
হাঁটলেই যদি ক্যালরি পোড়ে তাহলে সকাল-সন্ধ্যায় নিয়মিত হেঁটেও কেন অনেকের ওজন কমে না? অনেকে তো বছরের পর বছর ধরে হেঁটেও ওজন কমাতে পারেন না! কেউ কেউ হয়তো বলবেন ওজন কমানোই তো হাঁটাহাঁটির একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। কথা সত্যি। ওজন কমানো ছাড়াও নিয়মিত হাঁটার অন্য অনেক স্বাস্থ্যগত উপকারিতা আছে। কিন্তু যাঁরা প্রধানত ওজন কমানোর জন্যই হাঁটছেন তাঁদের বেলা? কোন বিষয়গুলোতে সচেতন থাকলে হেঁটে ওজন কমানো সম্ভব তা জেনে নেওয়া জরুরি। হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এমন ছয়টি পরামর্শ দিয়েছে।
কতক্ষণ হাঁটবেন
হিসাব কষলে দেখা যাবে প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষেরা স্বাভাবিক দ্রুতগতিতে হেঁটে প্রতি মিনিটে চার-পাঁচ ক্যালরি পোড়াতে সক্ষম হন। অর্থাৎ ১৫ মিনিট হাঁটলে ৭০ ক্যালরির মতো পোড়ানো সম্ভব। কিন্তু তা তো এক স্লাইস রুটির চেয়েও কম ক্যালরি। সত্যি সত্যিই হেঁটে ওজন কমাতে হলে অন্তত ৪৫ থেকে ৬০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা প্রয়োজন।
কত দ্রুত হাঁটবেন
হিসাবটা সোজা, আপনি যত দ্রুতগতিতে হাঁটবেন প্রতি মিনিটে আপনার তত বেশি ক্যালরি পুড়বে। আলসেমি করে হাঁটলে প্রতি মিনিটে হয়তো ৩ ক্যালরির মতো পুড়বে। আর একটু বেশি গতিতে হাঁটলেই এর প্রায় দ্বিগুণ ক্যালরি খরচ হবে। আর আপনি যদি দৌড়ানো বা জগিং করা শুরু করেন, তাহলে ক্যালরি পোড়ানো দ্রুত হাঁটার চেয়েও দ্বিগুণ বাড়বে। আর হাঁটা বাদ দিয়ে পুরোপুরি দৌড়াতে শুরু করলে ক্যালরি পোড়ানোর হার আরও বাড়তে থাকবে।
হেঁটে এসে কী খাবেন
অনেক প্রাতভ্রমণকারীরই অভ্যাস হেঁটে এসে নাশতা করা। অনেককেই দেখা যায় সকালে হাঁটাহাঁটির পর চা-সিঙ্গারা-সমুচাজাতীয় নাশতা করতে। কিন্তু এতে আপনার হাঁটাহাঁটির পুরো চেষ্টাটাই বৃথা হয়ে যেতে পারে। ধরুন আপনি দ্রুতগতিতে ৪৫ মিনিট হাঁটলেন, তাতে আপনি শরীর থেকে ২০০ ক্যালরির মতো পোড়াতে পারলেন। এবার আপনি একটা সমুচা এবং এক কাপ চা খেলেন। এতে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ বা তার চেয়েও বেশি ক্যালরি যোগ হবে। এর চেয়ে হাঁটা শেষে একটু ফল খান কিংবা একটু বিশ্রাম নিয়ে সরাসরি নিয়মিত সকালের নাশতা খেতে বসুন। এইটুকু হাঁটার কারণে নিজেকে বাড়তি খাবার দিয়ে যত্ন-আত্তি করলে তো আর ওজন কমবে না!
হাঁটার সঙ্গে ব্যায়ামও
আমাদের শরীর খুব অল্প দিনেই আমাদের অভ্যাসগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেয়। ফলে হাঁটাহাঁটির অভ্যাসটা আয়ত্ত হয়ে গেলে শরীরও এতে মানিয়ে নেয়। কিন্তু এটা আপনার জন্য ভালো না! কারণ হাঁটার একটা নির্দিষ্ট ধরন দাঁড়িয়ে গেলে দিন দিন একই দূরত্বে হেঁটেও আপনার ক্যালরি পোড়ানো কমে যেতে থাকবে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিছুদিন পর পর শরীরকে নতুন কিছু ব্যায়াম করতে শুরু করুন। প্রথমে কিছুদিন হাঁটার সঙ্গে একটু করে দৌড়ান বা একটু করে যোগব্যায়াম করুন। এগুলোতে একঘেয়ে হয়ে গেলে কিছুদিন হাঁটার পাশাপাশি ভারোত্তোলন করুন বা একটু টেনিস বা ব্যাডমিন্টন খেলুন। এভাবে আপনার ওজন যেমন কমবে, তেমনি হাঁটাহাঁটিতেও একঘেয়েমি আসবে না।
খেয়াল রাখুন খাবারে
আমাদের চারপাশে এমন অনেকেই আছেন, যাঁরা বছরের পর বছর ধরে মরিয়া হয়ে ব্যায়াম করেন। কিন্তু কোমরের মাপ একটুও কমে না! কারণটা খুবই স্পষ্ট। তাঁরা ব্যায়ামের পর প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খান। হিসাবে করে দেখুন এক ঘণ্টা হাঁটলে ২৫০ ক্যালরির মতো পুড়বে। খাবারের হিসাবে একটা ডিম আর দুই স্লাইস রুটি খেলেই তা পূরণ হয়ে যাবে। ওজন কমাতে হলে যে পরিমাণ খাবেন তার চেয়ে বেশি ক্যালরি পোড়াতে হবে।
হাঁটাই যথেষ্ট নয়
নিয়ম মেনে কিছুদিন হাঁটার পরও যদি আপনার ওজন না কমে তাহলে অবশ্যই আপনার শরীরচর্চার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই হাঁটাহাঁটির পাশাপাশি খাবারদাবারের পুষ্টিমান নিয়ে সজাগ হোন। কী খাবেন আর কী কী খাবেন না, সে বিষয়ে ভাবুন। এ ছাড়া এমন তো হতেই পারে যে, আপনার শারীরিক সমস্যাগুলোর বিষয়ে আপনি পুরোপুরি সজাগ নন। একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসক হয়তো আপনাকে সমস্যাটা চিহ্নিত করতে সহায়তা করতে পারেন।