পাঠকের লেখা

মনের বাক্স

আবার এসেছে শরৎ

শরৎ এলেই শিউলি, কাশ ও নীল আকাশে সাদা মেঘ ভিড় করে। আর মনের আকাশে স্মৃতিরা উঁকিঝুঁকি মারে। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে আমি আর রত্না একই পথের আলাদা বাসে যাতায়াত করতাম। রত্না উল্লাস আর আমি আনন্দ নামের বাসে। প্রায় কাছাকাছি সময়ে এসে বাস দুটি থামত। আমাদের বিভাগে যাওয়ার সিঁড়ির সামনে একটি শিউলিগাছ। যেদিন রত্না আগে আসত, সেদিন সে ফুল কুড়াত আর আমি পেছন থেকে এসে চমকে দিতাম। আমি আগে এলে রত্নাও তা–ই করত। সকাল আটটায় ক্লাস। তাই ভোরে আসতাম। ফুল কুড়ানোর সেই শরৎকাল তাই আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় ছিল।

এখনো শরৎ আসে। তবে আমার আর রত্নার দেখা হয় না ছয় বছর। একই শহর, তবু ব্যস্ততা দেয় না অবসর। এখনো শিউলি ফুটলে রত্না আমাকে ছবি তুলে পাঠায়। বলে, বছরের প্রথম শিউলি ফুটেছে। ছবি দেখি আর ভাবি, আবার কোনো এক শরতে আমাদের শিউলিতলায় দেখা হবে! আমি সেই অপেক্ষায়...।

নিপা, নারায়ণগঞ্জ

অদৃশ্য ফুলেল ভাষা

দীর্ঘ ছয়টি বছর পর নিজের সংসার নিজের মতো করে গোছাব বলে চলে এলাম শ্বশুরালয়ে। দিন পনেরো হলো, কিন্তু মন বড্ড অশান্ত। স্বামী-সন্তানসহ একসঙ্গে থাকার এমন সুবর্ণ সুযোগ আমাদের হয়নি, হলেও তা ৫-১০ দিনের জন্য। এখন আমার জীবন যেন পূর্ণতা পেল।

তবু রাতজাগা পাখির মতো হয়ে গেছি। কে বা কারা যেন আমায় ডাকছে। ওরা যেন আমার এই অযাচিত চলে আসা মানতে পারছে না। বড্ড একা হয়ে আছে ওরা। ওরা ছিল আমার সখা, আমার আরেক শরীর, আমার সুখ-দুঃখের সাক্ষী। তারা ডাকছে, কাঁদছে। বলছে, আয়।

ওরা আমার মা-বাবার বাড়িতে থাকা ছোট্ট একটা ছাদবাগানের ছোট্ট ছোট্ট পারিজাতেরা। ১০-১৫ বছর ধরে যাদের আমি টুকরো টুকরো পরিবার থেকে এনে নতুন একটি পৃথিবী তৈরি করেছি।

কিছু কিছু সম্পর্ক হয় অদৃশ্য। একে অন্যের খুব দূরে থেকেও থাকে নিজের অনুভূতিতে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে। আর আমি আমার সন্তানতুল্য পুষ্পরাজিকে ভুলে থাকতে পারছি না। ওদের যে আমার বিদায় বলে আসা হয়নি। আমাকে যে যেতেই হবে ওদের কাছে।

লিপি মনি গোয়ালা, সহকারী শিক্ষক, ছিমাইলত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার

বৃষ্টি আর কান্না

দেখো, বৃষ্টি পড়ছে, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি! আমি চাইনি এ বৃষ্টি। আমি বরং তীব্র আগ্রহে উপভোগ করছিলাম, বৃষ্টির আগে মনখারাপের মতো মেঘলা আকাশ। তবু বৃষ্টি যখন এসেই পড়েছে, আমি তাকে যেতে বলব না।

এমন বৃষ্টি আমি এর আগেও দেখেছি, সেটা তোমার চোখে। মনে আছে তোমার? আমাদের ছাড়াছাড়ির দিনে, যখন তুমি বিষাদভরা প্রেম ছেড়ে যাওয়ার বেদনায় মন খারাপ করেছিলে।

আমি বলেছিলাম, ‘তুমি এভাবেই মন খারাপ করে থাক। তোমার বিষাদে আজ নিজেকে মনে হচ্ছে না কোনো ব্যর্থ প্রেমিক। বরং আমাকে না পেয়ে কেউ মন খারাপ করছে, এই অনুভূতি আমি ভীষণ উপভোগ করছি। নিজের প্রেমিকসত্তায় আমি সার্থকতা খুঁজে পাচ্ছি। অন্তত এই ভেবে একটা জীবন কাটিয়ে দেব যে আমি কারও প্রেমিক ছিলাম। একদম সার্থক প্রেমিক।’

তারপর আর তুমি নিজেকে ধরে রাখতে পারোনি, আমাকে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলে। অথচ আমি একবারও তোমাকে থামানোর চেষ্টা করিনি। সহ্য হচ্ছিল না তোমার কান্না, তবু মানিয়ে নিয়েছি। কারণ, আমি জানি, এভাবে মানিয়ে নিয়েই আমার একটা ভয়াবহ কঠিন জীবন পার করতে হবে। তাই আজ এই যে বৃষ্টি হচ্ছে, আর সেদিন তোমার চোখে যে বৃষ্টি নেমেছিল, দুটোর অনুভূতি আমার কাছে একই রকম। পার্থক্য কেবল সেদিনের বৃষ্টি আমার বুক ভিজিয়ে ছিল, আজ ভেজাচ্ছে পুরো শরীর।

নাঈম ভুঁইয়া, বাংলাবাজার, ঢাকা

রংচটা শহর

অনেক দিন পর ফিরে এলাম এ শহরে। এসেই বুঝতে পারি, এ শহর আমার সেই পুরোনো শহর নেই। শহর তার পুরোনো রূপ হারিয়ে ফেলেছে। যেমনটা তুমি আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছ। কিন্তু তোমার গন্ধ আজও আমি খুঁজে ফিরি, এ শহরের প্রতিটি রাস্তার মোড়ে।

দুজনে কত ঘুরেছি এ শহরের রাস্তায় রাস্তায়। আজ তুমি আর আমার জীবনে নেই। তাই তোমার গন্ধও আজ আর পাই না এ শহরে। শহরের আনাচকানাচে আজ আছে শুধুই তোমার স্মৃতি।

তোমার স্মৃতিগুলোই আজ আমাকে পথ চলার শক্তি জোগায়। তুমি চলে যাওয়ার পর আমিও ছেড়েছিলাম এ শহর। কিন্তু আবার ফিরে আসতে হলো তুমিহীনা এ রংচটা শহরে।

আসাদুল্লাহ আল গালিব, খুলনা

ভালো থেকো মাধবীলতা

সহস্র কোটি বছর তোমাকে দেখি না। তোমার কাজল লেপ্টানো ছলছল চোখ শেষবার কমলাপুরে ট্রেনে তুলে দেওয়ার সময় দেখেছিলাম। করোনা মহামারি তোমাকে বাড়ি আটকে রেখেছে বহুকাল। তারপর তুমি চিরচেনা শহরে ফিরলে, আর অদৃশ্যের লীলায় আমি অজানা শহরে বন্দিদশায়। এক বছর পর তোমার চোখে চোখ রাখতে পারব কি! মনে পড়ে, আজিমপুরের অলিগলি, পাবলিক লাইব্রেরির সিঁড়ি, চারুকলা, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আর তোমার অভিমান জমানো মুখ। তোমার বিরহ আমাকে তোমার দিকে আরও বেশি ধাবিত করছে। ভালো থেকো তুমি।

বাদল খান, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, সারদা

তোর জন্য লিখে দিলাম

প্রিয় বোন, তুই প্রায়ই গর্ব করে বলতি, আব্বু-আম্মু শুধু শুধু তোর নামটা আঁখি রাখেনি। আঁখির চোখকে নাকি কেউ ফাঁকি দিতে পারে না। আমি হাসতে হাসতে মেনে নিতাম আর তোকে গোয়েন্দা বলে ডাকতাম। ছোটবেলা থেকেই আমি খুব চাপা স্বভাবের। নিজের মনের কথা সহজে প্রকাশ করতে পারি না। কিন্তু আমার জীবনের দিকে একটু খেয়াল করলে দেখি, আমি তোর চোখ এড়াতে পারিনি। তাই আমার চাপা কষ্ট, যন্ত্রণা, শখ-আহ্লাদ, অপূর্ণ ইচ্ছা—সব তোর কাছে ধরা পড়ে যায়।

এই যেমন দুই বছর ধরে আমি যে ঘড়িটা কিনব কিনব করেও কিনিনি, সেই ঘড়িই তুই আমাকে উপহার দিলি। ছোট বোন হয়েও আমার জন্মদিনে তুই আমাকে পোশাক বানায়ে দিলি, কত সুন্দর একটা সন্ধ্যার আয়োজন করলি। শুধু আমাকে একটু আনন্দে রাখবি বলে।

অথচ আমাকে দেখ, বড় বোন হয়েও তোর জন্য তেমন কিছু করতে পারি না। অনেক সময় অকারণে বকাবকি করি, খারাপ ব্যবহার করি। কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি তোকে খুব ভালোবাসি।

ইতি

তোর তানজু

লেখা পাঠানোর ঠিকানা

অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫। ই-মেইল: adhuna@prothomalo.com, ফেসবুক: facebook.com/adhuna.PA খামের ওপর ও ই-মেইলের subject–এ লিখুন ‘মনের বাক্স’