
প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যসমস্যা নিয়ে পাঠকের প্রশ্নের ভিত্তিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের জবাব ছাপা হবে। আজকের বিষয় অনিদ্রা। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ঝুনু শামসুন্নাহার
১. অনেক ক্লান্তির পরও রাতে বিছানায় গেলে ঘুম আসে না? অনেক রাত পর্যন্ত এপাশ-ওপাশ করতে হয়?
উত্তর: ইনসমনিয়া বা নির্ঘুমতার সঙ্গে শারীরিক বা মানসিক কোনো সমস্যা জড়িত নেই। তবে মানসিক জটিলতার কারণে ঘুমের ব্যাঘাত বা স্লিপ ডিসঅর্ডার হতে পারে। বিষণ্নতা ও উদ্বেগজনিত মানসিক রোগে এটা বেশি দেখা যায়। এমন সমস্যায় খুব ভোরে বা শেষ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় এবং আর ঘুম আসে না। আর উদ্বেগজনিত সমস্যায় রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যেতে পারে। দুঃস্বপ্ন দেখেও জেগে উঠতে পারেন। মানসিক সমস্যার চিকিৎসায় সমাধান পাবেন। অন্য কিছু অভ্যাসের চর্চা করেও উপকার পেতে পারেন।
২. সারা রাত ঘুমানোর পরও সকালে মনে হয়, ঘুম ভালো হয়নি?
উত্তর: উদ্বেগজনিত রোগে রাতে দুঃস্বপ্ন বা উদ্বেগের কারণে ঘুমের গুণগত অবনতি ঘটে। স্বাভাবিক ঘুমের একটা চক্র আছে। তা ওলটপালট হয়ে গেলে এমন হতে পারে। এমনকি শারীরিক কোনো সমস্যায়, যেমন স্লিপ অ্যাপনিয়া (যা স্থূলকায় ব্যক্তিদের হয়ে থাকে), শরীরের কোনো ব্যথা-বেদনা বা শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এ ক্ষেত্রে অন্তর্গত কারণটি খুঁজে বের করে তার চিকিৎসা নিতে হবে। প্রয়োজনে দিনের ঘুম একটু কমিয়ে বা বন্ধ করে রাতে গভীর ঘুমের চেষ্টা করতে হবে। বিকেলের দিকে একটু ব্যায়াম বা ঘুমের আগে বিশেষ শিথিলায়নেও সুফল মেলে।
৩. অনিদ্রার চিকিৎসা কী?
উত্তর: বেশির ভাগ ঘুমের ওষুধই আসক্তি তৈরি করে এবং দিনের পর দিন এগুলো সেবন করা ভালো নয়। প্রয়োজনে ওষুধ সাময়িকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শমতো সেবন করতে হবে। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও জেগে ওঠা, শোবার ঘরটিকে শুধু ঘুমানোর জন্যই ব্যবহার করা, শোবার আগে টেলিভিশন, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ডিজিটাল গেমিং না করা এবং সন্ধ্যার পর বেশি চা-কফি পরিহার করা উচিত। ঘুমের আগে হালকা গরম পানিতে গোসল বা হাত-পা ধুয়ে নিলে ঘুম আসে। ঘুম না এলে বিছানা ছেড়ে উঠে একটু হেঁটে এসে বা বই পড়ে আবার ঘুম এলে শুয়ে পড়তে হবে।
৪. ঘুমের ওষুধে আসক্তি হয়ে গেলে কী করণীয়?
উত্তর: স্লিপ হাইজিন বা ঘুমের পরিবেশকে জোরদার করে ওষুধের মাত্রা ধীরে ধীরে কমানো বা পরিবর্তন করা যাবে।
৫. রাত জেগে কাজ করা কি ভালো?
উত্তর: অনেক রাত জেগে টিভি দেখা বা দেরি করে ঘুমানোর সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, হৃদ্রোগের সম্পর্ক পাওয়া গেছে। তা ছাড়া এতে ক্লান্তি, মনোযোগের অভাব, মাথাব্যথা ইত্যাদি হতে পারে। রাত না জেগে বরং সকালে আগে ঘুম থেকে উঠে কাজ করা বা পড়াশোনা করাই ভালো।
অনুলিখন: তানজিনা হোসেন
আগামী মাসের বিষয়: ভগ্নস্বাস্থ্য
২২ অক্টোবরের মধ্যে আপনার প্রশ্ন পাঠান এই ঠিকানায়: ভালো থাকুন
প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ, কারওয়ান বাজার ঢাকা-১২১৫
ই-মেইল:bhalothakun@prothom-alo.info