মহেশখালীর ঘটিভাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

মেঝেতে বসে পাঠদান

নেই টুল–বেঞ্চ ও আসবাব। মেঝেতে বসেই পড়ছে মহেশখালীর ঘটিভাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা lপ্রথম আলো
নেই টুল–বেঞ্চ ও আসবাব। মেঝেতে বসেই পড়ছে মহেশখালীর ঘটিভাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা lপ্রথম আলো

মহেশখালীর ঘটিভাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণি চালু হয় ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে। পরবর্তী দুই বছরে চালু হয় সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। অতিরিক্ত তিনটি শ্রেণি বাড়লেও অবকাঠামোগত সুবিধা বাড়েনি। ফলে পরিত্যক্ত ভবনে চলছে তিন শ্রেণির পাঠদান। এসব শ্রেণিতে বসার বেঞ্চও নেই। দুই বছর ধরে মেঝেতে বসে চলছে পাঠদান। এদিকে শ্রেণিকক্ষ সংকট নিরসনে নতুন ভবনের কাজ শুরু হলেও এখনো শেষ হয়নি।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর টিনের ছাউনি ও বেড়ার ঘরে পাঠদান চলে আসছিল। পরে ১৯৯২ সালে তিন কক্ষের একতলা একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে বিদ্যালয়ে আরও দুটি ভবন নির্মাণ করা হয়। এদিকে ১৯৯২ সালের ভবনটি গত দুই বছর আগে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। ফলে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ষষ্ঠ শ্রেণি চালু করার পর থেকে শ্রেণিকক্ষ সংকট লেগেই আছে। বর্তমানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু হয়েছে। এখন শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ২০০, শিক্ষক রয়েছেন ছয়জন। শ্রেণিকক্ষ সংকট দূর করতে বিদ্যালয়ে দুই বছর আগে আরও একটি ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করলেও এখনো পর্যন্ত নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দুই বছর ধরে পরিত্যক্ত ভবনে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির পাঠদান চালাচ্ছে।
২২ আগস্ট সরেজমিনে দেখা যায়, তিন কক্ষের পরিত্যক্ত ভবনের স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে বসে পাঠ নিচ্ছে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। এ সময় এসব শিক্ষার্থীকে পড়াচ্ছেন ওই বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষিকা ময়না আক্তার।
তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছমিরা আকতার, সাইমা আক্তার ও জন্নাতুল ফেরদৌস জানায়, বৃষ্টির দিনে সমস্যা হয় বেশি। ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। তা ছাড়া প্রায় সময় পলেস্তারা খসে পড়ে।
শিক্ষিকা ময়না আকতার বলেন, বেঞ্চ সংকট দূর করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েকবার আবেদন করেও এ নিয়ে সাড়া মেলেনি।
শিক্ষকেরা জানান, পরিত্যক্ত ভবনের অপর দুটি কক্ষে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠদান চলে। তাদেরও মেঝেতে বসিয়ে পাঠ দেওয়া হয়।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোকতার আহমদ বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণি চালু করার সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রতিবছর দুজন করে তিন বছরে ছয়জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা বলেছিল। এখনো একজন শিক্ষকও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে ছয়জন শিক্ষক দিয়ে চলছে ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর পাঠদান।
মোকতার আহমদ আরও বলেন, বেঞ্চ সংকটের কারণে দুই বছর ধরে শিক্ষার্থীরা মেঝেতে বসে পাঠ নিচ্ছে। তাই বেঞ্চের জন্য উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কাছে কয়েকবার আবেদন করে চলতি মাসে ১০ জোড়া বেঞ্চ পাওয়া যায়। অথচ বেঞ্চ দরকার আরও ৬০ জোড়া।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় কুতুবজোম ইউপি সদস্য নুরুল আমিন বলেন, শ্রেণিকক্ষ সংকট দূর করতে ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়ে আরও একটি নতুন ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। এই ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলে সংকট অনেকটা লাগব হতো।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ চিরান বলেন, ছয়জন শিক্ষক দিয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়ের পাঠদান চালানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই সামনে নিয়োগ হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।
কবে নাগাদ নতুন ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হবে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী গৌরাঙ্গ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, নির্মাণকাজ ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি শুরু হয়ে এক বছরের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু কাজ দেরিতে শুরু হওয়ায় নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। এখন নভেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। রং ও আসবাবপত্রের কাজ শেষ করে আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যেই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্মাণাধীন নতুন ভবনটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।