খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার শান্তিপুর এলাকায় নির্মিত রাবার ড্যামটির সুফল পাচ্ছে এলাকাবাসী। বাঁধের কারণে এ বছর বোরো মৌসুমের ধানসহ অন্যান্য ফসলের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি বাঁধের ওপর নির্মিত সেতুর কারণে অন্তত সাতটি গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হয়েছে।
৮০ মিটার দীর্ঘ এই রাবার ড্যাম নির্মাণে ১০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। নির্মাণকাজ শেষ হয় গত বছর জুন মাসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১১ নভেম্বর খাগড়াছড়ি সফরের সময় ১২টি প্রকল্পের সঙ্গে এই প্রকল্পও উদ্বোধন করেন।
পানছড়ি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যলয় সূত্রে জানা যায়, রাবার ড্যামের কারণে এ বছর বোরো মৌসুমে ৯৩ হেক্টর জমিতে ধান, ৫৫ হেক্টরে শাকসবজি, ৬৮ হেক্টরে ফলমূল বাগান ও সাত হেক্টর জমিতে ভূট্টার চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ৭৮০ মে. টন খাদ্যশস্য বেশি উৎপাদিত হয়েছে।
পানছড়ি শান্তিপুর এলাকার নবীনচন্দ্রপাড়ার কৃষক সাধন মুনি চাকমা ও জ্ঞানময় চাকমা জানান, এ বছর বোরো মৌসুমে তাঁদের কোনো পানির অসুবিধা হয়নি। তীব্র খরায়ও পানি পাওয়া গিয়েছিল। ঠিকমতো পানি দিতে পারায় এ বছর ধানের উৎপাদনও বেড়েছে। মোল্লাপাড়ার কৃষক সুরুজ আলী জানান, রাবার ড্যামের কারণে পানির অভাব দূর হয়েছে। তবে ড্যামের সঙ্গে কিছু পাকা সেচ নালা করা গেলে আবাদ আরও বৃদ্ধি পেতো।
রাবার ড্যামের পানির সুবিধা পাচ্ছেন পানছড়ি উপজেলার চারটি কৃষি ব্লকের কৃষকেরা। ছোট পানছড়ি, লতিবান, মির্জিবিল ও পানছড়ি সদর ব্লকের কৃষকেরা এখন নিয়মিত সেচের পানি পান। ছোট পানছড়ি কৃষি ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নির্বাণ কুমার চাকমা জানান, শুধু ছোট পানছড়ি ব্লকে ১৬ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাকা সেচ নালার সুবিধা থাকলে আরও বেশি জমিতে বোরো চাষ সম্ভব হতো।
দক্ষিণ শান্তিপুর এলাকার বাসিন্দা সুজন চাকমা জানান, রাবার ড্যামটি শুধু সেচ সুবিধা দিচ্ছে না, বরং প্রকল্প এলাকায় নির্মিত সেতু সোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করেছে। এর ফলে সাতটি গ্রামের মানুষ সহজে যাতায়াত করতে পারছেন। পাশাপাশি এই এলাকার কৃষকরা অতি সহজে তাঁদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করতে পারছেন।
রাবার ড্যামটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করছে চেঙ্গী নদী রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি।
এ সমিতির সভাপতি সুধাংশু বিকাশ চাকমা জানান, এ বছর রাবার ড্যামের পানি পাওয়ায় এলাকার কৃষকদের আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। এলাকার আর্থসামাজিক আবস্থার উন্নতি হচ্ছে ধীরে ধীরে। তবে এই প্রকল্পের সঙ্গে পাকা সেচ নালা থাকলে আবাদি জমির পরিমাণ আরও বাড়তো।
পানছড়ি উপজেলা সহকারী কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন জানান, রাবার ড্যামের আওতায় চারটি কৃষি ব্লক রয়েছে। রাবার ড্যাম চালু হওয়ায় এ চার ব্লকে বোরোর আবাদ আগের চেয়ে ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। ফলে কৃষকেরা আর্থিকভাবে সচ্ছলও হচ্ছেন।