
যেখানেই বাঙালি সেখানেই বাংলা ভাষা ও বাংলা সংস্কৃতি। আর সেই সংস্কৃতির অনিবার্য অংশ দেশি সংস্কৃতি, জনগণের অনুভূতি, আচার-
অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। দীর্ঘ সময় আমার দেশে যাওয়া হয়নি। কত দিন দেখা হয়নি লাল-সবুজের পতাকার দেশ, প্রাণের দেশ, প্রিয় স্বদেশ। তখন মনে হয়, আমার প্রিয় দেশটি সব পারে। পাশ্চাত্যের ব্যস্ত জীবনের মধ্যেও আমার মা, মাটি আর দেশের কথা মন থেকে একটুও বাদ পড়ে না। আমরা যাঁরা প্রবাসী তাঁরা প্রায় সবাই বাঙালিপনার মধ্যে খুঁজে পাই এক অবর্ণনীয় সুখানুভূতি।
বিদেশের মাটিতে বেড়ে উঠছে আমাদের বর্তমান ও নতুন প্রজন্ম। আমাদের চেষ্টা থাকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত রাখা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার। এই অভিপ্রায়ে এখানে বাংলা কমিউনিটি প্রতিষ্ঠা করেছে ‘প্রতিবিম্ব অস্ট্রেলিয়া’ নামে একটি সংগঠন। এই সংগঠন সিডনি ও ক্যানবেরায় প্রথমবারের মতো মঞ্চায়ন করে বাংলাদেশের প্রখ্যাত নাট্যপরিচালক বৃন্দাবন দাস রচিত মাটির টানে ও ভূতের স্বর্গ নামে দুটি মঞ্চ নাটক। সিডনির মারানা অডিটোরিয়ামে নাটক দুটি মঞ্চস্থ হয় ২২ আগস্ট, শুক্রবার। ক্যানবেরায় মঞ্চস্থ হয় ২৩ আগস্ট, শনিবার।
সিডনির বুকে এক টুকরো বাংলায় স্বদেশ থেকে উড়ে আসা অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু, চঞ্চল চৌধুরী ও অভিনেত্রী শাহানাজ খুশি এতে অভিনয় করেন। ভিনদেশি সংস্কৃতির প্রভাবে বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্ম বাংলা ভাষা ও নিজেদের দেশীয় কৃষ্টি-সভ্যতা ভুলে যেতে বসেছে। এ বিষয়টিই এই নাটকে তুলে ধরা হয়েছে। ফজলুর রহমান বাবু, চঞ্চল চৌধুরী ও শাহানাজ খুশি নিজেকে বাংলা সংস্কৃতির ধারক হিসেবে উপস্থাপন করতে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভট ঘটনার জন্ম দেন।
মা, মাটি আর দেশের মানুষ আমার চারপাশে এই অনুভূতিটা যখন আমার সত্তাকে কাঁপিয়ে তোলে ঠিক তখনই দুয়ার খুলে দেখি, কড়া নাড়ছে দেশপ্রেম। মাটির টানে ও ভূতের স্বর্গ নাটকটি আমার মগ্ন চৈতন্যে দেশপ্রেমের শিস দিয়ে গেল!
বাংলাদেশ থেকে আসার আগে কখনোই ভেবে দেখিনি দেশকে কত ভালোবাসি। আসার সময় একটা পতাকাও নিয়ে এসেছিলাম সবার অগোচরে। এখানে এমন কাউকেই পাইনি যে কি না, দেশের কথা ভাবে না। আমি সুখ খুঁজি অনুভূতিতে, ভাবনায়, আমার স্বদেশিদের মাঝে।
শুনেছিলাম, জীবন মানে ‘জী বাংলা’। আমি বলি জীবন মানে ‘জয় বাংলা’!
এটা মনে করেই যথারীতি চিন্তার কালো মেঘ দূর হয়ে সুখের দিগন্তে সূর্যের হাসি দেখা দিল!
হ্যাপি রহমান
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া