আইন অধিকার

স্ত্রীকে আটকে রাখা হয়েছে?

দীর্ঘদিনের পরিচয় তারপর প্রেম—শেষে পরিবারের অমতেই বিয়ে। ছেলের পরিবার বিয়েটি মেনে নিলেও মেয়ের পরিবার শুরু থেকেই মানেনি। নবদম্পতি এই শহরে ছোট্ট একটি নীড়ে সুখের সংসার কাটাতে লাগল। মেয়েটি সুযোগ পেলেই তার মা-বাবার মুঠোফোনে ক্ষমা চেয়ে তার মেনে নেওয়ার আকুতি জানাতে থাকে। একপর্যায়ে মেয়ের বাবা-মায়ের মন নরম হয়ে এলেও বাদ সাধে মেয়ের বড় ভাই। সে পাতে কৌশলের এক জাল। বোনের স্বামীকে ফোনে জানায়, তারা সবাই এ বিয়ে মেনে নিয়েছে। এখন তাদের বাসায় বেড়াতে যেতে চায়। নতুন দম্পতি ভাবে তাদের দুঃখ বুঝি ফুরোল। সবাই যখন মেনে নিয়েছে তখন নিজেদের স্বপ্নের মতো সংসারটি সাজিয়ে তোলা যাবে।
কথামতো মেয়ের বড় ভাই দুই দিনের জন্য বেড়াতে আসে এবং বোনকে কয়েক দিনের জন্য নিয়ে যেতে চায় তাদের বাড়ি। মেয়েটিও সরল বিশ্বাসে ভাইয়ের সঙ্গে যেতে রাজি হয়। ভাইয়ের সঙ্গে সে চলে যায় কুড়িগ্রামে। কথা ছিল, ভাই আবার এক সপ্তাহ পরেই বোনকে তার স্বামীর বাসায় দিয়ে যাবে। কিন্তু কুড়িগ্রাম যাওয়ার পর থেকেই মেয়েটির মুঠোফোন বন্ধ পেতে থাকে ছেলেটি। ভাইয়ের কাছে ফোন দিলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ফোন রেখে দেয়। ছেলেটির আর বুঝতে বাকি রইল না, তার স্ত্রীকে আটকে রেখেছে তাঁর ভাই।
ছেলেটি পাগলপ্রায় হয়ে কুড়িগ্রামে যায়। কিন্ত সেখানে তার ওপর চলে নির্যাতন। কোনো উপায় না দেখে সে ফিরে আসে। আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য ঢাকার আদালতপাড়ায় এক আইনজীবীর কাছে গেলে আইনজীবী তাকে পরামর্শ দেন স্ত্রীকে এভাবে আটক রাখলে তল্লাশি পরোয়ানা বা সার্চ ওয়ারেন্ট জারির জন্য মামলা করতে পারে সে। আইনজীবীর পরামর্শ অনুযায়ী ছেলেটি তার স্ত্রীর ভাইয়ের বিরুদ্ধে তল্লাশি পরয়োনার মামলা ঠুকে দেয়। আদালত ছেলেটির জবানবন্দি শুনে মেয়েটির ভাইয়ের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। মামলাটি এখন শুনানির অপেক্ষায়।
তল্লাশি পরোয়নার মামলা কী
কেউ যদি কোনো ব্যক্তিকে বেআইনিভাবে আটকে রাখে তবে যে বা যারা আটক করেছে বলে নিশ্চিত জানা যাবে; সে বা তাদের বিরুদ্ধে এই তল্লাশি পরোয়ানার মামলা করা যাবে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১০০ ধারায় বেআইনিভাবে আটক ব্যক্তিকে উদ্ধারের জন্য এ বিধান রয়েছে। এ মামলা করতে হয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
মামলার আরজিতে যাকে আটক রাখা হয়েছে তার পরিচয় এবং তার সঙ্গে কী সম্পর্ক, তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। আরজির সঙ্গে তথ্য-প্রমাণ দিতে হবে। যদি স্ত্রী হয়, তাহলে তাদের বিয়ের কাবিননামা আদালতে দাখিল করতে হবে। সাধারণত আদালত প্রথমেই দায়ী ব্যক্তিকে সমন দিয়ে কারণ দর্শাতে বলে।
যদি দায়ী ব্যক্তি হাজির না হয় কিংবা তার বক্তব্য মিথ্যা মনে হয়, তাহলে তল্লাশি পরোয়ানা জারি করে আটক ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়ে থাকে। এই নির্দেশ দেওয়া হয়, যে এলাকায় ওই ব্যক্তিকে আটক রাখা হয়েছে, সে এলাকার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি)। থানার ওসি আইনের বিধান মেনে পুলিশের মাধ্যমে আটক ব্যক্তির এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে আদালতে হাজির করতে পারেন। তবে যদি কোনো আটক ব্যক্তি নিজে আসতে অস্বীকার করে তাহলে তাকে জোর করে আনা যাবে না। এ ধারায় কোনো মিথ্যা অভিযোগ এনে কেউ তল্লাশি পরোয়ানার মামলা করলে তার জন্য শাস্তি অবধারিত।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট