ব্লক-বৃত্তান্ত
ব্লক প্রিন্টের নকশা। শুনলেই কি একটু একঘেয়ে লাগে। নতুন আর কীই–বা থাকতে পারে এটায়। কিন্তু কাঠের ওপর করা নকশা রঙে ডুবিয়ে কাপড়ের ওপরে চেপে ধরলে যেন ফুটে ওঠে মনের বায়নাগুলো। পোশাক, বিছানার চাদর, কুশনের কভার কিংবা জানালার পর্দায় যখন ব্লকের মাধ্যমে নিজের পছন্দমতো নকশা ফুটিয়ে তোলা যায়, তখন অন্য রকম একটা আনন্দ পাওয়া যায়। এটা–ওটায় ব্লক করে পছন্দের মানুষদের উপহারও দিয়ে থাকেন অনেকে। নিজে করা যায়, চাইলে ফরমাশ দিয়ে করিয়েও নিতে পারেন। তবে ব্লকের কাপড়ের নিতে হয় আলাদা যত্ন, ব্লক করার সময় রাখতে হয় বিশেষ সতর্কতা। জানালেন বিশেষজ্ঞ ডিজাইনাররা।
ব্লকের ধরন
সাধারণত দুই ধরনের ব্লক হয় বলে জানান ডিজাইনার লিপি খন্দকার। একটা রাসায়নিক ডাই, আরেকটা ভেজিটেবল ডাইয়ের জন্য। ভেজিটেবল ডাইয়ের ব্লকে ঝামেলা বেশি। অল্প সময়ে ও সহজ উপায় বেছে নিলে রাসায়নিক রং ভালো বলে মনে করেন তিনি। বিশেষ করে যাঁরা শখের বশে ঘরে বসে ব্লক করেন তাঁদের জন্য। ভেজিটেবল ডাই সময়সাপেক্ষ। এ ক্ষেত্রে নিজেকে রং বানিয়ে নিতে হবে।
প্রয়োজনীয় সামগ্রী
কাপড়ে ব্লক প্রিন্ট করার জন্য বাজারে আলাদা রং কিনতে পাওয়া যায়। দাম নির্ভর করবে মানের ওপর। রাসায়নিকের ওপরেই নির্ভর করবে রং কতটা টেকসই হবে—বললেন লিপি খন্দকার। তাই তাঁর পরামর্শ সবচেয়ে ভালো রাসায়নিক দ্রব্য কেনার। রাসায়নিকের সঙ্গে রং গুলিয়ে নিতে হয়। রঙের দোকানে গিয়ে বললেই ব্লকের জন্য আপনাকে পুরো সেট ধরিয়ে দেবে দোকানি। সেখানে থাকবে এনকে, নিউট্রেক, এপিটন, এ৫৩, বাইন্ডার, গ্লিসারিন ইত্যাদি। এর বাইরে কাঠের নকশার ব্লক ও রং তো লাগবেই। প্রয়োজন রং গোলানোর ট্রে, কাপড় বিছিয়ে ব্লক করার জন্য টেবিল আর ব্লক করার আগে মূল কাপড়ের নিচে দেওয়ার জন্য ফোম অথবা মোটা কাপড়। লিপি খন্দকার মনে রাখতে বললেন, যেন হুট করেই কেউ ব্লক না করেন। আগে শিখে নিয়ে করা উচিত। কেননা একেক ধরনের কাপড়ে ব্লক করার জন্য আলাদা পরিমাণ রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করতে হয় রঙের সঙ্গে। সেটা না জেনে করলে পণ্ডশ্রম বৈ কিছুই হবে না।
কোন কাপড়ে ব্লক করা যায়
ডিজাইনার এমদাদ হক জানালেন, যেকোনো কাপড়েই ব্লক প্রিন্ট করা যায়। তবে সুতি, এন্ডি সিল্ক বা এ ধরনের কাপড়ে ব্লকের রং বেশি দিন টেকে।
ব্লকের কাপড়ের যত্ন
আমাদের দেশে যেহেতু হাতে ব্লকের ছাপ দেওয়া হয়, তাই যত্ন নেওয়াটা জরুরি। এমদাদ হক বলেন, ‘ব্লক প্রিন্টের কাপড় অন্য কাপড় থেকে আলাদা করে গোসলের সাবান অথবা শ্যাম্পু দিয়ে ধুতে হয়। ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করা যাবে না। কড়া রোদে শুকিয়ে উল্টো পাশে ইস্তিরি করতে হয়।’
ব্লক প্রিন্টের রং একটা সময় পর ধীরে ধীরে মলিন হয়ে যেতে থাকে। যত্ন নিলে বেশি সময় টিকে যাবে। সোনালি বা রুপালি রং ব্যবহার করলে তা খুব দ্রুত মলিন হয়ে যায়। এই দুটো রং মলিন হতে হতে একটা সময় উধাও হয়ে যায়। খুব শখ হলে ব্যবহার করতে পারেন। ব্লকের কাপড় ভাঁজ করে তুলে রাখলে সমস্যা নেই। আলমারিতে ঝুলিয়ে রাখতে পারলে বেশি ভালো। কাপড়ে যেন পোকা না ধরে এবং সুগন্ধি থাকে সে জন্য দারুচিনি, এলাচি টুকরা বেঁধে কাপড়ের ভাঁজে রাখতে পারেন। নইলে ন্যাপথলিন তো আছেই। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, অনেক দিন ব্লকের কাপড় ব্যবহার না করলেও মাঝে মাঝে রোদে ছড়িয়ে দিন।
চাইলে ফরমাশ দিয়েও কাপড়ের ওপর ব্লক করিয়ে নিতে পারেন। নিউমার্কেটের তিনতলার ব্লক মার্কেটে যেন পসরা বসে নানান নকশার। এখানকার ব্যবসায়ীরা জানালেন, তাঁরা কাপড়ে ব্লক করে দেওয়ার ফরমাশ যেমন নিয়ে থাকেন, তেমনি কাঠের ব্লক তৈরি করে দেন। এ ছাড়া এখানে ব্লকের সুতি থ্রিপিসের বেশ সমাহার। ২৫০-৩০০ টাকা থেকে শুরু করে আরও বেশি দামের থ্রিপিস বিক্রি করেন তাঁরা।
রাজধানীর গাউছিয়া ও নিউমার্কেটে ব্লক প্রিন্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাওয়া খুব সহজ। এখানে ৪০০-৫০০ টাকার মধ্যে ব্লক করার জন্য রং ও রাসায়নিক দ্রব্য পাবেন। এ ছাড়া কাঠের ব্লক কিনতে বা পছন্দসই নকশা দেখিয়ে বানিয়ে নিতে পারবেন। কাঠের ব্লকের দাম নকশা অনুযায়ী হেরফের হবে। ৩০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকার ওপরেও ব্লকের দাম হাঁকেন বিক্রেতারা।