মৌসুম

শিশুর শীতপোশাক থাক ভালো

শিশুর শীতপোশাক প​রিষ্কার থাকা চাই। মডেল: ওয়াসিফ, ছবি: নকশা
শিশুর শীতপোশাক প​রিষ্কার থাকা চাই। মডেল: ওয়াসিফ, ছবি: নকশা

জবুথবু শীত কাবু করে সবাইকে। তবে আক্রমণের তিরটা বেশি থাকে শিশুদের দিকেই। মা-বাবা শীতের আক্রমণ থেকে সন্তানকে বাঁচানোর জন্য উল-ফ্লানেল-পশমের নানা কাপড় বেছে নেন বর্ম হিসেবে। মাথার টুপি থেকে শুরু করে পায়ের মোজা সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয় এ সময়টায়। ফলে শিশুর শীতপোশাকের যত্নআত্তিতেও নজর দিতে হয় একটু বেশি। শিশুর শীতের পোশাক এবং এর যত্নআত্তি নিয়ে কথা বলেছেন গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়নশিল্প বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহমুদা আক্তার।
মাহমুদা বলেন, শিশু যখন একটু একটু কথা বলতে শিখে, হাঁটতে শিখে তখন তার পোশাকটা হয় ফ্যাশনেবল। বাসায় এবং বাসার বাইরে তখন ফ্লানেল কিংবা উলের গরম জামা, সোয়েটার, পায়জামা, কাপড়ের টুপি দিতে পারেন। তবে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় হতে হবে সতর্ক। বাইরের বাতাস থেকে শিশুকে রক্ষা করতে হলে হাতমোজা, কানটুপি ও মাফলার সঙ্গে নিতে ভুলবেন না। খুব শীত পড়লে ঘরেও দিতে পারেন এই অনুষঙ্গগুলো। ঘুমানোর সময় এসব খুলে দেওয়া ভালো, তা না হলে ঘেমে ঠান্ডা বসে যেতে পারে। টাইলস হোক কিংবা সাধারণ মেঝে, শীতে মেঝের ঠান্ডা থেকে রেহাই পেতে বাসায়ও পরাতে হবে জুতা। ইচ্ছে করলে উলের জুতাও হতে পারে শিশুর পায়ের সঙ্গী।
এই সময়ে নবজাতকের যত্নটা নিতে হয় একটু বিশেষভাবে। মাহমুদা আক্তার আরও জানান, নবজাতকের গরম কাপড়ের ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে বাবা-মাকে। এদের ত্বক থাকে খুব কোমল। ভুলেও কখনো সিল্ক পোশাক পরানো উচিত নয়। অনেকেই সরাসরি উলের পোশাক পরিয়ে ফেলেন, এটা একদম ঠিক নয়। এতে শিশুর শ্বাসকষ্ট হতে পারে এবং উলের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লোম থেকে অ্যালার্জি ও র্যা শ হতে পারে। অল্প শীতের রাতে ঘুমানোর সময় মাথায় সুতি কাপড়ের স্কার্ফ বা টুপি এবং একটু ভারী সুতি কাপড়ের জামা পরিয়ে রাখলেই ভালো। শীতটা যখন বেশি পড়বে তখন পরাতে হবে উল বা ফ্লানেলের তৈরি গরম পোশাক, জামা, সোয়েটার, পায়জামা, কানটুপি, জুতা, উল বা ফ্লানেল কাপড়ের মোজা, জুতা ইত্যাদি। ঘুমের সময় ছোট কম্বল হোক সঙ্গী।
কীভাবে ভালো থাকবে শীতপোশাক?
শিশুর শীতপোশাকের যত্ন নিতে হবে নিয়মিত। এই যত্নের ব্যাপারে কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের ভাই ভাই ড্রাইওয়াশের ব্যবস্থাপক আবদুস সালাম। তিনি জানান, বেশি পরিমাণে ডিটারজেন্ট পাউডার ব্যবহার না করে শীতের পোশাক পরিষ্কারের জন্য হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। শীতপোশাকের বেশির ভাগ যেহেতু উলের, তাই কিনে নিতে পারেন এর জন্য বিশেষ ডিটারজেন্ট। উলের পোশাক ধোয়ার জন্য পাওয়া যাচ্ছে বিশেষ ধরনের ডিটারজেন্ট। এই ডিটারজেন্ট ভালো করে পানির সঙ্গে মিশিয়ে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রেখে হালকা হাতে কেচে ধুয়ে ফেলতে হবে। মনে রাখতে হবে, বেশি জোরে কাচা বা নিংড়ানো যাবে না। উলের কাপড় ওয়াশিং মেশিনেও ধোয়া যাবে। শিশুর কাপড়ের বেশির ভাগ থাকে ফ্লানেলের। এটিও উলের মতো ভিজিয়ে কেচে নিলেই হয়।
শিশুদের কাপড়ে নানা রকমের দাগ ভরে থাকে, এটা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মাহমুদা আক্তার উল্লেখ করলেন এই কাপড়গুলোতে যদি কোনো দাগ পড়ে তাহলে ওই দাগের ওপর লেবু ঘষে নিতে হবে। ইচ্ছে করলে একটুখানি ভিনেগার মিশিয়ে কাপড় ভেজাতে পারেন। তাতে বাড়তি ময়লা পরিষ্কার হয়ে যাবে। আর মেনে চলতে পারেন যা—
 শিশুর কাপড় বাতাসের চেয়ে রোদে শুকানোই ভালো।
 যদি বাসায় পর্যাপ্ত রোদ না থাকে, তাহলে বাতাসে শুকানোর পর একটু গ্যাসের চুলায় কিংবা ইস্ত্রিতে গরম করে দিতে হবে।
 শিশুর শীতের পোশাক ধোয়ার জন্য কম ক্ষারযুক্ত সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
 আপনার সন্তানকে যদি কম্বলের ওমে ঘুম পাড়ান তবে কম্বলে কভার ব্যবহার করতে পারেন। কারণ কম্বলের আঁশ শিশুর বিরক্তির কারণ হতে পারে।
 শিশুর কাপড়ে লোশন, তেলজাতীয় জিনিসের ব্যবহার বেশি করা হয়। ফলে কাপড়ে দাগ থেকে যায়। ইচ্ছে করলে ড্রাইওয়াশের মাধ্যমে এই দাগ উঠিয়ে নিতে পারেন।
 আর শীতের বিদায়বেলায় আপনার ছোট্ট শিশুর কাপড়টাও পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়েই তারপর আলমারিতে রাখবেন। তাহলে কাপড়গুলো ভালো থাকবে।