শিশুরা চুল কাটানোর সময় ভয় পেয়ে যায়। কারণ নতুন পরিবেশ ও মানুষ। ধৈর্য্য ধরে বোঝালে তারাও একসময় বুঝবে, চুল ও কাটবে।
শিশুকে চুল কাটাতে নিয়ে গিয়ে বিপত্তিতে পড়তেই পারেন। শিশু কেঁদে উঠতে পারে, ছটফট করতে পারে, চুল কাটাতে রাজি না-ও হতে পারে। একটু বড় হতে থাকলেই গড়ে ওঠে শিশুর নিজস্ব মতামত। কীভাবে চুল কাটাবে, সেটা নিয়েও নিজের মত জানাতে পারে। মা-বাবার সঙ্গে হতে পারে মতের অমিল। দায়িত্বশীল অভিভাবক শিশুর পছন্দ-অপছন্দকে একেবারে অগ্রাহ্য করবেন না, আবার শিশুর মতটি ওর জন্য সঠিক না হলে তাঁকে বোঝাবেনও বটে। দুইয়ে মিলিয়ে কেমন হতে পারে চুল কাটতে যাওয়াটা?
আড়াই বছর পেরোনো মেয়ে ইজমা নাকি নিজে নিজেই এখন বুঝে নেয় সবকিছু। কাজেই চট করে মন ভুলিয়ে এই কন্যার কাজ সমাধান করা আগের মতো সহজ নয় আর। তাকে এখন যেকোনো কিছু উপস্থাপন করতে হয় তার মতো করেই। চুল কাটার বিষয়টাও ঠিক তাই। আনন্দের আহ্বানে আজকের শিশুকে নরসুন্দরের কাছে নিয়ে যাওয়ার গল্প বলছিলেন ইজমার বাবা মো. ইজাজ মিয়া। চুল কাটানোর আগে এর ইতিবাচক দিকগুলো সন্তানকে বুঝিয়ে বলেছিলেন পেশায় চিকিৎসক এই বাবা।
নরসুন্দরের কাছে গেলেও বাবার কোলের নিরাপদ আশ্রয়ে থেকেই চুল কাটিয়েছে ইজমা। বাইরের অন্যান্য মানুষের মাঝে স্বস্তি পাচ্ছিল না সে। তাই তাকে বাবার আশ্রয়ে রেখেই চুল কাটানো হলো। নরসুন্দরও সেই অবস্থাতেই সেরে নিলেন কাজটা। আশ্বাস দিয়ে, বুঝিয়ে শান্ত রাখা হয়েছিল তাকে সেখানে। ইজমার মা-ও একজন চিকিৎসক। তিনি কর্মস্থল থেকে ফিরে এসে আবিষ্কার করবেন ইজমাকে দারুণ সুন্দর দেখাচ্ছে—এভাবে মাকে অবাক করে দিতে পারার আনন্দে চুল কাটিয়েছিল ইজমা। চুল কাটার মাঝামাঝি সময়ে অবশ্য ইজমা চলে যেতে চেয়েছিল সেখান থেকে। মাথার এক পাশের চুল ছোট আর অন্য পাশ বড় থাকলে অসুন্দর দেখাবে—এটি বুঝিয়ে বলার পর কাজটা শেষ পর্যন্ত ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছিল।
চুল কাটানোর সপ্তাহখানেক আগে থেকে শিশুকে চুল কাটার ব্যাপারে ইতিবাচক ধারণা দেওয়া উচিত বলে জানালেন সৌন্দর্যচর্চা কেন্দ্র পারসোনার পরিচালক নুজহাত খান। তাঁর পরামর্শ—
• বাসায় পুতুলের চুল কাটার খেলা হতে পারে। ছোট্ট খেলনা কাঁচি (প্লাস্টিকের তৈরি) দিয়ে পুতুলের চুল কাটার খেলায় শিশু বুঝতে পারে, এটি খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়।
• শিশুদের চুল কাটানোর মজার মজার ভিডিও দেখাতে পারেন ইউটিউব থেকে। চুল কাটানোর মাঝে আনন্দ খুঁজে পাবে সে।
• চুল কাটালে সুন্দর দেখায়, এই ধারণা দেওয়া যেতে পারে শিশুকে।
• চুল কাটালে চুল আবার গজায়, সেটিও বলে নিতে পারেন। তাহলে শিশুর মন খারাপও হবে না।
চুল ছাঁটার জায়গাটা শিশুর জন্য আনন্দদায়ক হলে ভালো হয়। ছোটদের চুল কাটার জায়গাটায় গাড়ির মতো দেখতে চেয়ার, কার্টুন, দেয়ালে স্টিকার থাকতেই পারে। বাসা থেকে শিশুর পছন্দের খেলনা নিয়েও আসা যেতে পারে। যাঁরা শিশুদের চুল কাটেন, তাঁদেরও শিশুদের সঙ্গে যোগাযোগটা হতে হবে ঠিকঠাক। এমনই জানালেন নুজহাত খান। ধৈর্য নিয়ে সাবধানে শিশুর চুল কাটতে হবে তাঁকে। আদর করে, মিষ্টি কথা বলে ভাব জমিয়ে নেওয়ার পরেই তো শিশু সেখানে স্বস্তি অনুভব করবে। ভিন্ন একটা পরিবেশে গিয়ে অচেনা মানুষ দেখে শিশু যেন ভয় না পায়। তাকে সেলুন এবং চুল কাটা বিষয়ে মজার ধারণা দেওয়া থাকলে সেখানে গিয়ে ভয় পেয়ে যাবে না। আবার খুব বেশি সমস্যা মনে হলে বাসাতেও পেশাদার ব্যক্তির মাধ্যমে চুল কাটিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়।
ইজমা ট্রিমার দিয়ে বাবাকে দাড়ি ছাঁটতে দেখে অভ্যস্ত। ওটার শব্দের সঙ্গে সে পরিচিত। আবার বাবা চুল কেটে এসে নিজের চেহারার ইতিবাচক পরিবর্তনের দিকে লক্ষ করতে বলেন। সঙ্গে করে একবার নিয়েও গিয়েছিলেন, নিজের চুল কাটিয়ে এরপর কন্যার চুল কাটানো যাবে ভেবে। তবে বাবার চুল কাটা হয়ে যাওয়ার পর ইজমা আর রাজি হয়নি। এ রকম হলেও সেটি মেনে নেওয়া ভালো। তিনটি দিন বোঝানোর পর কন্যা আবার নরসুন্দরের কাছে যেতে রাজি হয়েছে। চুলের কারণে গরমে অস্বস্তি হচ্ছে, এটি বোঝাতে পারলেও শিশু একসময় রাজি হতে পারে চুল কাটাতে।
• শিশুকে ভয় দেখানো যাবে না। নেতিবাচক শব্দচয়ন থেকে বিরত থাকতে হবে। ‘নড়ো না, কেটে যাবে’ কিংবা ‘ব্যথা পাবে কিন্তু’ এ ধরনের বাক্য শিশুর আনন্দ আর স্বস্তিকে বিদায় দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।
• জোর করবেন না। তাড়াহুড়া করবেন না। শিশু জেদ করলে বা রাজি না হলে ধৈর্যহারা হবেন না। ধীরে-সুস্থে সময় নিয়ে বুঝিয়ে (প্রয়োজনে কয়েক দিন পর) এরপর নিয়ে যেতে হবে চুল কাটাতে।