পাঠক হাজির

সরি

.

সেদিন নতুন ব্যাচের প্রথম ক্লাস ছিল। হাতে সময় নেই, তাই জোরকদমে হাঁটছিলাম। আচমকা পেছন থেকে ধাক্কা খেলাম। কেউ একজন পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছিল। প্রচণ্ড রাগ হলো। চিৎকার করে উঠলাম, ‘এটা কী হলো!’ মেয়েটা পেছন ফিরেই বলতে থাকল, ‘আসলে আজকে আমার প্রথম ক্লাস, লেট করে ফেলেছি। তড়িঘড়ি করতে গিয়ে...সরি ভাইয়া, সরি।’
মেয়েটা ‘সরি’ বলেই যাচ্ছে, আমি তাকিয়ে থাকলাম তার চোখের দিকে। নীল পোশাকের মেয়েটিকে দেখে মনে হচ্ছিল, যেন ডানাকাটা পরি। চেহারায় কোনো আদিখ্যেতা নেই।
সেদিন আমার মুখ থেকে কোনো কথা সরেনি। পরদিন ক্লাসে এসে খুঁজতে শুরু করলাম তাকে। নামটাও শোনা হয়নি। তাই খুঁজে বের করতে একটু কষ্ট হলো। কাছে গিয়েই ডাক দিলাম—‘এই শোনো।’
—‘ভাইয়া, কাল আসলে বুঝতে পারিনি, সরি।’
আমি রাখঢাক না করে সরাসরি তার নাম জানতে চাইলাম।
ছোট উত্তরে জানাল—ঐশী। নাম জেনে ‘বড় ভাই’সুলভ ভাব নিয়ে বললাম, ‘আচ্ছা, যাও।’
সে চলে গেল। এরপর থেকে রোজ দেখা হতো। এক-আধটু কথাও হতো। ঐশীর আচরণে অচেনা এক চঞ্চলতা ছিল। তবে হাসত কম। মনে হতো, কেউ তাকে হাসতে মানা করে দিয়েছে। আবার যখন হাসত, মনে হতো এমন হাসির জন্য সারাটা জীবন অপেক্ষা
করা যায়।
ধীরে ধীরে জানলাম ঐশীকে। তার জীবনের কষ্টগুলো বোঝার চেষ্টা করলাম। তার পরিবার বেশ রক্ষণশীল। এইচএসসির পর শর্ত ছিল, মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেলেই কেবল পড়ানো হবে। কিন্তু সে ভর্তির সুযোগ পায়নি। এখন বোনের বাসায় থেকে লুকিয়ে পড়াশোনা করে। থাক সেসব কথা; বরং আমাদের জীবনে আসি।
সেদিন ছিল আমার জন্মদিন। মেসেজ দিয়ে ঐশী আমাকে ডেকেছিল। টিউশনির চাপ আর সকাল থেকে ঝুমবৃষ্টির ফাঁদে পড়ে ভুলেই গিয়েছিলাম। সময়ের চার ঘণ্টা পরে যখন মনে হলো, তখনই বৃষ্টি মাথায় করে দে ছুট? আমাকে অবাক করে তখনো ঐশী দাঁড়িয়ে। হাতে একগুচ্ছ ফুল।
কিছুদিন পর দেখি, সে আর ক্লাসে আসে না। ফোনও বন্ধ। একদিন এসএমএস এল, ‘আমার বিয়ে পরশু। দাওয়াত রইল।’ বুকের ভেতরটা কেমন চিনচিন করে উঠল। কিছুই বুঝলাম না। শুধু নীল পোশাকের সেই ঐশীকে মনে হতে লাগল।
সব ভুলে পড়াশোনায় মনোযোগ দিলাম। মাস্টার্স শেষ হলো। পার্টটাইম চাকরি ছেড়ে দেশের বাইরে চলে গেলাম। বছর দুয়েক পর অচেনা ঐশীর ফোন—‘কেমন আছ ভাইয়া?’
—‘ভালো, তুমি? সংসার কেমন চলছে?’
—‘আমি তো বিয়ে করিনি।’ ঐশীর কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না।
‘বিয়ে করোনি মানে?’ আমি আবার জিজ্ঞেস করি। ‘তোমার-আমার যে ছবি ছিল, পাত্রপক্ষ সেটা দেখল। তারপর বিয়ে ভেঙে গেছে।’ ঐশীর কথা শুনে আমি নাচব নাকি কাঁদব—বুঝতে পারছিলাম না!
তাসনিম, রংপুর।