ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ নানা রোগে এখন আক্রান্ত হচ্ছে সব বয়সী মানুষ। শিশুরা তো আরও ঝুঁকিতে। মশারি ব্যবহার করলে মশার এই অত্যাচার থেকে নিজে যেমন বাঁচতে পারবেন, তেমনি বাঁচাতে পারবেন আপনার সন্তানকেও। তাই ব্যাঘাতহীন ঘুমের জন্য মশারি ব্যবহার উত্তম এবং নিরাপদও। বাজারে শিশুদের জন্য আছে বাহারি মশারি। এসব মশারি যেমন শিশুকে নিরাপদ রাখবে, তেমনি রঙিন মশারি ঘরে যোগ করবে বাড়তি সৌন্দর্য।
মশা থেকে বাঁচতে
নিজ ঘরে মশা থেকে বাঁচার সবচেয়ে সস্তা, দীর্ঘস্থায়ী, কার্যকর এবং নিরাপদ উপায়টির নাম মশারি। কয়েল বা ওষুধে মশা না–ও মরতে পারে, তবে চারদিক গুঁজে নিয়ে এবং ভেতরে মশা নেই, সেটা নিশ্চিত করে মশারির ভেতর ঢুকে বসে থাকলে মশা যে কামড়াতে পারবে না, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। নিউমার্কেটের মশারি ও পর্দার দোকান মায়ের দোয়া স্টোরের বিক্রয়কর্মী আশিক হোসেন জানান, সারা বছর ছোট মশারি কমবেশি চলে।
ছোটদের মশারি
ঢাকার গুলশান ১ নম্বরের এনডিসিসি মার্কেটে মশারি কিনতে এসেছেন গৃহিণী ফারজানা খন্দকার। তিনি বলেন, ‘আমার আট মাসের সন্তানের জন্য বাহারি মশারি কিনতে এসেছি। দিন দিন মশাবাহিত রোগ বাড়ছে। আমার সন্তান যেহেতু সারাক্ষণ শুয়েই থাকে, তাই দেখতে সুন্দর, এমন মশারি কিনতেই মার্কেটে আসা।’
ছোট শিশুদের জন্য আলাদা মশারি বেশ জরুরি। কারণ, শিশুরা একটু আগে ঘুমিয়ে পড়ে। আর তখন বড় মশারি টানিয়ে রাখা বেশ ঝামেলার। আর না টানালে মশার উৎপাতে আপনার সোনামণি আরামে ঘুমাতে পারবে না। তা ছাড়া ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়ায় শিশুদের দিনের বেলায় ঘুম পাড়ালেও মশারি টানানো জরুরি। এ ক্ষেত্রে শিশুদের জন্য ছোট মশারি ব্যবহারই সুবিধাজনক। আর এখন বাজারে শিশুদের জন্য বাহারি সব মশারিও পাওয়া যায়। এর মধ্যে কোনোটি চেইন দিয়ে তৈরি ঘরের মতো। একে স্প্রিং মশারি বলে। কোনোটি আবার লোহার দণ্ডের সঙ্গে নেট প্যাঁচানো। কোনোটি আবার ছাতার মতো খোলা যায়। কিছু আবার আছে বিছানাসহকারে তৈরি বেড সেটিং মশারি।
আপনি চাইলে মশারি রেডিমেড কিনতে পারেন আবার বানিয়েও নিতে পারেন। তবে রেডিমেডের চেয়ে বানানো মশারিই বেশি টেকসই। অবশ্য এ জন্য খরচাপাতিও একটু বেশি গুনতে হবে। সাধারণত মশারির নেট কাপড় এবং সাইজের ওপর নির্ভর করে এর দরদামের পার্থক্য। মশারির কাপড়ের মধ্যে এসি নেট এবং জিরো সেভেন বেশ ভালো মানের কাপড়।
অনলাইনে
করোনা মহামারির কারণে বাজারে না গিয়ে অনেক ক্রেতাই অনলাইনে মশারি ক্রয় করছেন। চাহিদা থাকায় বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান অনলাইনে মশারি বিক্রি করছে। ২০১৭ সাল থেকে গৃহসজ্জা পণ্যসামগ্রী বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান অর্থা অনলাইনে মশারি বিক্রি করে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি শুরুর দিকে ক্রেতাদের কাছে বহুল জনপ্রিয় ম্যাজিক মশারি বিক্রি করত। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী নিতাই সরকার জানালেন, ক্রেতাদের চাহিদার কথা চিন্তা করে ‘অর্থা এসি নেট’ ও ‘অর্থা ক্রাশ নেট’ মশারি তৈরি করেন তাঁরা। যেটি অনলাইনে বেশ সাড়া ফেলে।
নিজস্ব লোকবল দিয়ে উন্নত প্রযুক্তিতে বিভিন্ন ধরনের স্টাইলিস্ট ও শতভাগ বাতাসপ্রবাহী নিরাপদ মশারি তৈরি করে পাইকারি ও খুচরা অনলাইনে বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি। অর্থা মশারির দাম শুরু মাত্র ২৯৯ টাকা থেকে। ঘরে বসে অনলাইনের (ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট) মাধ্যমে বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যে কেউ ক্যাশ অন ডেলিভারিতে অর্ডার করতে পারবেন। নিতাই সরকার বলেন, ঢাকা শহরে ২৪ ঘণ্টায় হোম ডেলিভারি এবং ঢাকার বাইরে মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় ডেলিভারি করা হয়। ফেসবুক পেজ facebook.com/orthabd ও ওয়েবসাইট www.ortha.com.bd অর্ডার করা যাবে।
এ ছাড়া www.ajkerdeal.com, www.apnarponno.com, www.eibbuy.com, www.daraz.com.bd, https://www.othoba.com, www.aliexpress.com, www.clickbd.com সহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ছোট্ট সোনামণিদের মশারি পাওয়া যায়।
ওয়েবসাইটের পাশাপাশি বেশ কিছু ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে www.facebook.com/MoshariBazar, https://bit.ly/3D5Kv1j, www.facebook.com/NagarHaat, www.facebook.com/othobabd, https://bit.ly/2Wec5IX, https://bit.ly/3sIo39F, https://bit.ly/3z6Y0eN সহ বিভিন্ন ফেসবুক পেজে ছোটদের মশারি বিক্রি করা হয়।
নিজেই বানান মশারি
চাইলে আপনি ছোটদের জন্য নিজেই মশারি তৈরি করতে পারেন। এতে খরচ ও কষ্ট একটু বেশি হলেও অনেক দিন পর্যন্ত মশারি ভালো থাকে। ছোটদের জন্য মশারি বানাতে সবার আগে মশারির আকার বা আয়তন ঠিক করতে হবে এবং সে অনুযায়ী নকশা করে কেটে নিতে হবে। বাড়িতে যদি সেলাই মেশিন থাকে, তাহলে নিজেই বানাতে পারেন ছোট্ট সোনামণির মশারি। চাইলে দরজি দিয়ে মশারি তৈরি করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে মশারি বানাতে মজুরি লাগবে ১২০-২৫০ টাকা।
দরদাম
শিশুদের জন্য তৈরি ‘স্ট্যান্ডিং’ মশারির দাম পড়বে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। বিছানাসহকারে তৈরি বেড সেটিং মশারির দাম তুলনামূলক একটু বেশি। দেশি বেড সেটিং মশারির দাম ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা। আর বিদেশি বেড সেটিং মশারির দাম ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা। মশারির ব্র্যান্ডের মধ্যে বোনাফাইড, পেপকন, আনোয়ার টেক্সটাইল, মেহেদি টেক্সটাইল, অ্যাঞ্জেলস ইত্যাদি নির্ভরযোগ্য নাম।
কোথায় পাবেন
মৌচাক, আনারকলি, বায়তুল মোকাররম, ইসলামপুর, খদ্দর মার্কেট, গাউছিয়া, নিউমার্কেট, মিরপুর, রামপুরা, নীলক্ষেতসহ বিভিন্ন মার্কেট এবং পাড়া–মহল্লার দোকান থেকে কিনে কিংবা তৈরি করে নিতে পারেন আপনার পছন্দমতো মশারি। এ ছাড়া প্রায় সবধরনের কাপড়ের দোকানে তো আছেই, রাজধানীর প্রায় সব হাসপাতালের সামনেও রয়েছে ভ্রাম্যমাণ মশারির দোকান। কেউ ভ্যানে, কেউ ফুটপাতে, কেউ আবার হাতে নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছেন ছোটদের মশারি।