বাজার ঘুরে

সাধ আর সাধ্যে ঈদবাজার

ঢাকার বিভিন্ন বাজারে কম দামে ভালো মানের পোশাক কিনতে পাওয়া যায়। মডেল: রুসি ও সুমিতা, ছবি: সুমন ইউসুফ
ঢাকার বিভিন্ন বাজারে কম দামে ভালো মানের পোশাক কিনতে পাওয়া যায়। মডেল: রুসি ও সুমিতা, ছবি: সুমন ইউসুফ

কদিন পরেই পবিত্র রমজান মাস। রমজানের শেষেই ঈদ। ঈদকে সামনে রেখে প্রিয়জনের জন্য তো কিছু কেনাকাটা করতেই হয়। এর মধ্যেই যে রয়েছে একধরনের আনন্দ। আর এই আনন্দটা যদি হয় সাধ্যের মধ্যে, তাহলে তো ষোলো আনাই পূর্ণ। রাজধানীতে এমন অনেক বাজার আছে, যেখানে কম খরচে ভালো মানের পোশাক কিনতে পারবেন। তবে এসব জায়গায় আপনাকে দক্ষ হতে হবে দামাদামি করার ওপর।

শিশুর ঈদপোশাক
সামর্থ্যের মধ্যে শিশুর ঈদপোশাক পেয়ে যাবেন ঢাকার নিউমার্কেট, গাউছিয়া, নূরজাহান মার্কেট, মিরপুর-১০ কিংবা মৌচাক মার্কেটে। এখানে নবজাতক থেকে শুরু করে ১০-১২ বছর বয়সী শিশুর পোশাক রয়েছে। কথা হয় নূরজাহান মার্কেটের বিক্রেতা আশফাকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঈদ এবার বর্ষাকালের শুরুর দিকে। তাই বাজারে শিশুদের জন্য সুতি, ভয়েল, লিনেন, কটন কাপড়ের পোশাক আনা হয়েছে।’ আর এই তালিকায় ছেলে বাচ্চাদের জন্য রয়েছে টি-শার্ট, বাটিকের ফতুয়া, শার্ট ও পাঞ্জাবি। ফতুয়া ও শার্টে রয়েছে বিভিন্ন প্রিন্ট আর টি-শার্টে থাকছে বিভিন্ন লেখা ও কার্টুন চরিত্র। এ ছাড়া পাঞ্জাবি-পায়জামা কিনতে পারেন আজিজ সুপার মার্কেট ও এলিফ্যান্ট রোড থেকে। ঢাকা কলেজের বিপরীতে থাকা মার্কেট কিংবা বঙ্গবাজার থেকেও কেনাকাটা করতে পারেন। খাদির পোশাক কিনে কাপড় বানাতে চাইলে গুলিস্তানের খদ্দর মার্কেট ঘুরে আসতে পারেন।
মেয়েশিশুদের জন্য কামিজ, কুর্তা, লেহেঙ্গা, স্কার্ট, ফ্রকও পেয়ে যাবেন এই মার্কেটগুলোয়। নূরজাহান মার্কেট থেকে কিনতে পারেন পাশ্চাত্য ধাঁচের বিভিন্ন পোশাক যেমন স্কার্ট, টপ, শার্ট। আশফাকুর রহমান জানান, এখন কামিজের সঙ্গে শিশুরা গাউন, মেঝেছোঁয়া ফ্রকগুলোও পরছে। চাইলে আপনি কাপড় কিনে বানিয়েও নিতে পারেন সাধ্যের মাঝে। কামিজ, লেহেঙ্গা কিনতে চাইলে নিউমার্কেট, চাঁদনী চক, মৌচাক মার্কেট ঘুরে আসতে পারেন।
এখানে কামিজ পাওয়া যাবে ৩৫০ টাকা থেকে। লেহেঙ্গার দামটা একটু বেশিই হবে। ৮০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে কিনতে পারেন এই পোশাক।

শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজ
ঈদের পোশাকের তালিকায় শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজ না হলেই নয়। আর পোশাকটাও হওয়া চাই একটু জমকালো। চাঁদনী চকের ফ্যাশন ওয়ার্ল্ডের বিক্রেতা ইমরুল কায়েস বলেন, ‘একটু জমকালো পোশাকের মধ্যে জর্জেট, সিল্কের চাহিদা বেশি। আর এই সঙ্গে সুতি, কটন কিংবা ভয়েল কাপড় তো সব সময়ই বিক্রি করছি।’ বিভিন্ন রঙের জর্জেট ও সিল্কের থ্রি-পিস, গাউন, ওয়ান পিস রয়েছে বাজারে। সিল্কের ওপর বিভিন্ন রঙের ডিজিটাল প্রিন্টের চাহিদাও রয়েছে। আবার পুঁতি, পাড় বসানো ভারী কাজ করা জর্জেটের কামিজও পাওয়া যাচ্ছে এই ঈদে।
এই পোশাকগুলো পেয়ে যাবেন চাঁদনী চক, নিউমার্কেট, মিরপুর-১০-এর দোকানগুলোয়। হাতের কাজ করা লিনেনের ওয়ান পিস, সেই সঙ্গে একটু ভিন্ন ধাঁচের টপ, ফতুয়া, কুর্তা পাওয়া যাবে নূরজাহান ও মৌচাক মার্কেটে। আর এই আবহাওয়ায় সুতি ও বাটিকের কামিজ পাবেন গাউছিয়ায়।
জর্জেট এবং সিল্ক কাপড়ের প্রতি গজ ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে পাবেন। আর সুতি ও লিনেনের দাম পড়বে গজপ্রতি ৬০ টাকা। জামার জন্য ক্রুশকাঁটা বা পুঁতি, ইয়ক পাবেন ১৫ টাকা থেকেই।
শাড়ির জন্য যেতে পারেন মিরপুর-১০, বেনারসিপল্লি, হকার্স মার্কেট, গাউছিয়ার ২ ও ৪ তলায়। সাধ্যের মধ্যে বাটিক, সুতি, হাফসিল্ক, তাঁত ও জর্জেটের ওপর কাজ করা শাড়ি পাবেন ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে। এ ছাড়া ইস্টার্ন প্লাজায় হাজার তিনেকের মধ্যে শাড়ি কিনতে পারেন।

ছেলেদের পোশাক
পাঞ্জাবি-পায়জামার বিভিন্ন দোকান রয়েছে পুরো এলিফ্যান্ট রোডে। আজিজ সুপার মার্কেটেও এক থেকে দেড় হাজারের মধ্যে পাঞ্জাবি, ফতুয়া পাওয়া যাবে। আর টি-শার্ট, পোলো শার্ট, প্যান্ট পাবেন মিরপুর-১০, সিঙ্গাপুর মার্কেটের দোতলায়।

গজ কাপড়ের জন্য
রেডিমেড সালোয়ার-কামিজ না কিনে আপনি চাইলে কাপড় কিনেও পোশাক বানিয়ে নিতে পারেন। সুতি থেকে শুরু করে ভারী জর্জেট কাপড়ের ওপর লেস, চওড়া কিংবা চিকন পাড়, পুঁতি, কাঠ, মেটালযুক্ত ইয়ক বসাতে পারেন। চাইলে নিজে নকশা করে শাড়িতে পাড়, গ্লাস, বিভিন্ন কাপড়ের পোশাক বানিয়েও নিতে পারেন। ছেলেদের পাঞ্জাবির কাপড়ও কিনতে পারেন চাঁদনী চকের নিচতলা, ইসলামপুর মার্কেট থেকে। গজ কাপড়ের দাম নির্ভর করবে কাজের ওপর। ১৫০ টাকা থেকেও যেমন কাপড় পাওয়া যাবে, তেমনি ভারী কাজ করা কাপড়ের দাম পড়বে ৩৫০-৪৫০ টাকা করে।
এ ছাড়া অনেকেরই ধারণা থাকে নির্দিষ্ট ফ্যাশন হাউসগুলোয় পোশাকের দাম একটু বেশি থাকে। তবে কিছু ফ্যাশন হাউস আছে, যেখানে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সামর্থ্যের মধ্যেও পোশাক পাওয়া যায়। আড়ং, নিপুণ ও আজিজ সুপার মার্কেটের বেশ কিছু ফ্যাশন হাউসে শিশুদের ফতুয়া, নিমা রয়েছে ৩০০ টাকার মধ্যে। ছেলেদের পাঞ্জাবি পাওয়া যাবে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে।

যেখানে যেমন
নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক, মৌচাক, ইসলামপুর, নূরজাহান, সিঙ্গাপুর মার্কেট, রাজধানী মার্কেট কিংবা মিরপুর ১০-এ শিশু থেকে বয়স্ক সদস্যদের ঈদের পোশাক পাবেন ১৫০ থেকে ৩ হাজার টাকার মধ্যে।