
অন্দরসাজ মানেই খরুচে কাজ। ধারণা পাল্টে গেছে। দেয়াল ও আসবাবে রঙের ছোঁয়া, পুরোনা উপকরণের নতুন ব্যবহার—অন্দরকে করে তুলবে রঙিন ও নান্দনিক। ফ্যাশন ডিজাইনার জাকিয়া ঊর্মি সেভাবেই সাজিয়েছেন তাঁর বাসা।
অন্দরসাজ বিষয়টি এত দিন আমাদের দেশে বেশ ব্যয়সাপেক্ষ বলে ধরে নেওয়া হতো। ইদানীং এ ধারণায় বদল এসেছে। এখন তো ইন্টারনেটের যুগ। মুঠোয় থাকা মুঠোফোনেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে অন্দরসজ্জার নানা সমাধান। এসব তথ্য জেনে নিজের বাসা নিজের মতো করেই সাজাচ্ছেন অনেকে। এতে কমে যাচ্ছে ঘর সাজানোর খরচ।
নতুন কিছু কিনে নয়, বরং ঘরে থাকা কিছু উপকরণ ব্যবহার হচ্ছে ঘর সাজানোয়। এমন ভাবনা আগে হয়তো আসেনি কারও মনে। যেমন কোমল পানীয় বা তেলের ফেলে দেওয়া বোতল, বাসার পুরোনো আসবাব, ভাঙা আয়না, নষ্ট হয়ে যাওয়া বাল্ব, এমনকি অব্যবহৃত পুরোনো শাড়ি ঘর সাজাতে ব্যবহার করা নতুনভাবে, নতুন রূপে। যে কারণে অন্দরে আসছে ভিন্ন রূপ।
মডেল ও ফ্যাশন ডিজাইনার জাকিয়া ঊর্মি এভাবেই ঘরে পড়ে থাকা জিনিস দিয়ে সাজিয়েছেন নিজের বাসাটি। ঢাকার নিকেতন আবাসিক এলাকায় ১ হাজার ২০০ বর্গফুটের যে বাসায় ঊর্মি থাকেন, সেটি বেশ পুরোনো। মেঝেতে মোজাইক। রংচটা দেয়াল আর পুরোনো দরজা সব মিলিয়ে বাসাটি ছিল সাদামাটা। সব সময়ই নিজের জায়গা নিজের মতো সাজাতে ভালোবাসেন জাকিয়া ঊর্মি। মনে করেন খুব কম খরচে ঘর সাজিয়ে তুলতে রঙের কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি জেনে নিতে হবে পুরোনো জিনিসপত্র নতুনভাবে ব্যবহার করার কৌশল।
ঘরের অন্দরসাজে পরিবর্তন আনার জন্য দেয়ালে রঙের ব্যবহার বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যেমন জাকিয়া ঊর্মির বাসার দেয়ালগুলোতে নতুনত্ব আনতে তিনি নিজেই হাতে তুলে নেন রংতুলি। চাইলে আপনিও এমনটা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শুধু পছন্দের রং কিনলেই চলবে। এবার মনের মতো করে রাঙিয়ে নিতে পারেন ঘরের দেয়াল। রঙের স্থায়িত্ব ধরে রাখতে ২৪ ঘণ্টা পর ক্লিয়ার কোটিংয়ের ব্যবহার করতে হবে। একইভাবে ঘরের দরজায়ও এই রঙের ব্যবহার করতে পারেন। ঘরের এই রং নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রথমেই চোখের আরামের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে।
এই বাসায় আসবাবের বাহুল্য খুব একটা নেই। যা আছে তা হলো পুরোনো জিনিসের নতুন রূপে ব্যবহার। যেমন বসার ঘরের কুশন কভারটি। সিল্কের প্যাচওয়ার্কের ওড়না জাকিয়া ঊর্মি কিনেছিলেন ঢাকার নিউমার্কেট থেকে। অনেক দিন ব্যবহারের পর তা অনুপযোগী হয়ে যায়। ‘আসলে ওড়নাটা এত সুন্দর, ফেলতেও চাইছিল না মন। তাই কুশনের কভার হিসেবে ব্যবহার করলাম।’ বলছিলেন জাকিয়া। পুরোনো শাড়ি ঝুলিয়ে দিয়েছেন পর্দা হিসেবে।
বাসায় ফেলে দেওয়া অনেক জিনিসপত্র ঘর সাজানোয় ব্যবহার করা যায়। বিশ্বব্যাপী এখন বেশ জনপ্রিয় পুনর্ব্যবহার বা রিসাইক্লিং বিষয়টি। যেমন তেল আর কোমল পানীয়ের বোতল ফেলে না দিয়ে কাঠে জোড়া লাগিয়ে জাকিয়া ঊর্মি বানিয়েছেন ঘরের গাছ রাখার পট। ‘বাসার সামনে পড়ে ছিল পুরোনো আলমারির দরজার কিছু ভাঙা অংশ। সেগুলোতে রং করি আর কাঠ জুড়ে বানিয়ে ফেলি এই র্যাকগুলো।’ বললেন ঊর্মি। বাসার বারান্দা আর বসার ঘরের দেয়ালে র্যাকগুলো এনেছে ভিন্নমাত্রা। বসার ঘরে যখন নতুন আয়নাটা আনা হচ্ছিল, তখনই ধাক্কা লেগে তা ভেঙে যায়। সেই ভাঙা আয়না ফেলে না দিয়ে তাতে দড়ি বেঁধে ঊর্মি দিয়েছেন নতুন রূপ।
কাঠের আসবাব রং করার চল চলছে এখন। দেয়ালে রং করার মতোই আপনার পছন্দমতো রং করে নিতে পারেন আসবাবে। খুব সহজেই করা যায় এ কাজ। হালকা নীল, টিয়া সবুজ, হলুদ—আসবাবে এ রকম বৈচিত্র্যময় রঙের ব্যবহার ঘরকে অনন্য করে তুলতে বাধ্য।