বাজার ঘুরে

বিয়ের আমন্ত্রণপত্র

বহু দিনের রীতি। বিয়ের আয়োজনে আমন্ত্রণ জানানো হয় নিমন্ত্রণপত্র দিয়ে। এটি একই সঙ্গে নিমন্ত্রণকর্তার রুচির প্রকাশও ঘটায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকটাই বদলে গেছে আজকের আমন্ত্রণপত্র। কাগজের সঙ্গে কাঠ, বাঁশ এমনকি বেতের দুই-তিন পাতাযুক্ত কার্ড আজকাল জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর আকার এবং রঙেও থাকছে বৈচিত্র্য।

আমন্ত্রণপত্রের রকমফের
উজ্জ্বল কাগজে শুধু বর-কনের পরিচয়ই থাকে না; কার্ডজুড়েই থাকে পথ-ঘাট এবং বিয়ের স্থানের ছবি। খোদাই করে কিংবা রং-তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তোলা হয় এই কারুকার্য। এটি একই সঙ্গে মজার খোরাক জোগাবে, সঙ্গে ভিন্নতা তো রয়েছেই। বাংলাবাজারের শাহিন প্রেসের এনামুল হক বলেন, ‘অনেকে নির্দিষ্ট থিম ধরে কার্ড তৈরি করে নেন। কাগজের পাশাপাশি বাঁশ, কাঠ, কাপড় ইত্যাদি উপকরণও দেখা যায়।’ গ্রিটিংস স্টুডিওর উদ্যোক্তা সায়মন ইমরান জানালেন, ওয়ালনাট ও চেরিগাছের ফেলে দেওয়া কাঠ থেকেও তৈরি করা হচ্ছে বিয়ের আমন্ত্রণপত্র। আর এই পুরো প্রক্রিয়াটিই করা হয় পরিবেশবান্ধব উপায়ে।’

খোদাই করা কার্ড
শক্ত কাগজের ওপর খোদাই করে নকশা, বর-কনের নাম ফুটিয়ে তোলা হয় কার্ডে। এখানে শুধু খামটিই ডিজিটাল প্রিন্ট করিয়ে নিতে হয়।

কাঠ ও বাঁশের তৈরি কার্ড
কাঠ কিংবা বাঁশের তৈরি কার্ডও আমন্ত্রণপত্র হিসেবে দিতে পারেন। এ ধরনের কার্ডের ওপরে এবং নিচের অংশে থাকে কাঠ। বাঁশের সূক্ষ্ম ফালি ফালি অংশও থাকতে পারে এ দুই অংশে। আগেকার দিনে রাজ-রাজড়ার দরবারে যেমন মুড়িয়ে রাখা পত্র দুই দিক থেকে খুলে পড়তে হতো, এই কার্ডও সে ধরনেরই। আমন্ত্রণপত্রের লেখাগুলোও থাকে তেমন ভারিক্কি অক্ষরে।



বিভিন্ন আঁকিবুঁকি
আজকাল মজার একধরনের বিয়ের কার্ড দেখা যাচ্ছে। নিজেদের পছন্দমতো কোনো ক্যারিকেচার, কার্টুন চরিত্র কিংবা সংবাদপত্রের আদলে তৈরি করা হয় এই আমন্ত্রণপত্র। এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নকশা ও ধারণা দিতে হবে আপনার নিজের। হয়তোবা যুগল হিসেবে বর-কনের প্রথম ছবিটিই একটু ক্যারিকেচার আবেশে তৈরি করে নিতে পারেন।

অন্যান্য
এ ছাড়া ছোট চার কোনা আকৃতির বাক্সে কিংবা কোনো উপহারসহ বিয়ের কার্ড পাঠাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বাক্সের রং আর কার্ডের রঙে একটু বৈপরীত্য থাকলে সুন্দর দেখায়। এনামুল হক বলেন, ‘সাধারণত লাল অথবা নীল বাক্সের সঙ্গে সোনালি রঙের কার্ড কিংবা সবুজের সঙ্গে হলুদাভ রঙের বেশ চাহিদা রয়েছে।’

খেয়াল রাখুন
এত শখের কার্ডে যদি কোনো ভুল থেকে যায়, তাহলে সব চেষ্টাই যে বৃথা। তাই এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখুন—
* কার্ডে নাম ও ঠিকানা দেওয়ার সময় যাতে কোনো ভুল না হয়। প্রয়োজনে ভালোমতো যাচাই করে নিন।
* ফরমাশ করার বেশ কিছুদিন পর নিমন্ত্রণপত্র হাতের নাগালে আসে। সেই হিসাব করেই ফরমাশ করুন, যাতে পরে কোনো সমস্যা না হয়।
* বিভিন্ন রং ব্যবহার করতে চাইলে বৈপরীত্য আনুন। যেমন সোনালির ওপর লাল রঙের আভা কিংবা আকাশির মধ্যে রুপালি রং।
* নকশা যাতে খুব ভারী না হয়। কেননা, এতে দৃষ্টিকটু লাগে।
* বিয়ের আবহ ধরে নিমন্ত্রণপত্রের থিম ও রং পছন্দ করুন। বিয়ের কার্ডে একটু উজ্জ্বল রং বেশি চলছে। বউভাত বা পানচিনির জন্য হালকা বেগুনি বা সবুজ রং ভালো দেখাবে।

যেখানে পাবেন
আইডিয়াল প্রোডাক্টস, আজাদ প্রোডাক্টসে বিয়ের অনেক রকমের কার্ড আছে। ঢাকার বাংলাবাজারেই পেয়ে যাবেন বেশ কয়েকটি কার্ডের দোকান। এখানকার শাহিন প্রেস, বাংলাদেশ স্টেশনারি, আলিফ কম্পিউটার অ্যান্ড গ্রাফিকস ডিজাইন, হার্ট সন্স অ্যান্ড কোং, মদিনা কার্ড স্টোরসহ বিভিন্ন দোকান কার্ড তৈরির জন্য বেশ জনপ্রিয়। এ ছাড়া হাতিরপুল, নিউমার্কেট, পল্টন, বায়তুল মোকাররম, মিরপুরেও রয়েছে বিভিন্ন দোকান।
ধানমন্ডির গ্রিটিংস স্টুডিওতে গতানুগতিক ধারার বাইরে আপনি নিজ পছন্দ অনুযায়ী কার্ডের রং ও ধরন ঠিক করতে পারবেন। চাইলে আপনার অতিথিদের জন্য কার্ডের মধ্যে একটি বার্তা লিখে দিতে পারেন।

দরদাম
কার্ডের নকশা ও মোটিফের ওপর নির্ভর করে দরদাম। ছবির ফ্রেমের মতো কার্ডের দাম পড়বে ১৫০ টাকা, এক ভাঁজযুক্ত কার্ড ৫০ থেকে ৭০ টাকা, ট্রেসিং পেপার দিয়ে ঢাকা ১০০ টাকা, ভেলভেট কাপড়ের তৈরি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ফাইল আকৃতির কার্ড ১০০ টাকা। ক্যারিকেচার, বাক্সযুক্ত কার্ড তৈরি করা যাবে ৫০০ থেকে ২০০০ টাকার মধ্যেই। আর কাঠ ও কাগজের সংমিশ্রণে আমন্ত্রণপত্র পাওয়া যাবে ২৫০ থেকে আড়াই হাজার টাকার মধ্যে।