শরীর-মনের জন্য উপকারী সাঁতার

সবার জন্য সাঁতার

.

শরীরের বাড়তি ওজন ঝরিয়ে ফেলতে চান? এ জন্য দ্রুত হাঁটা বা দৌড়ানোসহ নানা রকমের ব্যায়াম করতে পারেন। তবে খুব ভালো হয়, যদি সাঁতার কাটতে পারেন। কারণ, এতে শরীরের সামগ্রিক ব্যায়াম সম্পন্ন হয়।
নিয়মিত সাঁতার কাটুন। একেকটি সপ্তাহ পেরোবে আর আপনি নিজের শরীরে বাড়তি শক্তি-সামর্থ্য অনুভব করতে পারবেন। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতি হওয়ার কারণে এই ব্যায়ামে শরীরের কোনো ধরনের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি নেই। বরং দৌড়ানোর চেয়ে সাঁতার কাটাকে আপনার সহজও মনে হতে পারে। সাঁতারে অভ্যস্ত অনেকেই বলেছেন, অন্যান্য ব্যায়ামকে তাঁদের যন্ত্রণাকর মনে হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীরচর্চা গবেষণাকেন্দ্রের পরিচালক রবার্ট এ রবার্জস বলছেন, আর্থ্রাইটিস, হাড় ও পেশিতন্তুর বিভিন্ন রোগ যাঁদের আছে, সাঁতার কাটলে তাঁদের শরীরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার ঝুঁকি নেই। ব্যায়ামজনিত শ্বাসকষ্ট যাঁদের হয়, তাঁরাও নির্ভয়ে সাঁতার কাটতে পারেন।
পানির প্লবতার কারণে মানুষ জলাশয়ে ভেসে থাকতে পারে। স্থলভূমিতে শারীরিক ব্যায়াম করলে অস্থিসন্ধি ও নাজুক হাড়ে চোট লাগতে পারে। কিন্তু সাঁতারে সে রকম হওয়ার আশঙ্কা প্রায় নেই। কোমর পর্যন্ত নিমজ্জিত অবস্থায় আমাদের শরীরকে তার মোট ওজনের ঠিক ৫০ শতাংশ বহন করতে হয়। বুকসমান পানিতে ডুবে থাকলে শরীরকে আরও হালকা লাগে, কারণ তখন মাত্র ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ ওজন বইতে হয়। আর গলাসমান পানিতে ভেসে থাকলে শরীরের মাত্র ১০ শতাংশ ওজন বইতে হয়। ক্রীড়াবিদেরা অনেক সময় শরীরের অন্যান্য স্থানের আঘাত থাকা অবস্থায় ব্যায়াম অব্যাহত রাখার জন্য সাঁতারকে বেছে নেন। আর্থ্রাইটিস এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধকতায় আক্রান্ত লোকজনও নিজেদের শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাঁতার কাটতে পারেন। পাশাপাশি তাঁদের শারীরিক ব্যথা কমানো এবং নমনীয়তা বৃদ্ধির জন্যও সহায়ক হতে পারে সাঁতার।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাঁতার কাটলে শরীরের সব পেশির উপকার হয়। কাঁধ, পিঠ, কোমর, পা, নিতম্ব এবং নিম্নাংশের কোনো অংশই বাদ পড়ে না। আর পানি সব দিক থেকে বাতাসের চেয়ে ১২ গুণ বেশি বাধা দিতে পারে বলে তা মানুষের শারীরিক সামর্থ্য বাড়াতে সত্যিই বেশ সহায়ক। ফলে এই ব্যায়াম করলে হৃদ্রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে।
কিন্তু সাঁতার কাটলে কি ওজন কমে? ব্যাপারটা নির্ভর করছে সাঁতারে কতটা ক্যালরি খরচ হয়, তার ওপর। গবেষকদের অনেকে মনে করেন, সাঁতার কেটে ওজন কমানোর কাজটা কঠিন। কারণ, এতে বিপাক প্রক্রিয়ার গতি কিছুটা কমে যায়। আর তাতে শরীরের ক্যালরি খরচ হওয়ার হার স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়। তবে অন্যান্য ব্যায়ামের সঙ্গে নিয়ম মেনে কিছু বিশেষ প্রক্রিয়ায় সাঁতার কাটলে ওজন কমানো সম্ভব। সাঁতার কেটে ওজন কমানোর দৃষ্টান্ত যে একেবারেই নেই, তা নয়।
যদি নতুন করে সাঁতার শিখতে চান, তাহলে কোনো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুসরণ করুন। শুরুতে ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে হবে। প্রথমে টানা ১০ মিনিট, পরে সেই সময় বাড়িয়ে ৩০ মিনিট পর্যন্ত করা যেতে পারে। সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচবার সাঁতার কাটতে হবে। হতাশ হওয়া চলবে না। বিভিন্ন ভঙ্গি ও কৌশলের সাঁতার শিখে নিন। তারপর নিয়মিত অনুশীলন চালিয়ে যাওয়ার পালা। আর সাঁতার কাটার সময় হালকা ও আরামদায়ক পোশাক ব্যবহার করতে হবে।
সূত্র: ওয়েবএমডি