কুশল সংবাদ

শিশুর হাম হয়নি তো?

হঠাৎ হামে আক্রান্ত হওয়ার হার বাড়ছে। এমনকি মৃত্যুর খবরও পাওয়া যাচ্ছে। পুষ্টিহীনতায় ভোগা শিশুরা হামে আক্রান্ত হলে এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। ঠিকমতো এ রোগের চিকিৎসা না করা হলে রোগী নানা জটিলতায় পড়তে পারে। শিশুরা হামে বেশি আক্রান্ত হয়। সাধারণত আক্রান্ত রোগীর হাঁচি-কাশি থেকে এই ভাইরাস আশপাশের সুস্থ মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল আমিন মৃধা বলেন, ‘নয় মাসের কম বয়সী শিশুর হাম সাধারণত দেখা যায় না। এর ভাইরাস শরীরে প্রবেশের এক-দুই সপ্তাহ পর রোগের লক্ষণ দেখা দেয়। আর শিশু যদি আগে থেকে ভিটামিন এ-র অভাবে ভোগে, তবে হাম হলে শিশু অন্ধ হয়ে যেতে পারে। সঠিক সময়ে প্রতিষেধক টিকা দিলে হাম হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।’

লক্ষণ কী?

অন্যান্য ভাইরাল জ্বরের মতো প্রথমে জ্বর ও শরীর ম্যাজম্যাজ বা হালকা ব্যথা হয়। প্রথম এক-দুদিন তীব্র জ্বরও হতে পারে। চোখ-মুখ ফুলে উঠতে পারে। চোখ লাল হয়ে যেতে পারে, চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে। নাক দিয়ে পানি পড়তে পারে এবং হাঁচিও হয়। শরীরে র‍্যাশ বা ছোট ছোট লালচে গুটি বা ফুসকুড়ি দেখা দেয়। দ্রুত তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ সময়, বিশেষ করে শিশুরা কিছু খেতে চায় না এবং ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়ে। তবে র‍্যাশ চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু ইত্যাদি ভাইরাল জ্বরেও হতে পারে। তাই এসব লক্ষণ দেখলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

করণীয় কী?

হাম হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশুরা ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়। হামে আক্রান্ত রোগীকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। আর একটু পরপর ভেজা তোয়ালে বা গামছা বা নরম কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। হাম হলে রোগীকে পুরোপুরি বিশ্রামে থাকতে হয়। এ সময় বাসা থেকে বের না হওয়াই ভালো। অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। স্বাভাবিক খাবারদাবারের পাশাপাশি রোগীকে বেশি বেশি তরল খাবারও দিতে হবে। যত বেশি পারা যায় পুষ্টিকর খাবার, ভিটামিন, বিশেষ করে ভিটামিন এ দিতে হবে। তাহলে জটিলতা রোধ করা যাবে।

হাম কি ছোঁয়াচে রোগ?

হাম ছোঁয়াচে রোগ। সাধারণত হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। একবার হাম হলে সাধারণত দ্বিতীয়বার আর এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। শিশুদের মতো বড়দেরও হাম হতে পারে। এর ভ্যাকসিন দেওয়া না থাকলে হাম হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে।

চিকিৎসায় অবহেলা বা দেরি নয়

হাম হলে প্রথমেই সতর্কতা অবলম্বন না করলে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে৷ হামের কারণে সাধারণত যে জটিলতাগুলো দেখা দেয়, সেসব হলো: মস্তিষ্কের প্রদাহ, মুখের প্রদাহ, অন্ত্রের প্রদাহ, পেটের অসুখ, নিউমোনিয়া, শ্বাসনালির প্রদাহ, চোখের কর্নিয়ার প্রদাহ, কর্নিয়ায় আলসার বা ঘা হওয়া, কানের প্রদাহ, পুষ্টিহীনতা ও শরীরের ওজন মারাত্মকভাবে কমে যাওয়া ইত্যাদি।

প্রতিরোধ কীভাবে?

ভ্যাকসিনেশন হলো প্রধান প্রতিরোধব্যবস্থা। সময়মতো প্রত্যেক শিশুকে হামের ভ্যাকসিন দিতে হবে। ভালো বিষয় হলো, সাধারণত একবার হলে আর হতে দেখা যায় না। যেহেতু হাঁচি, কাশি ও স্পর্শের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়, তাই আক্রান্ত শিশুকে স্কুলে যেতে না দেওয়া ভালো। আক্রান্ত ব্যক্তিকে গর্ভবতী মা এবং জটিল রোগে আক্রান্ত রোগী থেকে দূরে রাখতে হবে। হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় রুমাল ব্যবহার করতে হবে।

লেখক: চিকিৎসক