মনের বাক্স

অলংকরণ: তুলি
অলংকরণ: তুলি

এমন কেন হয় মা?
অনেক দিন হয় তোমাকে লিখব লিখব করেও লিখতে পারিনি। কাজের ব্যস্ততায় তবু মনে মনে তোমার সঙ্গে অনেক অনেক কথা বলে ফেলেছি।
মা, তোমার সঙ্গে আমার নাড়ির যে অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, তা জন্মাবার পরই কেটে ফেলেছিল ঠিকই কিন্তু তোমার-আমার হৃদয়ের যে অবিচ্ছেদ্য অংশ, তা তুমি চিরদিনের জন্য চলে যাওয়ার পর অবিচ্ছেদ্য আছে। জানো কাল রাতে তোমাকে স্বপ্নে দেখলাম, তুমি তোমার বিছানায় শুয়ে আছো। আমাকে ডাকলে, রুপুমণি কাছে এসো। আমি তোমাকে দুহাতে জড়িয়ে, তোমার পাশেই শুয়ে পড়লাম। মা, কী যে সুখ পেলাম তোমাকে বলে বোঝাতে পারব না। মায়ের ওমে যে সুখ, দুনিয়ার আর কোনো কিছুতেই সে সুখ পাওয়া যায় না, মা।
মা, প্রায়ই আমি চমকে উঠি, মনে হয় তুমি আমাকে ডাকছ—রুপু, রুপুসোনা। যেভাবে তুমি আমাকে ছোটবেলায় ঘুম থেকে ওঠাতে। কোলে নিয়ে হাতমুখ ধোয়াতে। এখনো আমি সেগুলো অনুভব করি মা।
এমন কেন হয় মা? ভালোবাসার মানুষটি অনেক দূরে চলে যায়? ঠিকানাটাও রেখে যায় না।
মা, তুমি যেখানেই থাকো, ভালো থেকো, সুখে থাকো আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করি।
তোমার
রুপু
চোখে শুধুই অন্ধকার

কিছুদিন ধরে দিনের বেলাও অন্ধকার লাগে। অদ্ভুত লাগে বিষয়টা। উদাসীন হয়ে বসে ভাবনার জগৎ হাতড়ে বেড়াচ্ছি। হঠাৎ কলেজের দিনগুলো উঁকি দিল মনে। বন্ধুদের আড্ডা, দল করে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে যাওয়া, সিগারেটের ধোঁয়া দিয়ে বৃত্ত করা সবই আজ স্মৃতি। প্রথম বর্ষ শেষ করে দ্বিতীয় বর্ষ শুরু হতেই এইচএসসির আগমনী বার্তা কানে তুলে দিলেন শিক্ষকেরা। তবু আমাদের দৈনিক রুটিনে কোনো প্রভাব পড়েছিল বলে মনে পড়ছে না। সময় দ্রুতগতিতে এগোতে লাগল, তবে পরীক্ষা অনেক ধীরগতিতেই সম্পন্ন হলো। আর আমাদের পায় কে? দু-এক দিনের মধ্যেই সবাই যার যার মতো ভিন্ন শহরের বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়ে গেল। এখান থেকেই আমাদের শেষ, ‘আমি’ শুরু।
প্রায় তিন মাস পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। এর মধ্যে এইচএসসির রেজাল্ট হয়ে গেল। রেজাল্ট শুনে পরিবার কিঞ্চিৎ হতাশ আমার প্রতি। এরপর দিন যেন আরও দ্রুত যেত লাগল। অবশেষে পাবলিকের পরীক্ষা দিলাম, রেজাল্টও হয়ে গেল। চান্স হয়নি শুনে পরিবারের সবাই বিমুখ, যদিও কেউ বুঝতে দিতে চায় না তাদের অনুভূতি।
আচমকা শব্দে আমার ঘোর কেটে গেল, কিন্তু বাস্তবতার এই ঘোর যে কাটবার নয়। কী হবে আমার। ‘অতঃপর’ চোখে শুধুই অন্ধকার
জারিফ জয়

কল্যাণপুর, ঢাকা।

ভালোবাসি ভালোবাসি

অনেকবার বলেছি ভালোবাসি, অনেকবার। তুমি হয়তো গুনেও রেখেছ। সংখ্যাটা জানিয়ে দিয়ো। সেই ষষ্ঠ শ্রেণি, ক্লাসের মেধাবী ছাত্রী, ছোট চুল ব্যান্ড দিয়ে আটকানো, ফাস্ট বেঞ্চ। বন্ধুর সাইকেল ধার নিয়ে তোমার রিকশার পিছে পিছে যাওয়া, আজও মনে পড়ে। সত্যি বলছি, বাড়িটা ভুলে গেছি।

অনেক খুঁজেছি তোমাকে। এখনো খুঁজছি। ছোট শহরটিতে তুমি কোথায় হারিয়েছ? মাঝে মাঝে স্বপ্নে তোমাকে দেখতে পাই। এই তো গত শনিবারই দেখেছি, ঠিক আগের মতো আছো, একটুকুও বড় হওনি, চুলগুলোও ছোট আছে। ঘুম ভাঙার পর মনে হয় কেঁদেছিলাম।

জানো, এখন আমি বড় হয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, হয়তো তুমিও।

এই যে, তুমি আমার চিঠিটা পড়ছ, আর একবার বলছি ‘ভালোবাসি’। আগেরগুলোর সঙ্গে যোগ করে রেখো। ছুটিতে বাড়ি গেলে সেই স্কুলমাঠে এখনো যাই, তোমাকে খুঁজি।

এহসান হাবীব

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

তোকে মিস করি না

তোর বিশ্বস্ত হাতটা ধরে অনেকটা পথ আমার হাঁটা হয়নি। শিশিরস্নাত সবুজ ঘাসের ওপর পা রাখতে পারিনি তোর পায়ের ছন্দে, হয়নি সকালের মিষ্টি রোদে বকুল ফুল কুড়ানো, দেখা হয়নি শরতের জ্যোৎস্নারাতে চাঁদ ও মেঘের লুকোচুরি খেলা পিঠে পিঠ রেখে। যান্ত্রিকতা ও কঠিন বাস্তবতায় আমি আজ তোর থেকে অনেক দূরে। আমার আবেগপ্রবণ মনটা যান্ত্রিকতার কারাগারে গুমরে কাঁদে।

বিশ্বাস কর, তোকে আমি মিস করি না। আমার অনুভূতির বন্ধ দরজায় তোকে হারানোর আকুতি আমাকে প্রভাবিত করে না। কিন্তু আমার একাকিত্বে ঠিকই তুই এসে হৃদয়ের করিডরে উঁকি দিয়ে যাস। কাউকে হারানোর মধ্যেই নাকি ভালোবাসার গভীরতা এবং সার্থকতা বোঝা যায়।

তোকে হারিয়েই সেটার প্রমাণ পেলাম।

দেবাশীষ পাল চৌধুরী

হবিগঞ্জ।

তুমি কে?

যে তুমি আমাকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসতে, যে তুমি আমার জন্য সবকিছু ছেড়ে দিতে রাজি ছিলে, সেই তুমি আজ কীভাবে এত বদলে গেলে?

জানো, আজ খুব অবাক লাগে আমার, সেদিনের সেই কথাগুলো মনে হলে। তুমি কি সেদিন সত্যি আমাকে ভালোবেসেছিলে, নাকি আমাকে শুধুই মিথ্যা সান্ত্বনা দিতে তোমাকে ভালোবাসতাম বলে। আজ আমি নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারছি না, কীভাবে বিশ্বাস করব, তুমি নিজেই বলো। আমি সব সময় আনন্দে মুখর থাকতাম। সবাইকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করতাম। আজ সেই আমি নিজেই সবার থেকে দূরে একাকী হয়ে আছি। তুমি কি একবার বলবে কোনটি আমি? আজকের আমিই কি সেদিনের সেই আমি? যদি উত্তরটা জানা থাকে তোমার, তাহলে আমাকে জানিয়ে দিয়ো।

জানি, আজ তুমি সুখে আছ আমাকে ছাড়া। আমিও দোয়া করি খুব সুখে থাকো তুমি, খুব ভালো থাকো তুমি। তোমার বিবাহিত জীবন সুখের হোক।

নয়ন

সোনাগাজী, ফেনী।

মাকে ছেড়ে দূরে

মা। সুন্দর, সাবলীল, মিষ্টি, সুরেলা, সুরভিত, পবিত্র একটা শব্দ। জীবন থেকে ২১ বছর পেরিয়ে গেল। কখনো মাকে ছেড়ে দূরে থাকতে হয়নি। কিন্তু আমি এখন শহরে থাকি, পড়ালেখার তাগিদে। মায়ের ছোঁয়াহীন-মায়াহীন জীবন আমার! প্রতিদিন কয়েকবার মায়ের সঙ্গে কথা হয়। প্রতিবারই মা ডুকরে ডুকরে কাঁদেন। আর ভাঙা ভাঙা গলায় কথা বলেন। আমাকে ছাড়া নাকি ঘরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে; মায়ের বুক ধড়ফড় করে সারাক্ষণ। একদিন জানতে পারলাম, মা এখন আর সকালে নাশতা তৈরি করেন না এবং নিজেও কোনো নাশতা করেন না। সেদিন থেকে আমিও নাশতা করি না। মা জিজ্ঞেস করলে বলি, ‘নাশতা করেছি, পরোটা খেয়েছি...।’

আমি মায়ের সঙ্গে মিথ্যা বলেছি! মিথ্যা বলার অপরাধে বিধি আমাকে তুমি দণ্ডিত কোরো না। কারণ, এই মিথ্যা মানে আমি মাকে ভালোবাসি।

মো. এমাম হোসেন

ফেনী।

লেখা পাঠানোর ঠিকানা

অধুনা, প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।

ই-মেইল: adhuna@prothom-alo.info ফেসবুক: facebook.com/adhuna.PA. খামের ওপর ও ই-মেইলের subject-এ লিখুন ‘মনের বাক্স’