শপিং ব্যাগ

অলিম্পিক দেখার পর থেকেই মামার ধারণা হয়েছে, ভারোত্তোলন খুবই সহজ একটা খেলা। উজবেকিস্তানের একটা মেয়ে ১৪৫ কেজি তুলতে পারলে তিনি কেন পারবেন না? সাধারণত বাবা তাঁর কোনো কথায় একমত হন না। এবার একমত হয়ে বলেছেন, ‘অবশ্যই। তুমি উজবেক না হলে কী হবে, উজবুক তো, তোমারও পারা উচিত।’ বাবার খোঁচাটাকে সমর্থন ভেবে মামা কঠোর অনুশীলন করছেন। বাসায় বিশাল এক ডাম্বেল এসেছে। মামা একাই ডাম্বেল ওঠানোর চেষ্টা করেছিলেন। পরে ব্যর্থ হয়ে লোক ডেকে এনেছেন আর হেসে বলেছেন, ‘আমি এখনো শিখছি। পেশাদার হয়ে গেলে এটা তোলা কোনো ব্যাপারই না।’ সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছেন বাবা। ২০ কেজি চালসহ ঈদের পুরো বাজার মামাকে দিয়ে চারতলায় উঠিয়েছেন। বাবা বলেছেন, ওয়াশিং মেশিন কিনলে সেটাও মামাকে দিয়ে ওঠাবেন। ২০ কেজির বস্তা তুলতে তুলতে মামা বলেছেন, ‘আমি এখনো শিখছি, পেশাদার হয়ে গেলে ওয়াশিং মেশিন তোলা কোনো ব্যাপারই না।’মামার ঘরে উঁকি দিয়ে দেখি, তিনি ধ্যানে মগ্ন। বললাম, ‘মামা, ঈদে কী কিনবেন?’—গরু।—আরে, এটা কোরবানির ঈদ না তো! —অ। আসলে ভারোত্তোলনে খুব ব্যস্ত থাকি তো...—আপনি যা করছেন, তা ভারোত্তোলন না, ভাঁড়োত্তোলন! —তুই আধঘণ্টা অপেক্ষা কর। আধঘণ্টা পর ধ্যান ভাঙলে তোকে কষে চড় দেব। একটা দাঁত পড়বে, আরেকটা নড়বে।অপেক্ষা করে চড় খাওয়ার কোনো মানে নেই। তা ছাড়া এখন আবার মার্কেটে যেতে হবে। নিতু নিশ্চয়ই এতক্ষণে চলে এসেছে। এমনিতে সে কোথাও ঠিক সময়ে যেতে পারে না, কিন্তু মার্কেটে যেতে হলে একেবারে ব্রেকিং নিউজের মতো আগে চলে আসে।মার্কেটে গিয়ে দেখি, নিতুর হাতে নিজের ব্যাগ ছাড়াও একটা শপিং ব্যাগ। এরই মধ্যে শপিং করে ফেলেছে। এটা ভালো লক্ষণ। নিতু বলল, ‘এত দেরি কেউ করে? আশ্চর্য!’—মেয়েরা কথায় কথায় আশ্চর্য বলে কেন?—কথায় কথায় বললাম, কই? আশ্চর্য তো! চলো, গয়নার দোকানে যাব।অসম্ভব। গয়নার দোকানে গেলেই ওর কিছু একটা পছন্দ হবে। সেটা আমাকেই কিনে দিতে হবে। কী দরকার? আমি বিভিন্ন অজুহাতে ওকে বোঝালাম, গয়নার দোকানে ছেলেদের যাওয়া ঠিক নয়। ও শপিং ব্যাগটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে গটমট করে চলে গেল। নিশ্চিন্ত হলাম। গয়না দেখলে ওর মন ভালো হবেই।নিশ্চিন্তে হাঁটছি, হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন বলল, ‘তুই এখানে?’ তাকিয়ে দেখি আপু! নিশ্চয়ই কারও পৌষ মাস এসেছে। নইলে আমার কপালে সর্বনাশ আসবে কেন? পাল্টা প্রশ্ন করলাম, ‘তুই এখানে?’—এটা মেয়েদের মার্কেট।—টয়লেটে ছেলেমেয়ে অপশন থাকে জানতাম। মার্কেটেও যে থাকে, তা আজ জানলাম।—তোর ব্যাগে কী?তাকিয়ে দেখি ব্যাগের ভেতরে একটা জামা। বললাম, ‘জামা, তোর জন্য কিনলাম। তোকে কত ভালোবাসি তা তো বুঝবি না।’—সত্যি? ওয়াও! কী সুইট! চল, বাসায় যাই।—তুই যা, আসছি।—আহা চল না, একসঙ্গে যাই।কী আর করা। গেলাম। নিতুকে পরে একটা জামা কিনে দিলেই হবে। আমি যে আপুর কাছে গ্রেপ্তার হয়েছি, তা ওকে মেসেজে জানালাম। স্বস্তির নিঃশ্বাস অটো চলে এল। আপু বলল, ‘সেদিন ইফতারের আগে তোকে যে বকা দিয়েছিলাম, সে কথা এখনো মনে রেখেছিস?’—বকা, পরীক্ষার পড়া—এসব আমার মনে থাকে না।—গুড!বাসায় আসতে আসতে ইফতারের সময় হয়ে গেল। সবাই ব্যস্ত। এই সুযোগে নিতুকে ফোন দিলাম। ও যা বলল, তাতে আমার মাথায় সৌরজগৎ ভেঙে পড়ল। জামাটা নাকি ওর না। ওদের পাশের ফ্ল্যাটের অ্যানি আপার। তার সাইজে বড় হয়েছিল। নিতু মার্কেটে যাচ্ছে শুনে ওকে দিয়ে পাঠিয়েছিল পাল্টে ছোট সাইজের জামা আনতে। বললাম, ‘কালকে তোমার কাছে দিয়ে আসব। আপুর কাছে পুরা কট খেতে হবে। এই আর কী!’—উফ্। অ্যানি আপারা আজকে রাতেই গ্রামে চলে যাচ্ছে। আমি জানি না, তুমি যেভাবেই হোক জামাটা দিয়ে যাও। আমাদের বাসার সামনের চায়ের দোকানে এসে ফোন দিবা, আমি লোক পাঠাব। রাখি, ইফতারের সময় হলো।কী বিপদ! টেবিলে এত মজার মজার খাবার, কোনোটাই খেতে ইচ্ছা করল না। আপুকে কীভাবে বলি? ও একটা জীবন্ত নিউজ চ্যানেল। সবাইকে বলে দেবে। জিলাপি মুখে দিতেই একটা বুদ্ধি মাথায় এল। দ্রুত উঠে আপুর ঘরে গেলাম। আপু মনে হয় বাথরুমে। ব্যাগটা কই? নিশ্চয়ই আলমারিতে। কিন্তু চাবি? পেয়েছি। ড্রেসিং টেবিলের ওপর। খুললাম। বাহ্। প্রথম ড্রয়ারেই ব্যাগ। বের করলাম। তালা লাগালাম। দ্রুত নিজের ঘরে এসে ব্যাগটা ঢোকালাম আমার ব্যাকপ্যাকে। তারপর, ‘আম্মা, কোচিংয়ে যাই’ বলে বেরিয়ে গেলাম।রাস্তায় এত জ্যাম। প্রায় দৌড়ে এসেছি। চায়ের দোকানের সামনে এসে নিতুকে ফোন দিলাম। দোকানদার আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এই লোকের তাকানোর ভঙ্গি তার চায়ের মতোই; কড়া! নিতুদের কাজের মেয়েটা এসে ব্যাগ নিয়ে গেল। আহ্! অপারেশন সাকসেসফুল! বাসায় রওনা দিলাম।ঘরে ঢুকে পানি খেতে যাব, এমন সময় আপু এসে বলল, ‘তোর দেওয়া জামাটা পরলাম। কেমন লাগছে?’আমার মুখ থেকে আরেকটু হলেই পানি বেরিয়ে যাচ্ছিল। হায় হায়! আমার দেওয়া জামা যদি এটা হয়, তাহলে ব্যাগের ভেতরে কী ছিল? কোনোমতে বললাম,—বাহ! ওয়াও! তা এটার ব্যাগটা কী করেছিস?—মামার জন্য একটা লুঙ্গি কিনেছিলাম, ওটা জামার ব্যাগে রেখেছি। ব্যাগটা কিউট তো, লুঙ্গির ব্যাগটা খ্যাত টাইপ। মামা এলে দেব। বুদ্ধি কেমন?—অসাধারণ বুদ্ধি!আপু চলে গেল। আমি কী করব বুঝতে পারছি না। ড্রয়ার খুলে আপু যখন দেখবে লুঙ্গি নেই, তখন কী হবে? তা ছাড়া অ্যানি আপা যখন জামার বদলে লুঙ্গি দেখবে, তখনই বা কী হবে? এই ভার কে উত্তোলন করবে? ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে গেল। আমি আরেক গ্লাস পানি খেলাম। গয়নার দোকানে গেলে কি এত ভেজাল হতো? ধুর, ভালোই লাগে না!