স্বাস্থ্য

বাড়িতেই ব্যায়াম

সময় করে বাড়িতেই ব্যায়াম করতে পারেন। মডেল: ইন্দ্রানী, ছবি: নকশা
সময় করে বাড়িতেই ব্যায়াম করতে পারেন। মডেল: ইন্দ্রানী, ছবি: নকশা

দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততার ফাঁকে যাঁদের ব্যায়ামাগারে গিয়ে শরীরচর্চা করার ফুরসত মেলে না, তাঁরা বাড়িতেও করতে পারেন এ কাজটি। শরীরটাকে সুস্থ রাখতে মনের ইচ্ছাটাই আসল। সুযোগ থাকলে ব্যায়ামাগারের কিছু উপকরণও রাখতে পারেন বাড়িতে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের অধ্যাপক শামসুন নাহার বলেন, সময়ের অভাবে যাঁরা ব্যায়ামাগারে যেতে পারেন না, তাঁরা বাড়ির পাশে খোলা জায়গায় হাঁটতে পারেন। প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট করে সপ্তাহে পাঁচ দিন হাঁটুন। ৩০-৪০ মিনিট জোরে হাঁটলেই ২০০-৩০০ ক্যালরি খরচ করা সম্ভব।
এ ছাড়া বাড়িতে ট্রেডমিল বা সাইক্লিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। শামসুন নাহার বলেন, এগুলোতে ব্যায়াম শুরু করার আগে খেয়াল রাখতে হবে কোমর বা হাঁটুতে ব্যথা আছে কি না। কোমরে ব্যথা থাকলে এগুলোর সাহায্যে ব্যায়াম করার সময় লাম্বার করসেট আর হাঁটুতে ব্যথা থাকলে নি ক্যাপ ব্যবহার করতে হবে। লাম্বার করসেট আর নি ক্যাপ পাবেন ওষুধের দোকানেই। সুযোগ পেলে সাঁতার কাটুন, এটিই সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম।
ব্যায়ামের সহায়ক যন্ত্রপাতি বাড়িতে রাখার জায়গা না পেলে করতে পারেন অ্যারোবিক এক্সারসাইজ। কোনো যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই এ ধরনের ব্যায়াম করতে পারবেন। জেনে নিন এমন কিছু ব্যায়ামের পদ্ধতি—
* দুই হাত প্রসারিত করুন দুই পাশে। আবার নিয়ে আসুন স্বাভাবিক অবস্থায়। এভাবে কিছু সময় ব্যায়ামটি করুন।
* দুই হাত সম্পূর্ণভাবে ওপরে ওঠান। আবার নিয়ে আসুন স্বাভাবিক অবস্থায়। এভাবে এই ব্যায়ামটি করুন কিছুটা সময়।
* তলপেটের মেদ কমানোর জন্য শোয়া অবস্থায় পা উঠিয়ে-নামিয়ে ব্যায়াম করতে পারেন।
পারসোনা হেলথের প্রধান প্রশিক্ষক ফারজানা খানম জানালেন, সুযোগ থাকলে বাড়িতে ট্রেডমিল রাখা যেতে পারে। এরপর চাইলে সাইক্লিং আর ক্রস ট্রেইনারের ব্যবস্থা করা যেতে পারে, তবে একটি যন্ত্র রাখতে চাইলে ট্রেডমিল রাখাই ভালো।
ব্যায়াম শুরু করার সময় পাঁচ মিনিট জগিং করে নিয়ে হালকা গতিতে ব্যায়াম শুরুর পরামর্শ দিলেন তিনি। গা গরমের পর্ব সেরে কিছুক্ষণ ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করুন, দাঁড়িয়ে স্ট্রেচিং করুন। স্ট্রেচিং করার মানেই হলো শরীরটাকে একটু টান টান করা। তারপর শুরু করুন ট্রেডমিলে হাঁটা।
ট্রেডমিলে প্রথম পাঁচ থেকে আট মিনিট ধীরগতিতেই হাঁটুন। এরপর ধীরে ধীরে গতি বাড়ান। সর্বোচ্চ যে গতিতে আপনি চলছেন, সেই গতিটিকে ব্যায়ামের শেষ অংশে একটু একটু করে কমিয়ে এনে একেবারে শূন্যতে নামিয়ে আনতে হবে। অর্থাৎ শেষ দু-এক মিনিটে গতি কমিয়ে আনা হবে অনেকটাই।
জেনে নিন তাঁর আরও পরামর্শ—
* একটি ব্যায়াম করার পর আরেকটি শুরু করার আগে দু-এক মিনিট বিশ্রাম নিন।
* ট্রেডমিলে ৩০-৪০ মিনিট সময় দিতে পারেন। খেয়াল রাখুন, সময়টা যেন ৪৫ মিনিট ছাড়িয়ে না যায়। ট্রেডমিলের পর ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়ামও করতে পারেন।
* একাধিক যন্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ভিন্নভাবে যন্ত্রগুলো ব্যবহারের চেষ্টা করুন। যেমন, একদিন ৪৫ মিনিট ট্রেডমিলে সময় দিলে পরদিন ৩০ মিনিট ট্রেডমিল আর ৩০ মিনিট ক্রস ট্রেইনারে সময় দিন। এর পরদিন তিনটি যন্ত্রে ২০ মিনিট করে মোট এক ঘণ্টা সময় দিতে পারেন। প্রতিদিন তিনটি যন্ত্র ব্যবহার করা ঠিক নয়।
* যেকোনো যন্ত্র ব্যবহারের সময়ই খেয়াল রাখুন যেন প্রথমে ধীর গতিতে কাজটি শুরু করা হয়। ধীরে ধীরে গতি বাড়িয়ে সর্বোচ্চ গতিতে পৌঁছে আবার ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে আনুন।
* এই যন্ত্রগুলো ছাড়া অন্যান্য যন্ত্র, যেমন টোনিং এক্সারসাইজ করার যন্ত্র বাড়িতে ব্যবহার না করাই ভালো।
* ম্যানুয়াল ট্রেডমিলে নিজের পায়ের সাহায্যে ঠেলে নিতে হয় বেল্টটিকে। এভাবে দীর্ঘদিন ব্যায়াম করলে সুস্থ ব্যক্তিরও হাঁটুব্যথা হয়ে যেতে পারে। তাই বিদ্যুৎ-চালিত ট্রেডমিল কেনাই ভালো।
* ট্রেডমিলের ঠিক মাঝখানে উঠে গিয়ে যন্ত্রটি চালু করা ঠিক নয়। দুই পাশে পা রেখে দাঁড়িয়ে চালু করুন ট্রেডমিল। যন্ত্রটি চলতে শুরু করার পর মাঝখানে আসুন।
* ট্রেডমিলের বেল্টে কোনো কিছু পড়ে গেলে সেটি ভেতরের দিকে চলে যেতে থাকে। তাই টিস্যু পেপার বা রুমাল নিয়ে ট্রেডমিলে উঠবেন না। বেল্টে কখনো হাত দেওয়াও ঠিক নয়।
* চলন্ত ট্রেডমিল থেকে নামতে গেলে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। তাই ট্রেডমিল পুরোপুরি থামিয়ে তারপর সেটি থেকে নামুন।
* সাইক্লিং বা ক্রস ট্রেইনারের ক্ষেত্রেও ব্যায়াম শুরুর আগেই সঠিক অবস্থানে থাকা উচিত।
ব্যায়ামের শুরুতে যেমন গা গরম করা জরুরি, ঠিক তেমনি ব্যায়ামের শেষে কুল ডাউন করাটাও প্রয়োজন। গা গরম বা ওয়ার্ম আপের চেয়ে কিছুটা বেশি সময় নিয়ে স্ট্রেচিং এক্সারসাইজগুলো করুন। শুয়ে থেকে হাত-পা টান টান করে কুল ডাউন করুন। এর ফলে মাংসপেশি ব্যথা বা পেশির জড়তা দূর হবে, রক্তচাপ এবং শ্বাস-প্রশ্বাসও স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
* উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদ্রোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম করা উচিত।
যেকোনো অসুবিধায় ব্যায়ামের প্রশিক্ষকদের পরামর্শ নিন।
বাহুর মেদ কমাতে কাজে লাগবে এক জোড়া ডাম্বল। এ ক্ষেত্রে মূল ব্যায়ামগুলো হলো—বাইসেপস কার্ল, ট্রাইসেপস এক্সটেনশন ও ট্রাইসেপস পুল-ওভার। মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রতিটি ডাম্বলের ওজন দু-তিন কেজির বেশি না হওয়াই ভালো—এমনটাই জানালেন ফারজানা খানম। ডাম্বল না থাকলে দুই লিটারের পানির বোতলে পানি ভরে নিয়েও কাজ চালাতে পারেন।
ঢাকার তেজগাঁওয়ের গুলশান লিংক রোড, গুলশান ডিসিসি মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্স, স্টেডিয়াম মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে পাবেন প্রয়োজনীয় যন্ত্রগুলোর খোঁজ। এ ছাড়া অন্যান্য স্পোর্টস শপেও খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন। ঢাকার গুলশান লিংক রোডের ভিআইপি স্পোর্টস অ্যান্ড ফিটনেসের ব্যবস্থাপক মো. মোতালেব খান জানালেন, বাসায় ব্যবহারের উপযোগী বিদ্যুৎ-চালিত ট্রেডমিলের দাম পড়বে ৩৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ৯০০০ থেকে ২৫০০০ টাকায় মিলবে সাইকেল। ক্রস ট্রেইনারের দাম পড়বে ৮৫০০-৮৫০০০ টাকা। লোহার তৈরি রাবার-কোটেড ডাম্বলের দাম পড়বে প্রতি কেজি ২০০ টাকা করে। এ ছাড়া মেটাল স্টিকের সঙ্গে সুবিধামতো ওজনের মেটাল প্লেট লাগিয়েও ব্যবহার করা যেতে পারে। স্টিকের দাম পড়বে ৫০০ টাকা, মেটাল প্লেট পাবেন প্রতি কেজি ১০০ টাকা করে।
স্পোর্টেক বা স্ট্রেংথ মাস্টারের মতো ব্র্যান্ডের পণ্য কিনতে হলে খরচ পড়বে একটু বেশি। গুলশান লিংক রোডের স্পোর্টস স্টার, গুলশান ডিসিসি মার্কেটের শাহ স্পোর্টস, স্পোর্টস সিটি আর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের গ্যালাক্সি স্পোর্টস ও কোয়ালিটি স্পোর্টসের বিক্রয় সহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ট্রেডমিল পাওয়া যাবে ৩৮ হাজার থেকে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকায়। সাইকেল পাবেন ৭৫০০-৩৫০০০ টাকায়। ক্রস ট্রেইনারের দাম পড়বে ২২ হাজার থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ডাম্বল পাবেন প্রতি কেজি ২৫০ টাকায়। ডাম্বল স্টিকের দাম পড়বে ১২০-৩০০ টাকা, প্লেট পাওয়া যাবে প্রতি কেজি ৯৫-১৮০ টাকায়।