
গরম পড়েছে। এ সময় পিপাসা লাগে বেশি। আর সামনে তো পয়লা বৈশাখ। গরম হলেও ঘোরাঘুরি তো আর থেমে থাকবে না। শরীর যেন পানিশূন্য না হয়ে যায়, সে জন্য বেশি করে পানীয় খেতে হবে। এ প্রসঙ্গে বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ আখতারুন নাহার বলেন, পয়লা বৈশাখে সারাটা দিনই মূলত বাইরে থাকা হয়। বাইরের খাবার দিয়েই ভূরিভোজ করতে হয়। তবে খাবার খাওয়ার আগে খেয়াল রাখতে হবে, খাবারটি খোলা, পচা-বাসি ও অস্বাস্থ্যকর কি না। সঙ্গে অবশ্যই পানি রাখতে হবে। রাস্তায় ডাব খেতে পারেন।
এই গরমে ঘামে শরীর থেকে প্রচুর লবণ-পানি বের হয়ে যায় বলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। অতিরিক্ত গরমে হিটস্ট্রোকও হতে পারে। এ বিপদ থেকে মুক্ত থাকতে প্রচুর পানি খেতে হবে। তবে এই পানি যেন বিশুদ্ধ হয়। তা না হলে এই পানি থেকে পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই পানির পিপাসা মেটানোর জন্য বাসায় তৈরি ফলের রসও সঙ্গে নিতে পারেন। ভাজা খাবার একদমই এড়িয়ে যেতে হবে। তবে বাচ্চাদের জন্য বাসায় তৈরি খাবার সঙ্গে নিতে পারেন। বাইরের খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। কারণ, এই গরমে খাবার তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।
রাস্তার যেকোনো খোলা খাবার গ্রহণ করবেন না। একটানা না হেঁটে মাঝেমধ্যে একটু বসে নিতে হবে। তাহলে বেশি ক্লান্ত হবেন না।
বাচ্চাদের দিকে বিশেষ নজর
শিশুদের নিয়ে খুব ভিড়ের মধ্যে না যাওয়াই ভালো এবং তাদের সব সময় দেখে রাখতে হবে। বাচ্চাদের অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে তাদের মুখ বা শরীরের অন্য কোথাও বেশি আঁকা বা রং না লাগানোই ভালো, যা চর্মরোগ বা বিভিন্ন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অল্প পরিমাণ লাগালেও তা বাসায় এসে সাবান দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলা উচিত। বাচ্চাদের প্রয়োজনীয় খাবার যেমন: দুধ, পানি ও অন্য কিছু সঙ্গে করে নিতে ভুল করা যাবে না।
বিশেষ করে বাচ্চাদের যতটা সম্ভব কড়া রোদ থেকে নিরাপদে রাখতে হবে। পাখা, ক্যাপ, রোদচশমা নিতে ভুলবেন না!
বাড়ি থেকে ছোট বোতলে পানি নিতে হবে। গরমে ঘেমে শিশুর পানিস্বল্পতা হতে পারে। তাই একটু পর পর পানি খাওয়াতে হবে। ডাবও খাওয়াতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাইরের খাবার শিশুরা যেন না খায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ছয় মাস বয়সের আগ পর্যন্ত নবজাতককে মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। বেশিক্ষণ রোদের মধ্যে নবজাতককে না নেওয়া ভালো।
এক দিনে কত গ্লাস পানি পান?
পানি পান বিষয়টি শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বের হয়ে যাওয়ার ওপর নির্ভর করে। সাধারণত এই গরমে পানি খাওয়া বাড়াতে হবে সবার জন্য। সাধারণত দিনে সাত-আট গ্লাস পানি খাওয়ার কথা থাকলেও এ সময় ১০-১২ গ্লাস পানি খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। বাচ্চাদের জন্য বিশেষ করে সাত-আট বছরের বাচ্চাদের জন্য পাঁচ-ছয় গ্লাস পানি খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পানির পাশাপাশি বাচ্চার জন্য ফলের রস এবং রসাল ধরনের ফল দেওয়া যেতে পারে।
দিন শেষে করণীয়
সারা দিন রোদে ঘুরে বাসায় এসেই ঠান্ডা পানি খাবেন না। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর খাবেন, তাহলে সর্দি বা ঠান্ডা লাগার ভয় থাকবে না।
একটু চিনি-লবণ-লেবুর শরবত খেতে পারেন। একফাঁকে একটু চা খেয়ে নিতে পারেন।
বাইরে থেকে এসে বিভিন্ন ফলের জুস বা লেবুর শরবত খেতে পারেন। এতে শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে বের হয়ে যাওয়া পানির ঘাটতি পূরণ হবে।
সারা দিনই ঘোরাফেরার ফলে শরীরে ব্যথা অনুভব হবে। তাই ফিরে গরম পানি দিয়ে গোসল করলে ব্যথা ও ক্লান্তি অনেকাংশে দূর হয়ে যাবে।
লেখক: চিকিৎসক