Thank you for trying Sticky AMP!!

ভালো থাকুক পছন্দের বই

বই ছিঁড়ে গেলে বাঁধাই করে নিতে পারেন। ছবি: নকশা

বই সংগ্রহ যাঁদের নেশা, পুরোনো বইগুলো কেমন আছে সে খবর রাখছেন তো? অনেক দিন না পড়ার কারণে পুরোনো বই নষ্ট হয়ে যেতে পারে বা বেশি ব্যবহারের কারণে বইয়ের পাতা খুলে যায় অনেক সময়। পুরোনো বই বাঁধাই করে যত্ন নিলে প্রিয় বইগুলো থাকবে আগের মতো। 

বাংলাদেশের বইয়ের প্রধান ও অন্যতম বাজার ঢাকার বাংলাবাজার। এখানে ফুটপাত আর রাস্তার পাশের স্টলে পুরোনো বই বাঁধাইয়ের কাজ করা হয়। নতুন বলেন আর পুরোনো, উপন্যাস বা স্কুলের-কলেজের, যে বই চান না কেন, নীলক্ষেতে পাবেন আপনার পছন্দের বই। বই কেনার পাশাপাশি পুরোনো বই মেরামত বা বাঁধাই করার সবচেয়ে বড় স্থান হলো নীলক্ষেত। এ ছাড়া বিদেশি ভাষার অনলাইন থেকে নামিয়ে নেওয়া নতুন বই বাঁধাই করার জন্য খ্যাতি রয়েছে নীলক্ষেতের। পুরোনো বই বিক্রি করার জন্য নীলক্ষেত আদর্শ। এখানে কম খরচে বই ফটোকপি করে আনতে পারেন এবং ফটোকপি শিটগুলো একদম বইয়ের মতো করে বাঁধাই করে দিতে দক্ষ কারিগর আছেন এখানে। ঢাকায় বই বাঁধাই করার আরেকটি জায়গা হলো শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট। নিউমার্কেটের ১ ও ২ নম্বর গেটসংলগ্ন পত্রিকা স্টলগুলোয় আপনি বই বাঁধাই করাতে দিতে পারেন। ইসলামি বইয়ের জন্য বিখ্যাত বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণে আছে বইয়ের বাজার। এখান থেকে আপনার প্রিয় ইসলামি বই, হাদিস শরিফ, কোরআন শরিফ ইত্যাদি বাঁধাই করে নিতে পারেন। এখানে বেশ যত্নসহকারে ইসলামি বই বাঁধাই করে যাবে। এ ছাড়া স্টেডিয়াম মার্কেট, কাঁটাবন, শান্তিনগর, বেইলি রোড, মিরপুর ও পুরানা পল্টনে বই বাঁধাই করা যায়। 

নিজেই করুন
বই–খাতা ব্যবহার করতে করতে বা পড়তে পড়তে পুরোনো হয়ে ছিঁড়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। চাইলে দোকানে না গিয়ে নিজেও বাঁধাই করতে পারেন এই বইগুলো। নীলক্ষেতের খন্দকার বুকের অনিল সরকার বলেন, এ জন্য প্রথমেই বইয়ের পৃষ্ঠাগুলো আঙুল দিয়ে টোকা দিয়ে সমান করে নিন। এরপর ওপরে ২ পাতা ও নিচের ২ পাতা শক্ত কাগজ দিয়ে সেঁটে সেগুলোতে আঠা বা গাম লাগান। ছেঁড়া বা খোলা পৃষ্ঠাগুলো সেলাই করার জন্য যেদিকে বইটি বাঁধাইয়ের মূল কাজটি করবেন সেদিকে সুই দিয়ে ৫ থেকে ৬টি ছিদ্র করে নিন। এরপর ছিদ্রগুলো দিয়ে সুতা ঢুকিয়ে ভালোভাবে ওপর–নিচে সেলাই করুন। মনে রাখতে হবে, ১ পাতা ১ পাতা করে সেলাই করতে হলে খাড়া সেলাই করতে হবে। 

পাতার আকার বড় হলে যেভাবে গল্পের বই সেলাই করা হয়, সেভাবে ফর্মা সেলাই করতে হবে। তারপর পৃষ্ঠাগুলোর ওপরে ও নিচে মলাটের আগে সাদা কাগজের মতো পুস্তানি লাগাতে হবে। এখন পৃষ্ঠাগুলোর সংযোগস্থল, অর্থাৎ বাঁ দিকে ভালো করে আঠা বা গাম লাগাতে হবে। তারপর পৃষ্ঠাগুলোকে ১ ঘণ্টার মতো ফ্যানের নিচে বা বাতাসে রেখে দিতে হবে, যাতে গাম বা আঠা শুকিয়ে যায়। এখন বইটিকে নিয়ে কাটিং মেশিনে সাইজ করতে হবে। অর্থাৎ বইয়ের পৃষ্ঠাগুলো এলোমেলো থাকলে সমান করে কেটে নিতে পারেন। তারপর বাঁ দিকে বা বইয়ের দুই কোনার দিকটায় সেরেজার যেকোনো রঙের (ক্রেতা সেটা পছন্দ করে দেবেন) ফিতা লাগাবেন। ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি পরিমাণ কাগজের শিট ১টি করে লাগানো পৃষ্ঠাগুলোর ওপরে ও নিচে লাগান। এরপর এই কাগজ দুটোর ওপর মোটা ২টি হার্ডবোর্ডের শিট বইয়ের মলাট বা কভার হিসেবে লাগাতে হবে। সেই সঙ্গে বইয়ের পেছনের ও সামনের মলাট সমান করার জন্য পেছনে ও পাশে রেক্সিন লাগাতে হবে।

রেক্সিনের বিভিন্ন রকম মলাট রয়েছে, যেগুলো নানা রকম রঙের ভিত্তিতে পছন্দ করা যায়। সবশেষে বইয়ের ওপরে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী লেখা ছাপানোর জন্য স্ক্রিন বা ফয়েল প্রিন্টিং করতে হবে। এভাবেই বই বাঁধাইয়ের কাজটি শেষ করতে হবে।

খরচপাতি
পুরোনো বই বাঁধাই বা মেরামত করতে গেলে দর–কষাকষিতে বেশ দক্ষ হতে হবে। অনেকেই তিন থেকে চার গুণ দাম চাইবেন এ কাজের জন্য। তবে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাজের ধরনের ওপর দাম ওঠা-নামা করে। বাঁধাই করে দেওয়ার আগে কয়েক দোকান দেখে তারপর কাজ দেওয়াই ভালো। ক্ষেত্রবিশেষ ৫০ থেকে ৫০০ পর্যন্ত টাকা খরচ হতে পারে। 

সাবধানতা
বই বাঁধানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে বইয়ের সব পাতা যেন সমানভাবে কাটা হয়। সেলাই মজবুত না হলে বা আঠা ভালো করে না শুকালে পাতা খুলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বর্ষাকালে বই বাঁধানো উচিত না। কারণ, রোদের তেজ ভালো না থাকায় আঠা শুকাতে সময় লাগে। তাই একটু সময় নিয়ে বাতাসে আঠা শুকাতে হবে। সুচ, সুতা, ভোমর, হাতুড়ি, কাটার, কাঁচি ইত্যাদি ব্যবহার করার সময় সাবধান থাকতে হবে, যেন হাত না কাটে।