার পুত্র
মাসুম বিল্লাহ
‘আব্বাজান, অনেক কষ্ট দিছি আপনেরে, মাফ কইরা দিয়েন।’ এই কথাটা এখনো কেন আব্বার সামনে গিয়ে বলতে পারলাম না। বলতে পারলে বাপের বুকটা হয়তো একটু হালকা হতো। কারণে-অকারণে বাপের কাছ থেকে অনেক বকা খেয়েছি। আর সন্তানও কম যায়, যাচ্ছেতাই বলেছি বাবাকে। তখন কি আর বুঝতাম, বাবা কী? এখন বুঝি বাবা কাকে বলে! নিজেই এখন একটা মেয়ের বাবা হয়েছি! এখন বেশ বুঝি কেন বাবারা সন্তানকে শাসনে রাখেন, কেন অতিরিক্ত আহ্লাদ দেন না। সন্তানের মঙ্গলের জন্যই বাবারা এমনটি করেন।
আগে মনে হতো সংসারে মা-ই সব, বাবাকে গোনায়ই ধরতাম না। এখন বুঝি, একজন বাবা তাঁর সংসার-সন্তান কীভাবে সামাল দিয়ে যান গোটা জীবন, যার ঋণ শোধরানোর মতো সময় ও সুযোগ প্রকৃতি আমাদের দেয় না। উল্টোও হয়, আমরা দেখি বৃদ্ধ বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসে তার গুণধর ছেলে।