
২৫ ডিসেম্বর। কনকনে শীতের রাত। দূরের গির্জার ঘণ্টাধ্বনির সঙ্গে শোনা যায় মিষ্টি সুরের গান ‘শোনো স্বর্গদূতের রব, নবজাত রাজার স্তব’। ঘুরে-ফিরে বারবার আসে যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন। শীতকাল এলেই যেন যিশুর প্রত্যেক ভক্তের মনে বড়দিনের আনন্দধ্বনি বেজে ওঠে।
ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ। প্রতিটি ঘরেই এ সময় চলে পিঠা তৈরির প্রস্তুতি। পিঠা তৈরির এ উত্সব শহরের চেয়ে গ্রামেই বেশি দেখা যায়। শুরু হয় পাকন পিঠা দিয়ে। তারপর আসে পাটিসাপটা, কুলি পিঠা, ফুলঝুড়ি পিঠা আরও কত-কী! গ্রামবাংলার বড়দিন এখন অনেকটা শহুরে ধাঁচের হয়ে গেছে। আমরা যে কারও জন্মদিনে কেক কেটে থাকি। আর তাই যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিনেও বিভিন্ন ধরনের কেকের ব্যবস্থা রাখা হয়। কেনা কেকের চেয়ে বর্তমানে বেশির ভাগ মানুষ নিজেরাই বাসায় কেক বানায় আর উপভোগ করে।
পিঠা-কেক বানানো চলে। এরই সঙ্গে শুরু হয় ঝকঝকে-চকমকে নানা ঝালর দিয়ে ঘর সাজানোর কাজ। সাজসজ্জার সবচেয়ে মূল আকর্ষণ হলো ক্রিসমাস-ট্রি। সুন্দর রঙিন বল আর মরিচ-বাতির সাহায্যে আলোকিত করা হয় গাছটিকে। প্রতিটি বাড়ির ছাদে বা বারান্দায় ঝোলানো হয় বিশাল আকৃতির আলোকোজ্জ্বল তারা। কোনো কোনো পাড়া বা মহল্লায় তুলনামূলক সুন্দর তারাটিকে পুরস্কৃতও করা হয়।
গ্রামের পাড়া-মহল্লায় আরেকটি আকর্ষণ হলো বড়দিনের কীর্তন। দল বেঁধে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কীর্তনের গান শোনায় ছেলেমেয়েরা। এ ক্ষেত্রে ছেলেদের প্রাধান্য বেশি দেখা যায়। কোনো কোনো গ্রামে আবার কীর্তন গানের সঙ্গে ছোট শিশুদের সং সেজে নৃত্যাভিনয় করতে দেখা যায়। গ্রামের একজন মুরব্বির কাছ থেকে জানতে পেরেছি, ১০-১২ বছর আগেও প্রতিবছর বড়দিন উপলক্ষে আয়োজন করা হতো বিখ্যাত লেখকদের গল্প অবলম্বনে মঞ্চনাটকের। এখন আর সে রকমটি দেখা যায় না।
স্যাটেলাইট টিভির সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু যেন ডিজিটাল হয়ে গেছে। যুবসমাজ এই ডিজিটালের স্রোতে নিজেদের ভাসিয়ে দিয়েছে। আর এরই সঙ্গে উঠে গেছে গ্রামভিত্তিক মঞ্চনাটকের আয়োজন। কিন্তু তাই বলে বড়দিনের আনন্দঘন আমেজের কমতি ঘটেনি কোনো।
বড়দিনে একে অন্যকে উপহার দেওয়ার প্রথা আগে যেমন ছিল, এখনো তেমনই আছে। নিজেদের ঘরের লোকজন ছাড়াও আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে উপহারস্বরূপ কোনো উপহার বা শুভেচ্ছা কার্ড পাঠানো হয়। কেক, পিঠা, কীর্তন, নতুন পোশাক আর উপহার—সব মিলিয়ে বড়দিন হয়ে ওঠে সবচেয়ে আনন্দঘন দিন।
যাঁরা বিদেশবিভুঁইয়ে থাকেন, তাঁরা পরিবারের সঙ্গে বড়দিনের ছুটি কাটাতে এবং বড়দিনের আনন্দকে ভাগ করে নিতে দেশে চলে আসেন।
সবাই দল বেঁধে গির্জায় যাওয়া, নতুন পোশাক পরার আনন্দ, একের অন্যের সঙ্গে করমর্দন করে Merry Christmas বলা—আবহমান কাল ধরে এসবই বয়ে চলেছে বিশ্বের প্রত্যেক খ্রিষ্ট-ভক্তের মাঝে। ‘বড়দিন’ দিনটি আসলে বড় নয়। তবে এ দিনে সবার মনে আনন্দ ও ভালোবাসার ক্ষেত্রটা অনেক বড়। তার তাই এমন দিনে সবাইকে জানাই বড়দিনের শুভেচ্ছা, ‘শুভ বড়দিন’।